পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : বিকাল চারটা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শনিরআখড়া আন্ডারপাসের ওপরে টং দোকান তৈরির কাজ করছেন দু’জন। মহাসড়ক দখল করে দোকান তৈরির কাজ করছেন কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে একজন বললেন, দোকানটা এখানেই (রাস্তার ওপর) বসবে। অন্যস্থানে তৈরি করে রাস্তার ওপর আনতে গেলে ঝামেলা। ওই ব্যক্তি জানান, কয়েকদিন আগে ৮ লেনের উদ্বোধন উপলক্ষে দোকানটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল। সেটি আবার নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। যে স্থানে দোকানটি তৈরি করা হচ্ছে তার কয়েক গজ দূরেই পুলিশ বক্স। ডিউটিরত একজন কনস্টেবলের সেদিক নজর নেই। মালবাহী পিকাপভ্যান দেখলেই ছুটে গিয়ে সেটাকে থামানোর সংকেত দিচ্ছেন তিনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর ৮ লেন ধরে সামনের দিকে এগুতে আরও বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা গেল লেন দখলের চিত্র। রায়েরবাগের কাছে মহাসড়কের পূর্ব দিকে একটি গ্যারেজকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি গাড়ি রাখা লেনের ওপরে। এর মধ্যে লেন দখল করে রাখা একটি গাড়ির মেরামতের কাজ চলছে। একজন জানালেন, কয়েকদিন ধরে ইঞ্জিন মেরামতের কাজ চলছে। একই স্থানে মহাসড়কের পশ্চিম দিকে লেনের ওপরে সারিবদ্ধভাবে অনেকগুলো কাভার্ডভ্যান দাঁড়িয়ে রাতে রাজধানীতে প্রবেশের অপেক্ষায়। নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে মহানগর পেট্রোল পাম্পের কাছে মসজিদে কোবার কাছেও দেখা গেল লেন দখল করে গাড়ি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের প্রথম ৮ লেনের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মহাসড়কের দু’পাশ থেকে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কোনো কোনো স্থানে সেগুলো আবার বসানো হয়েছে। কোথাও বসানোর কাজ চলছে। এভাবেই দখল হয়ে যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৮ লেনের সড়ক। ১৩২ কোটি টাকার মহাসড়কের কোনো কোনো স্থানে এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে একেবারে বাঁ দিকের লেন। দিন যত যাচ্ছে ততই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে লেনগুলো। অথচ গত ১৩ আগস্ট ৮ লেনের এই মহাসড়কটি উদ্বোধনের আগে ছিল একেবারে দখলমুক্ত। ৮ লেনের বাইরের দোকানপাটগুলোও উচ্ছেদ করা হয়েছিল।
২০১১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীতকরণে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর ৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্বের আট লেনের এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। এটি একদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন এবং অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে। মহাসড়কটি রাজধানীর সাথে দেশের ১৮টি জেলার যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে আট লেনের মহাসড়ক এই প্রথম। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা সিলেট মহাসড়কে প্রবেশ-বহির্গমনের প্রধান করিডোর। পদ্মা সেতুর লিংক রোড চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে আসা যানবাহনগুলো এই আট লেন ব্যবহার করে খুব সহজে ও অল্প সময়ে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে। সে কারণেই ৮ লেনের মহাসড়কটি দখল ও জঞ্জালমুক্ত রাখা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, যানজট নিরসনের জন্যই মূলত ৮ লেনের মহাসড়ক তৈরি করা হয়েছে। সেই মহাসড়ককে যদি দখলমুক্ত না রাখা যায় তাহলে তো কোনো লাভ হলো না। এর সুফল থেকে আমরা বঞ্চিত হব।
গতকাল যাত্রাবাড়ী থেকে সরেজমিনে কাঁচপুর পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কের চেহারা দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। ৮ লেনের মহাসড়ক ক্রমে ৭ লেনে রূপ নিচ্ছে। যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কাছেই কাজলা নামক স্থানে মহাসড়কের পূর্ব দিকের এক লেন দখল করে গাড়ি পার্কিং করা হয় নিয়মিত। মধ্যরাতে গাড়ির সংখ্যা বাড়লে পূর্ব দিকের চার লেনের মধ্যে দুই লেনই দখল হয়ে যায়। শনিরআখড়া আন্ডারপাসের উপরে মহাসড়ক অনেকটাই সরু। পুরো ৮ লেন নেই এখানে। এখানে মহাসড়কের দু’দিকেই গড়ে তোলা হচ্ছে দোকানপাট। পশ্চিম দিকের লেন দখল করে রাখা আছে টেম্পো ও সিএনজি অটোরিকশা। কাছেই দনিয়া কলেজের সামনে আছে প্রাইভেট কার স্ট্যান্ডও। টেম্পোস্ট্যান্ড ছাড়াও বিভিন্ন বাস কোম্পানির কাউন্টার বসানো হয়েছে। যেগুলো পথচারিদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। স্থানীয় একজন দোকানদার জানান, গত কয়েকদিন ধরেই মহাসড়কের দু’পাশে দোকান নির্মাণের কাজ চলছে। বেশিরভাগ দোকানদার পুরনো দোকানগুলো নতুন করে তৈরি করছেন। মকবুল নামে একজন দোকানদার বলেন, গত ১৩ আগস্ট ৮ লেন উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়। সে সময় পুলিশ দোকানগুলো খুলে ফেলার জন্য কোনো সময় দেয়নি। বাধ্য হয়ে ভেঙে ফেলতে হয়েছে। ভাঙা কাঠগুলো টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ায় নতুন কাঠ দিয়ে দোকান তৈরি করতে হচ্ছে। ওই দোকানদার জানান, যাদের টং দোকান ছিল তারা পুরো দোকান সরিয়ে ফেলার সুযোগ পেয়েছে। নেতাদের গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর সেই টং দোকানগুলো আবার রাস্তার ওপর এনে বসানো হয়েছে।
মহাসড়ক ধরে রায়েরবাগের দিকে যেতে দেখা গেল বেশ কিছু স্থানে বাঁ দিকের লেন দখল করে গাড়ির গ্যারেজ বানানো হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে বাঁ দিকের লেন মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে সাদা দাগ (মার্কিং) উঠে গেছে। রায়েরবাগ বাস স্ট্যান্ডে ওভারব্রিজের নিচে পুলিশ কোনো দোকান বসতে দেয়নি। স্থানটি সরু হওয়ায় এমনিতেই যানজট লেগে থাকে। রায়েরবাগ থেকে সামনের দিকে যেতে দেখা গেল রাস্তার ওপর রাখা গাড়ি মেরামতের কাজ চলছে বেশ কয়েকটি স্থানে। এই স্থানের নাম দক্ষিণ মাতুয়াইল। মহাসড়কের পশ্চিমে কাভার্ডভ্যান সারিবদ্ধভাবে রাখা। স্থানীয় একজন বলেন, সারাদিনই কাভার্ডভ্যানগুলো রাস্তার ওপর রাখা হয়। রাতে এগুলো রাজধানীতে প্রবেশ করে। মহাসড়ক ধরে সাইনবোর্ড হয়ে কাঁচপুরের দিকে গিয়েও দেখা গেল লেন দখল করে গাড়ি রাখার দৃশ্য। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে ৮ লেনের মধ্যে দুই পাশের দুই লেনই উধাও হয়ে গেছে গাড়ির দাপটে।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল মালেক জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর ৮ লেনের কিছু অংশ পড়েছে ডিএমপি এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অধীনে। এটি হাইওয়ে পুলিশের আওতায় পড়েনি। লেন দখল করে গাড়ি রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. আনিছুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, লেন যাতে দখল না হয় সেজন্য পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, লেন দখল করে গাড়ি রাখা আছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। রায়েরবাগের কাছে লেনের ওপর গাড়ি রেখে মেরামত করা হচ্ছে শুনে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এটা হতেই পারে না। এত ব্যস্ত মহাসড়কের ওপর গাড়ি রেখে মেরামতের কাজ চলছে এটি বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। দক্ষিণ মাতুয়াইলে লেন দখল করে কাভার্ডভ্যান রাখার কথা স্বীকার করে ওসি আনিছুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের ট্রাফিক সার্জেন্টরা ভ্যানগুলো ভেতরে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। আমরা প্রায়ই এসব কাভার্ডভ্যান মহাসড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিতে অভিযান চালাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।