পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাউবো’র উদাসীনতায় সৃষ্ট দুর্যোগে পানিবন্দি হাজারো মানুষ
ভবদহ (যশোর) থেকে ফিরে মিজানুর রহমান তোতা : ‘খাতি পাচ্ছিনে, মরে যাচ্ছি না খেয়ে, রিলিফ দেন, বাড়িঘর তলিয়ে গেছে, পানিতে ভেসে গেছে সবকিছু, থাকার জায়গা নেই, রাস্তায় টোং ঘরে আর ক’দিন কাটাবো’Ñকথাগুলো বললেন বাড়িঘর ছেড়ে মনিরামপুরের চিনেটোলার রাস্তায় আশ্রয় নেয়া সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা আমিনপুরের নুরজাহান বেগম। তার স্বামীর নাম গহর আলী। পরিবারের ১৬ জন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি আরও বললেন ‘কোন চেয়ারম্যান, মেম্বারদের হাতে দিয়েন না, রিলিফ যা দেন সরাসরি আমাদের হাতে দিয়েন। তাহলে পুরোটা পাবো।’ ওই বৃদ্ধার মতো জামলা গ্রামের হীরা বেগম, চিনেটোলার রুমা আক্তার, শ্যামকুড়ের তৈয়ব, রেজাউলসহ শত শত পানিবন্দি মানুষের আকুতি ‘আমাদের বাঁচান, আমরা ছেলেপেলে নিয়ে দিনরাত খুব কষ্টে কাটাচ্ছি। একটানা দুই সপ্তাহ ধরে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী নিয়ে খোলা আকাশের নীচে আছি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পানিবন্দি মানুষ আক্ষরিক অর্থেই কাঁদছে। হাজার হাজার পানিবন্দিদের দুঃখ-দুর্দশা চোখে না দেখলে কাউকে বুঝানো যাবে না। দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই তাদের। পানিবদ্ধ ভবদহের আশেপাশে মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার শতাধিক গ্রামে এখন পানি থৈ থৈ করছে। রান্নার জায়গা নেই। রাতে শোবার জায়গা রাস্তায়, তাও গাড়ীঘোড়ার ভয়। সেখানে ঘটছে মানবিক বিপর্যয়। রাস্তাঘাট, ফসলাদি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ীতে পানি আর পানি। গোটা এলাকার কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) যশোরের সাংবাদিকদের একটি টীম ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রতিনিধিরা সরেজমিন গিয়ে দেখতে পান মনিরামপুর থেকে কেশবপুর পর্যন্ত মাইলের পর মাইল রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সাহায্য একেবারেই অপ্রতুল। বুড়িভদ্রা, হরিহর ও আপারভদ্রা নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ৩ দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজানের পানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা এলাকার জনজীবন। কেশবপুর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল সাংবাদিকদের বলেন, জরুরিভাবে পানিবদ্ধ এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্য দরকার। রেডক্রিসেন্টের জেলা সেক্রেটারি জাহিদ হাসান টুকুন জানান, গতকাল প্রথমবারের মতো ৬শ’ পরিবারকে চাল, ডাল, লবণ, সাবান, খাবার স্যালাইনের বান্ডিল দেয়া হয়েছে। মাদানীনগর মাদ্রাসার পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে খিচুড়ি। জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের ৩টি উপজেলার ১শ’ ৮৫টি গ্রাম পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৫১ জন। এ পর্যন্ত ৪২ টন চাল সরবরাহ করা হয়েছে।
শুধু কি প্রবল বর্ষণে ভবদহ এলাকা প্লাবিত, এই প্রশ্নের জবাবে পানিবন্দিরা সমস্বরে বলেছেন, এর জন্য দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ দুর্যোগ মানবসৃষ্ট। ভবদহের ২১টি কপাটের মধ্যে মাত্র ২টি কপাট খুলে দেয়া হয়েছে। তাতে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। তাছাড়া কেশবপুরের আলতাপোলের একটি অপরিকল্পিত ব্রিজ পানি আটকে রেখেছে। হরিহর, শ্রীনদী খননের মাটি পাড়ে রাখায় বর্ষণে তা ধুয়ে আবার নদীতে পড়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে স্থায়ী সমাধান হয়নি ভবদহের। মাঝে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পানিবদ্ধতার নিরসন হলেও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি।
ভবদহ এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যারা এখনও গ্রামাঞ্চলে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন তারা গৃহপালিত পশু-পাখি, সাপ, পোকা-মাকড়ের সাথে বসবাস করছেন। তাদেরকে উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্লাবিত এলাকায় শিশু খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কেশবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৫টি। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ১শ’ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। অনেক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের রান্না ও খাওয়া হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব জানান, বুড়িভদ্রা, হরিহর ও আপারভদ্রা নদীর পানি বিপদ সীমার ৪ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমির আউশ, আমন, সবজি ও পানের ক্ষতি হয়েছে। যার পরিমাণ ৪৫ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৫ টাকা। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে ৮৯ কোটি ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩১৫ টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানিতে মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মিলে ২০৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর জানায়, বন্যার পানিতে ৯৫৫টি ল্যাট্রিন ১১০টি অগভীর ও ৯৪টি গভীর নলকূপ তলিয়ে গেছে।
এদিকে, প্রতিদিন পানি নিষ্কাশন ও ত্রাণের দাবিতে বানভাসি মানুষ মনিরামপুর ও কেশবপুর শহরে এসে সমাবেশ ও মানববন্ধন করছে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, দ্রুত বন্যার পানি নিষ্কাশনের জন্য হরিহর নদী খননের প্রয়োজন হলেও আমাদের হাতে ভাসমান কোনো ড্রেজার নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।