পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সুন্দরবনে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এই প্রকল্পকে দেশবিরোধী ও গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে দেশের অস্তিত্ব ও স্বার্থের বিনিময়ে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর মুনাফা এবং অনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টা রোধ করতে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানান ২০ দলীয় জোট নেত্রী। গতকাল বুধবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন এই আহ্বান জানান।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, সুন্দবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন একটি দেশবিরোধী ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। জনমত উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী এই সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর জবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে এই স্বৈরাচারী সরকার। আমরা মনে করি বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জায়গারও অনেক বিকল্প আছে। কিন্তু সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। কাজেই সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার হঠকারী, অযৌক্তিক, অলাভজনক রামপালের সকল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। দেড় মাস আগে ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টসান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশীসহ ২২ জন নিহত হওয়ার পর ৩ জুলাই সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ত্রিশ মিনিট স্থায়ী বক্তব্যে রামপালের বিদ্যুৎ প্রকল্পের নানা ক্ষতিকারক দিক বিশেষ করে সুন্দরবনে জীব-বৈচিত্র্যের যে প্রভূত ক্ষতি হবে, তার একটি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়া। পুরো বক্তব্যে তিনি অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কথা না বলা কোনো প্রশ্নোত্তরও গ্রহণ করেননি।
গণমাধ্যমের কাছে আহ্বান রেখে খালেদা জিয়া বলেন, এই বিষয়টি আমাদের সকলের। এটা শুধু বিএনপি, আওয়ামী লীগ অথবা অন্য কারো বিষয় নয়, এটা সারাদেশের বিষয়। সেজন্য আজকে কোনো প্রশ্ন না করে রামপালের বিষয়টি আপনারা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরুন। এটা আমার অনুরোধ।
সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনিবার্য, অশুভ ও মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়ার সকল প্রমাণ উপস্থাপনের পরও সরকার অবস্থান ‘অনড়’ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, এ থেকে বোঝা যায়, সরকার জনমত কিংবা দেশের স্বার্থের পরোয়া করে না। যে প্রকল্প দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাকৃতিক বেষ্টনী ধ্বংস করবে, জীব-বৈচিত্র্যের বিলোপ ঘটাবে, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংসের কারণ হবে, পরিবেশ ও পানি দূষিত করবে, আশপাশের কৃষি জমির উর্বরতাশক্তি ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করবে এবং যে প্রকল্প অলাভজনক তা বাস্তবায়নে সরকারের যুক্তিহীন জেদ ও দ্রুত শুধু সন্দেহজনক নয়, দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
তিনি বলেন, ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের শিকার করার চক্রান্ত সফল হতে দেয়া যায় না, দেয়া উচিত নয়। দেশের অস্তিত্ব ও স্বার্থের বিনিময়ে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর মুনাফা এবং অনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টা রোধ করা সময়ের দাবি বলে আমরা মনে করি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, রামপাল কায়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ইউনেস্কো ওয়ার্লড হেরিটেজ কর্তৃপক্ষ, রামসার কনভেনশনের সচিবালয় এমনকি বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের আপত্তি অগ্রাহ্য করে সরকার এই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে তাদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্রায় ৮ হাজার পরিবারকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে। কেবল তাই নয়, ফসলি জমি ও মাছের ঘের ভরাট করা হয়েছে। উচ্ছেদকৃত কৃষিজীবীদের সাথে সুন্দরবনে কাঠ, গোলপাতা, মধু সংগ্রহকারী, আশপাশের নদী ও খালের মাছ শিকার করে যে হাজার হাজার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত, তারাও বেকার ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।
ভারতের সাথে যৌথভাবে যে কোম্পানি রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কাজ করছে তার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) কোম্পানি সেদেশের মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুর প্রকল্পটি জেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তাব দিয়েছিল, ভারত সরকার তা বাতিল করেছে।
নরসিংহপুর ও রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভূমির পরিমাণ, জনসংখ্যার ঘনত্ব, কৃষি জমির ফসল উৎপাদনের পরিমাণসহ নানা বিষয়ে তুলনামূলক একটি পরিসংখ্যানগত চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ভারতের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আইনে বাধা আছে। অথচ সেই দেশেরই একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তাদের নিজের দেশে যা করতে পারে না, শুধুমাত্র ব্যসায়িক স্বার্থে তা বাংলাদেশে করেছে। জনগণের প্রতি দায়িত্ব দেশের স্বার্থের প্রতি উদাসীন বাংলাদেশ সরকার তার অনুমতি দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন দাবি করেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি একটি অলাভজনক প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতীয় কোম্পানি ১৫% বিনিয়োগ করে লাভের অর্ধেক অর্থ নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, সুন্দবনের মতো প্রাকৃতিক বর্ম ধ্বংস করে দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অরক্ষিত না করে প্রকৃতিবান্ধব ও সাশ্রয়ী উপায়ে জ্বালানির প্রয়োজন মেটানো উচিত বলে আমরা মনে করি। গোটা বিশ্ব যখন আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য বিপন্ন নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন তখন জেনেশুনে দেশ ও দেশের কোটি কোটি জনগণকে নিশ্চিত বিপদের দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
খালেদা জিয়া বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সুন্দরবনের এত কাছে পশুর নদীর তীরে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকায় মানুষজনসহ জীব- বৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং প্রকল্পের কঠিন বর্জ্যরে তেজষ্ক্রিয়তা এবং কয়লা পরিবহনের যেসব নেতিবাচক দিক রয়েছে, তা তুলে ধরেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিদিনই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো মানবতাবাদী ও পরিবেশবাদী সংগঠন এই জনস্বার্থ ও পরিবেশ বিপন্নকারী প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশেও সচেতন জনগণ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু সরকার শুধু অনমনীয়ই, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রামপালের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করে চলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম খান, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।