পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু, রাজশাহী থেকে : বালিচরে চাপাপড়ে থাকা মরা পদ্মায় এখন ভর যৌবন। চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। বালিচর গুলো এখন পানির নীচে। এমনকি পদ্মার মাঝ বরাবর বিশাল বালিচর যা মধ্যচর নামে পরিচিত এবার ডুবেছে। অথচ গত কয়েক বছর এ চর ডোবেনি। ফলে এখন যে দিকে চোখ যাবে শুধু পানি আর পানি। প্রবল ঘূর্ণিস্রোত নিয়ে দুরন্ত বেগে ছুটে চলেছে এক কালের প্রমত্ত পদ্মা। প্রতিদিন পানি বাড়ছে। আর হঠাৎ করে পানি বাড়ার হার কদিন হলো বেড়েছে। বরাবরের মত ওপারের বন্যার চাপ ঠেকাতে ফারাক্কার ১০৯টি পাষান গেট খুলে দেয়া হচ্ছে। এবার জানান দিয়ে ঠেলে দেয়া হচ্ছে পানি। পদ্মার পানি বাড়ার গতি দেখে পদ্মা পাড়ের মানুষ শংকিত। মাস দুয়েক ধরে বর্ষণ আর অন্যান্য নদীতে বান ডাকায় এমনিতে পদ্মা ভরে গিয়েছিল। দুকুল ছাপিয়ে আর ভেঙ্গে ছুটে চলছিল। এমনটি হয় ফি বছর। তারপরও বছর দশক ধরে পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করেনি। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। যে হারে পানি বাড়ছে তাতে বিপদসীমা অতিক্রম করবে যে কোন মুহূর্তে। রাজশাহীর কাছে পদ্মার বিপদসীমা হলো ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর গতকাল বুধবার ছিল ১৮ দশমিক আট মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এমনটি চলতে থাকলে দিন দুয়েকের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করবে। আরো বাড়লে নগরীতে বন্যা দেখা দেবার আশংকা রয়েছে। গতকাল পূর্বে সাত বাড়িয়া থেকে পশ্চিমে বুলনপুর পর্যন্ত পনের কিলোমিটার শহর রক্ষা বাধ পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, বাঁধের নিচের ঘর বাড়িগুলোয় পানি উঠেছে। বাজে কাজলা রামচন্দ্রপুর, পঞ্চবটি এলাকার ঘর বাড়িতে পানি। অনেকে বাধের উল্টো পাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরের চালা ও মালামাল বাঁচাতে চৌকির উপর বসবাস করছে। নদীর দক্ষিণ চরের বাসিন্দারা বেশ ক’বছর ধরে ভাঙনের মুখে পড়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। আগে যে চরের গ্রামে তিন চার হাজার পরিবারের বসবাস ছিল এখন তিন চারশো মানুষ নেই। অনেকে পদ্মার মাঝ বরাবর জেগে ওঠা মধ্যচরের ঘর বসতি গড়েছিলেন। প্রশাসনও এসব মানুষকে সহায়তা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এবার সেই মধ্যচরও ডুবেছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে গরু ছাগল নিয়ে পদ্মার উত্তর তীরে বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে। এমন বেশ কিছু সব হারানো পরিবার দেখা গেল সাতবাড়িয়া এলাকায়। বানের পানির সাথে রাসেল ভাইপার আতংক তাদের তাড়া করে ফিরছে। নদীর ভাঙ্গনে সব হারানো মধ্যচরে আশ্রয় নিয়ে যে কাচা ঘর বানিয়েছিল তা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে। নগরীর মানুষও আতংকিত হয়ে পড়েছে। কারন পদ্মার বুকের চেয়ে নগরীর তলদেশ বেশ নিচু। বালি জমতে জমতে এমনটি হয়েছে। বুলনপুর থেকে সাত বাড়িয়া পর্যন্ত বাধের অনেকাংশের নদী তীর ব্লক দিয়ে বাধানো হলেও নদী তীরের মানুষ স্বস্তি পাচ্ছেনা। কেননা গত বছর এবারের মত পানির চাপ না থাকলেও পুলিশ লাইনের কাছে বাধের বিশাল একটা অংশ হঠাৎ করে ধ্বসে যায়। এমনিতে আতংক তাড়া করে ফিরছে। এরমধ্যে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে ভারতের বিহারের বন্যা ঠেকাতে ফারাক্কার সবকটি খুলে দেবার জন্য সে দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে। অন্য সময় নির্দেশ নয় ইচ্ছেমত ছাড়ে। গঙ্গা থেকে পদ্মার শুরু শিবগঞ্জের পাংখা থেকে গোদাগাড়ী, পবার চরাঞ্চল, রাজশাহী নগর, চারঘাট, বাঘা, পাবনার লালপুর হয়ে ঈশ্বরদি হার্ডিঞ্জ পর্যন্ত। দু’পারের মানুষকে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত করে চলেছে। শুস্ক মওসুমে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারা আর বন্যার সময় বিপুল পরিমাণ পানি এপারে ঠেলে দিয়ে ডুবিয়ে মারার নির্মম নিষ্ঠুর খেলা চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের পানি জল্লাদরা। অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে তাদের পানি আগ্রাসি নীতি আরো আঁটোসাটো করেছে। যার ফলে ভাটির দেশ বাংলাদেশে নেমে এসেছে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়।
গঙ্গায় পানি নিয়ে যে মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে তাতে খোদ ভারতের বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছে। যে সব প্রকল্প নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে ভাগিরথি ও অলোকনন্দা নদী পথের পানি শুকিয়ে যাবে। ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, ভারতে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পানি সরবরাহের কারণে গঙ্গা হারিয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের বিশেষজ্ঞ শ্রী অশোক কুমার বসু তার গঙ্গা পথের ইতিকথা বইতে উল্লেখ করেছেন উত্তর কাশী থেকে ফারাক্কা পর্যন্ত পানি বিদ্যুতের যোজনা সেচ বিভাগ সবাই মিলে গঙ্গা ও তার উপনদীগুলো নিয়ে এত টানাটানি করছে যে, ফারাক্কার উজানেই যথেষ্ট পরিমাণ পানি কমেছে। বাংলাদেশের পানি বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা বছরের পর বছর ধরে ভারতের আন্তঃনদী প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু পানি জল্লাদরা এসব বিশেষজ্ঞদের অভিমত পাত্তা দেয়নি। বরং আরো চ-নীতি গ্রহণ করেছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার নরেন্দ্র মোদীর সাথে দেখা করে ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরে ফারাক্কা বাঁধকে পুরোপুরি সরিয়ে দেবার প্রস্তাব দিয়েছেন। এমন বাস্তবসম্মত প্রস্তাবে বাংলাদেশের ভুক্তভোগী মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছে। যদিও ফারাক্কা নিয়ে ভারতে রাজনীতির কম নয়। এবার ওপারের বন্যার চাপ কমাতে ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দেবার নির্দেশ দেয়া হলেও বছর দুয়েক আগে চিত্র ছিল ভিন্ন। ফারাক্কার ১০৯টি গেটের মধ্যে বাধের দক্ষিন অংশের ১৩ নম্বর গেটের পানি প্রবেশ মুখে আট নয় ইঞ্চির মত ফাটল সৃষ্টি হয়। পানির চাপ ছিল প্রবল। অন্য তিনটি গেট ১২,১৯ ও ৭৮ নম্বর গেটে সমস্যা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হঠাৎ করে সবকটি গেট খুলে এপারে এক সাথে পানি ঠেলে দেয়ায় হঠাৎ করে বন্যা দেখা দেয় এপারে। পশ্চিমবঙ্গে শোরগোল ওঠে বাংলাদেশে সব পানি গেল বলে দিল্লীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক খেলায় মেতে ওঠে প্রতিপক্ষ। তিনদিন গেট খুলে রেখে মেরামতের পর ফের বন্ধ হয়ে যায় ফারাক্কার পাষান। তখন এমন হৈ চৈ ছিল যে উজানে আরেকটি ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের দাবি ওঠে। অথচ এই ফারাক্কা শুধু বাংলাদেশের নয় ভারতের জন্য মরণফাঁদ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ভারত যদি তাদের পানি আগ্রাসী নীতি পরিত্যাগ না করে তাহলে পানির অভাবে এদশে বড় ধরনের সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হবে যা পার্শ্ববর্তী দেশকে আক্রান্ত করবে। এমনটি বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।