পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ১৮ আগস্ট, সকাল ৬টা। স্ট্যানস্টেড থেকে নেপলস যাবার জন্য ইজিজেট ফ্লাইটে আরোহণ করেন তিন ভাই-বোন মরিয়ম ধারাস (১৯), সাকিনা ধারাস (২৪) ও আলি ধারাস (২১)। তারা সবাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মুসলিম নাগরিক। একটু পরই একজন মহিলা কেবিন ক্রু তাদের দিকে এগিয়ে আসেন ও কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তাদেরকে তার সাথে নেমে যেতে বলেন।
সাকিনা বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করি যে আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? কেবিন ক্রু আমাদের কোনো গুরুত্বই দেননি, কোনো জবাবও দেননি। আমাদের বিমানের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে বলা হলো। টারমাকে নেমে দেখলাম সেখানে সশস্ত্র পুলিশ অফিসাররা দাঁড়িয়ে আছেন। বিমানে ওঠার কিছুক্ষণ পর এক যাত্রী দম্পতি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সমর্থক বলে তাদের বিরুদ্ধে বিমান ক্রুদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেন। তারপরই তিন ভাই-বোনকে বিমান থেকে নামিয়ে টারমাকে নেয়া হয়। তারপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন সশস্ত্র পুলিশ অফিসাররা।
বিমানের সকল যাত্রীর চোখের সামনেই উত্তর-পশ্চিম লন্ডনবাসী ঐ তিন যাত্রীকে অফিসাররা এক ঘণ্টা হেনস্থা করেন। এক অফিসার প্রথমেই তাদের জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কি ইংরেজি বলতে পারেন?
মরিয়ম এ বছরের শেষদিকে লন্ডনের কিংস কলেজে ¯œাতক শ্রেণিতে পড়বেন। তিনি সাথে সাথে জানান যে তাদের তিন ভাইবোনের জন্ম হয়েছে লন্ডনে এবং তারা এখানেই বাস করেন। তাদের মায়ের জন্ম ও বসবাসও ছিল লন্ডনে। তারা ইংরেজি ছাড়া আর কোনো ভাষা জানেন না।
পুলিশ অফিসাররা জানতে চান যে তাদের ফোনে আরবি টেক্সট বা তাদের কাছে কুরআন (শরিফ) আছে কিনা।
তারা তিন ভাই-বোন কেউ আরবি বলতে, লিখতে বা পড়তে জানেন না।
সাকিনা বলেন, পুলিশ অফিসারদের রূঢ় আচরণে মরিয়ম প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থায় পৌঁছেছিল। তিনি বলেন, পথমেই যা লক্ষণীয় তা হলো পুলিশ অফিসাররা জানতে চান যে আমরা ইংরেজি জানি কিনা। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এটাকে হেনস্থাকর বলে মনে হয়েছে, কারণ আমাদেরকে অন্য জাতি-গোষ্ঠীর লোক মনে করেছিল তারা। কিন্তু আমি ইংরেজি ছাড়া আর কোনো ভাষা জানি না। আমাদের বলা হয় যে এক দম্পতি অভিযোগ করেছে যে আমরা আইএসবিষয়ক কিছু ম্যাটার পড়ছিলাম। আমরা মানে মরিয়ম ও আমি দু’বোন। আমরা দু’জনই হিজাব পরা ছিলাম। সে জন্যই তারা এ কাজ করে।
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। কি হচ্ছে এসব? আমরা তো ওসব নই। আমরা একেবারেই হতবিহ্বল। আমাদের জিজ্ঞেস করা হয় যে তোমাদের টেলিফোনে আরবি টেক্সট আছে কিনা। আমরা কুরআন (শরিফ) পড়তে পারি কিনা। কি আশ্চর্য! আমরা আরবি বলতে পারি না, আরবি জানি না, আমরা আরবও নই।
যে দু’যাত্রী আইএস সমর্থক বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তাদের দাবি যে ঐ দু’ নারীর একজন ফোনে কথা বলার সময় আল্লাহর প্রশংসা করেন।
ঘটনা হচ্ছে যে মরিয়ম বিমানে ওঠার পর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাদের বাবার কাছে মেসেজ পাঠাতে ফোন ব্যবহার করেন। তাদের বাবা একজন ফার্মাসিস্ট, তিনি উগান্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। মরিয়ম তার সাথে ব্রিটিশ লেবার নেতা জেরেমি করবিনের ব্যাপারেও আলাপ করেন।
বিমান থেকে নামানোর পর সাকিনাকে মরিয়ম ও আলির কাছ থেকে আলাদা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সাকিনার পাসপোর্টে ইরাক সফরের সিল দেয়া ছিল। আইএসের দ্বারা নির্যাতিতদের জন্য তহবিল তুলতে তিনি ও আলি ইরাকে আয়োজনকৃত একটি হাঁটা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
অফিসাররা মরিয়মের টুইটার পোস্টগুলো দেখতে চান। তিনি বলেন, সেখানে কিছুই ছিল না। আমাদের সাথে অপরাধীর মতো আচরণ করা হয়েছে। ঐ দম্পতি মিথ্যা বলেছিলেন। তাদের কিছুই বলা হয়নি। আমাদের জন্য এটা অপমানকর ও দুঃখজনক আচরণ। তারা সকল বিমান যাত্রীর সামনে আমাদের কলংকিত করেছে। এটা আসলেই মানহানিকর।
জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের বিমানে ফিরতে দেয়া হয় এবং এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। মরিয়ম বলেন, এটা ছিল অপমানিত হয়ে বিমানে ফিরে আসা, এটা ছিল বেদনাদায়ক।
সাকিনাকে অফিসাররা হুশিয়ার করে দেন তারা ইটালিতে থাকার সময় তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া হবে ও সব তথ্য পরীক্ষা করে দেখা হবে। যদি কিছু পাওয়া যায় তাহলে ফেরার সময় অফিসাররা তাদের জন্য অপেক্ষা করবেন।
মরিয়ম বলেন, এ ছিল এক উদ্ভট ব্যাপার। আমরা যদি কোনো হুমকি না হই, আমাদের যদি আবার বিমানে উঠতেই দেয়া হলো, আমরা সবাই একমত হলাম যে অভিযোগটি মিথ্যা ছিল, তাহলে এ হুমকি দেয়া কেন? তারা আরো বলে, আমাদের ব্যাপারে যদি কিছু পাওয়া যায় তাহলে তারা আমাদের ফেরার বিমান অবতরণের অপেক্ষায় থাকবে। এটা কি ধরনের হুমকি?
গার্ডিয়ানের সাথে কথা বলার সময় মরিয়ম বলেন, এটা সুস্পষ্ট যে তিনি ও তার বোন বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। কারণ, তারা দু’জনই এ সময় হিজাব পরিহিত ছিলেন। মরিয়মের বড় বোন সাকিনা লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট।
সাকিনা বলেন, আমার অধিকার কি? আমরা সন্দেহের বিষয় না হওয়ার কারণে ফের আমাদের বিমানে উঠতে দেয়া হয়। তাহলে অভিযোগকারীরা মিথ্যা কথা বলেছে। এক্ষেত্রে পুলিশের সময় নষ্ট, মিথ্যা বলা, মিথ্যা অভিযোগ করা এবং বর্ণবাদী মনোভাবের প্রকাশ ঘটানোর জন্য ঐ যাত্রীদের কেন বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হলো না?
সাকিনা বলেন, আমরা চাই তারা ক্ষমা প্রার্থনা করুন। যা ঘটেছে তা অন্যায়। এ ধরনের হেনস্থা করা উচিত নয়। আমি চাই না আর কারো ক্ষেত্রে এ রকম ঘটুক।
ইজিজেট এ জন্য কোনো অসুবিধা হয়ে থাকলে তার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। তবে বলেছে, নিরাপত্তার বিষয় হলে তো তদন্ত করে দেখতেই হয়।
তবে এসেক্স পুলিশ এ জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। তারা বলেছে, যে দম্পতির অভিযোগের ভিত্তিতে এ ঘটনা ঘটেছে তাদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিষয়।
ব্রিটিশ পরিবারটি নেপলসে বেড়াতে গিয়েছিল। ধ্রুপদি সভ্যতার ব্যাপারে আগ্রহ থাকার কারণে তারা ছুটি কাটাতে পম্পেইকে বেছে নিয়েছিলেন।
তারা তিনজন ২০ আগস্ট লন্ডন ফেরেন। বিমানবন্দরে কোনো পুলিশ অফিসার তাদের অপেক্ষায় ছিলেন না। সূত্র দি গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।