Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বহু কালো মানুষ শ্বেতাঙ্গদের তাদের প্রতি বৈরী হিসেবেই দেখে

প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় (৩)
ইনকিলাব ডেস্ক : এখানে বসবাসকারী বহু কৃষ্ণাঙ্গই শ্বেতাঙ্গদের তাদের প্রতি বৈরী হিসেবেই দেখে। নিউ বার্লিনের মেয়র ৬ বছর আগে ৯৩ শতাংশ অধ্যুষিত এলাকায় সাশ্রয় মূল্যে একটি আবাসন প্রকল্পের প্রতি প্রাথমিক সমর্থন দিয়ে হুমকির সম্মুখীন হন। তার বাড়ির দেয়ালে লেখা হয়Ñনিগার প্রেমিক।
নিউ বার্লিন কর্তৃপক্ষ আবাসন উন্নয়ন বন্ধ করে দেয়। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের জন্য মামলা করে। মিলওয়াউকির উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক ভি লেভাইন কর্তৃক শীঘ্রই প্রকাশিতব্য এক সমীক্ষায় বলা হয় যে, এ অঞ্চলের সবাই অবাক হয়ে দেখে যে ১১.১ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান-আমেরিকান উপশহরে বাস করে। আমেরিকার ৫০টি বৃহত্তম নগরীর মধ্যে এখানেই উপশহরে বাস করা কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যা সবচেয়ে কম।
মিলওয়াউকির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ নাগরিক শ্বেতাঙ্গ। তারা কখনো একজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র নির্বাচন করেনি। এমনকি যে ওয়াউওয়াটোসাকে এক প্রজন্ম আগে বদলে দিয়েছিলেন সেখানেও ৯০ শতাংশ মানুষ এখনো শ্বেতাঙ্গ। সাবিররা স্বামী-স্ত্রী তাদের সন্তানদের বর্ণবাদের এই জটিল দৃশ্যপট থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। ছেলে তাজ ও মেয়ে আমিরা মিলওয়াউকিতে একটি বেসরকারী ক্যাথলিক স্কুলে পড়ে। সেখানে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই শ্বেতাঙ্গ। কিন্তু তারা হল মুসলমান যাদের বাড়ির পরিবেশ ভিন্ন। এ দু’ধরনের পরিবেশ তাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। তাদের আশপাশের এলাকার পরিবেশ খুব ভালো নয়। মাদকের ব্যবহার চলে এখানে। সেখানে ফুটপাতগুলো ভাঙ্গাচোরা, কোথাও কোথাও খালি জায়গায় বাগান করা হয়েছে। মাঝে মধ্যেই মাদকসেবী ও প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
এ অবস্থার মধ্যেই বাইরের পৃথিবীকে দেখছে ও জানছে তারা। তাজ গত মে মাসে ওয়াউওয়াটোসাতে এক শ্বেতাঙ্গ সহপাঠীকে দেখতে গিয়েছিল। বন্ধুটি একটি নার্ফ বন্দুক নিয়ে বাইরে খেলতে যেতে চাইল। কিন্তু তাজের মনে পড়ে যায় যে, পুলিশ ক্লিভল্যান্ডে তামির রাইস নামের ১২ বছরের এক কৃষ্ণাঙ্গ বালককে গুলি করে হত্যা করেছিল। সে বন্ধুকে বলে, বাইরে গেলে তাকে সাবধানে থাকতে হবে। পুলিশ সব সময় ভালো ব্যবহার করে না। কিন্তু বন্ধুর মা বলে যে, পুলিশ খুব ভালো।
ছেলে-মেয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরলে জোঅ্যান ও সাবির খুশি হন। তারা এলাকার পরিবেশকে উন্নত করতে চায়। বোঝা যায়, যখন আমিরা এলাকায় একটি মদের দোকান খোলার বিরোধিতা করে আবেদন লিখতে সহায়তা করে। কখনো তারা তাদের ব্লকের শেষ মাথায় একটি খাবার দোকানে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়।
সব বাবা-মাই চায় তাদের সন্তান ভালো হবে, ভালো কিছু করবে। তারা তাদের জীবনের জন্য নতুন সম্ভাবনা খুঁজবে। জোঅ্যান ক’দিন আগের কথা স্মরণ করেন। সেদিন তাজ তার সাথে তর্ক করছিল। সে তার আট-স্পিডের বাইক নিয়ে তাদের ব্লকের মধ্যে ঘোরাফেরার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু জোঅ্যানের পক্ষে তার সাথে বাইরে যাওয়া তখন সম্ভব ছিল না। তাই তিনি তাকে না বলেন। ছেলে তখন তাকে বলে, তাহলে তুমি স্বীকার করছ যে আমরা একটি মারাত্মক অবস্থার মধ্যে থাকা একটি কম্যুনিটিতে বাস করছি।
তার প্রশ্ন জোঅ্যানকে ভাবিত করে। তিনি এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তার রয়েছে মনস্তত্ত্বে স্নাতক ও প্রশাসনিক সমাজকর্মে মাস্টার্স ডিগ্রি। তারপরও তিনি ভাবলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, অন্য কম্যুনিটিতে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে তেমনি আমাদের কম্যুনিটিতেও চ্যালেঞ্জ আছে। তোমাকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সর্বোত্তম পন্থাটি খুঁজে বের করতে হবে।
লাতিশা স্পেন্স- ব্রুকেন্স ও জ্যান্টনি ব্রুকেন্স হাউজিং ক্র্যাশের সময় তাদের নর্থ মিলওয়াউকির দ্রুত অবনতি ঘটায় পাঁচ বছর আগে ৯০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত মিলওয়াউকিতে চলে আসেন। তারা লেক মিশিগানের শহরতলিতে হোয়াইটফিশ বে’তে বাংলো আকৃতির নতুন ভাড়া বাড়িতে এসে ওঠেন। তারা বিস্মিত হয়ে দেখলেন সেখানকার পরিবেশ ভিন্ন রকম। সবখানে লোকজন। তারা হাঁটছে। চারপাশে সবকিছু জমজমাট। তারা যেখানে ছিলেন, তা ছিল ৯৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত। পরিবেশ সম্পূর্ণই আলাদা। ২০০৮ সালে তারা ২ বেডরুমের একটি বাড়ি কিনেছিলেন ৯৮ হাজার ডলার দিয়ে। তারপরই হাউজিং মার্কেট পতনের প্রভাব এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক বাড়ি পরিত্যক্ত হয়। অপরাধ বৃদ্ধি পায়।
তাদের ছেলে ১৮ বছরের জান্টনি জুনিয়র। একদিন বিকেলে সে তার ছোটবোন জারিয়ার জন্য কেনা একটি বার্বি পুতুল কিনে একটি প্লাস্টিক ওয়ালমার্ট ব্যাগে ভরে নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় এক লোক এক বিরাট পাথর হাতে তার পথ রোধ করে। লোকটি তাকে বলে, তোমার কাছে টাকা পয়সা যা আছে দাও, নইলে আমি এই পাথরের আঘাতে তোমার মাথা ভেঙ্গে ফেলব।
দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় জান্টনি জুনিয়র। ঘটনাটি স্মরণ করে সে বলে, তখন কি করব আমি বুঝতে পারছিলাম না। সেই প্রথম আমার ছিনতাইকারীর সম্মুখীন হওয়া। বাধ্য হয়ে তাকে ৫ ডলার দেই। সে তা নিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
৪৮ বছর বয়স্ক জান্টনি সিনিয়র জানতে পারলেন, তার প্রতিবেশিনী যখন দু’সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তখন এক অস্ত্রধারী তাকে আটক করে অর্থ দাবি করে। তিনি চিন্তা করলেন, এখানে বাস করা খুবই বিপজ্জনক হবে।
তখন তাদের বাড়ির দাম ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। তাদের আরেকটি বাড়ি কেনার মত অর্থ ছিল না। অবশেষে তারা হোয়াইটফিশ বে’তে মাসিক ১৪৫০ ডলারে বাড়ি ভাড়া নেন।
তাদের স্বস্তি এটুকুই যে এখানে জারিয়া অবাধে তার বাইসাইকেলে চলাফেরা করতে পারছে। আর জান্টনি জুনিয়র একটি উঁচু মানের স্কুলে যেতে পারবে। সূত্র ঃ দি নিউ ইয়র্ক টাইমস। (অসমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বহু কালো মানুষ শ্বেতাঙ্গদের তাদের প্রতি বৈরী হিসেবেই দেখে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ