Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফারাক্কার সব গেট খুলে দিতে ভারত সরকারের নির্দেশ

প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০৮ এএম, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য দেশটির পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ফারাক্কা বাঁধের প্রায় সবগুলো গেট খুলে দেবার নির্দেশ দিয়েছে। ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে পানি ছেড়ে দিলে বিহার রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এদিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের জেরে গঙ্গা (পদ্মা)-তে যে বিপুল পরিমাণ সিল্ট বা পলি পড়ছে তার জন্য প্রতি বছর বিহারকে বন্যায় ভুগতে হচ্ছে এবং এর একটা স্থায়ী সমাধান হল ফারাক্কাটাই তুলে দেওয়া।
ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সমীর সিনহা গতকাল জানিয়েছেন, বর্ষাকালে এমনিতেই অন্য সময়ের তুলনায় ফারাক্কায় বেশি গেট খোলা থাকে। কিন্তু বিহার প্রদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এখন প্রায় ১০০টি গেট খুলে দেবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফারাক্কায় ১০৪টি গেট আছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এ গেটগুলো খুলে দিলে ১১ লাখ কিউসেক পানি সরে যাবে যাতে করে বিহারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বিহার রাজ্যে গত এক সপ্তাহে ১০ লাখের বেশি মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। ফারাক্কার গেটগুলো খুলে দেবার বিষয়ে বাংলাদেশকে আগেই নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে এবং এনিয়ে বাংলাদেশের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে বলে মি. সিনহা উল্লেখ করেন। বর্ষা মওসুমে এটিকে ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য গত সোমবার রাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বিহার এবং উত্তর প্রদেশে জরুরী সহায়তা দল পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের জেরে গঙ্গাতে যে বিপুল পরিমাণ সিল্ট বা পলি পড়ছে তার জন্য প্রতি বছর বিহারকে বন্যায় ভুগতে হচ্ছে এবং এর একটা স্থায়ী সমাধান হল ফারাক্কাটাই তুলে দেওয়া।
ফারাক্কা নিয়ে বাংলাদেশের নানা আপত্তি আছে বহুদিন ধরেই। কিন্তু ভারতের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও মুখ্যমন্ত্রীও এই প্রথম ফারাক্কা বাঁধ প্রত্যাহারের দাবি তুললেন। একচল্লিশ বছর আগে গঙ্গার উপর যখন ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়, তার একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পানিপ্রবাহের একটা অংশকে হুগলী নদীতে চালিত করে কলকাতা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করা। সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল না-হলেও ফারাক্কার জেরে গঙ্গার উজানে যে পলি পড়া শুরু হয়েছে, তারে জেরে প্রতি বছরই বর্ষার মওসুমে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশ।
ফারাক্কা থেকে কোনও লাভ উজানের এই সব রাজ্য পাচ্ছে না, কিন্তু প্রায় নিয়ম করে ফি বছরই তাদের ভুগতে হচ্ছে ফারাক্কার জন্য। এই পটভূমিতেই গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ফারাক্কা বাঁধ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন বিহারের তৃতীয় মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগেই তিনি বলেন, ‘বিহারে বন্যার এই হাল গঙ্গায় সিল্ট বা পলি জমার কারণেই। যবে থেকে ফারাক্কা বাঁধ নির্মিত হয়েছে, তখন থেকেই এই পলি জমা শুরু’।
‘আগে যেসব পলি নদীর প্রবাহে ভেসে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ত, এখন ফারাক্কার কারণে সেটাই নদীর বুকে জমা হয়ে বন্যা ডেকে আনছে। আমি তাই গত দশ বছর ধরে বলে আসছি এই সিল্ট ম্যানেজমেন্ট না-করলে বিহার কিছুতেই বন্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে না’।
‘আমরা কোনও পয়সা চাই না- কিন্তু চাই কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের সংস্থাগুলো এসে দেখুক কীভাবে এই সিল্ট সরানো যায়। এর একটা রাস্তা হতে পারে ফারাক্কা বাঁধটাই হঠিয়ে দেওয়া। আর আপনাদের কাছে বিকল্প কোনও প্রস্তাব থাকলে সেটাও অনুসরণ করে দেখা যেতে পারে’।
নীতিশ কুমারের এই কথা থেকেই স্পষ্ট বিহারে প্রতি বছরের বন্যার জন্য তার সরকার প্রধানত ফারাক্কা ব্যারাজকেই দায়ী করছেন। বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিহার সরকারের পক্ষ থেকে একটি চার্টও তুলে দেওয়া হয়েছে- যাতে ফারাক্কা তৈরি হওয়ার আগে ও পরে বিহারে গঙ্গানদীর গভীরতা বা নাব্য কতটা কমেছে সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। বিহার সরকারের এই দাবি মেনে ফারাক্কা বাঁধ প্রত্যাহার করে নেওয়া - সোজা কথায় বাঁধের সব স্লুইস গেট পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া সহজ নয় ঠিকই, কিন্তু ফারাক্কার বিরুদ্ধে ভারতের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ যেভাবে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন সেটাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বন্যা বাড়ার আশংকা নেই
বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র এবং যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের এ সময়টিকে ফারাক্কায় গেটগুলো খোলা থাকার কথা। নতুন করে গেট খুলে দেবার কিছু নেই। তারা বলছেন, সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য এ গেটগুলো তৈরি করেছে ভারত। কিন্তু এখন নদীতে পানিপ্রবাহ এমনিতেই বেশি থাকায় গেটগুলো বন্ধ থাকার কথা নয়। বাংলাদেশে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ১১ লাখ কিউসেক পানির প্রবাহ যদি বাংলাদেশের ভেতরে আসে তাহলে বাংলাদেশ অংশে পদ্মায় পানি বাড়বে, কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে না।
কর্মকর্তারা মনে করেন, যেহেতু এখন ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি কমছে সেজন্য পদ্মার পানি বাড়লেও সেটি কোন বন্যা পরিস্থিতির তৈরি করবে না। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ খন্দকার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ভেতরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভেতর দিয়ে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয়। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • শুভ্র ২৪ আগস্ট, ২০১৬, ৩:৪৪ পিএম says : 1
    ফারাক্কার সব গেট স্থায়ীভাবে খুলে দেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফারাক্কার সব গেট খুলে দিতে ভারত সরকারের নির্দেশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ