Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমান্ত খুনের প্রতিবাদের পরিবর্তে মন্ত্রীরা ভারত বন্দনাতেই মশগুল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:১২ পিএম

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সহসভাপতি আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেছেন, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী খুনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। কিন্ত এসব সীমান্ত খুনের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ তো দূরের কথা, বরং সরকারের অনেক মন্ত্রী ভারত বন্দনাতেই মশগুল হয়ে আছেন। একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের জনগণের জন্য এটা গভীর উদ্বেগ, হতাশা ও লজ্জার।

আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক আরো বলেন, গত ২০০৮ সাল থেকে গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ বছরে জাতীয় পত্রপত্রিকা ও মানবাধিকার সংস্থার পরিবেশিত হিসাব মতে সীমান্তে বিএসএফ ৫৪৮ জন বাংলাদেশীকে খুন করেছে। সর্বশেষ গত ১৬, ২১ ও ২২ ডিসেম্বর লালমনিরহাট, খুলনা ও হালুয়াঘাট সীমান্তে বিএসএফ ৩ বাংলাদেশীকে গুলি করে খুন করে।

তিনি বলেন, এসব সীমান্ত খুনের ঘটনায় বর্ডার গার্ডের তরফ থেকেও পতাকা বৈঠক করে বিএসএফের কাছ থেকে লাশ গ্রহণ ছাড়া ভরসা রাখার মতো কোন তৎপরতাই চোখে পড়ে না। আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, বিশ্বের কোথাও এমনটা আমরা দেখি না যে, কেবল অবৈধ সীমান্ত পারাপার বা চোরাচালানের জন্য মানুষ খুনের মতো নিষ্ঠুরতা ঘটে। ভারত-চীন বা ভারত-পাকিস্তান বর্ডারেও সীমান্তে এমন হত্যাকান্ডের খবর দেখা যায় না। সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা যে হারে পাখী শিকারের মতো নির্বিঘেœ বাংলাদেশীদেরকে খুন করে চলেছে, বিশ্বে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্ত হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চিহ্নিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের তরফ থেকেই সরকারিভাবে বার বার বলা হচ্ছে, উভয় দেশের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজ করছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন ভারত সফরের পূর্বে উভয়ে দেশের সম্পর্ককে ‘স্বামী-স্ত্রীর মতো’ বলে অভিহিত করেছেন। আরো এক ধাপ এগিয়ে চলতি বছরের ৮ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রক্তের সম্পর্ক’। চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক সুগভীর, বহুমাত্রিক ও রক্তের অক্ষরে লেখা। এরপর গত ১৭ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছেন, সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফভাবে দায়ী নয়। আমাদের কিছু দুষ্ট ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে যায় এবং তাদের কাছে অস্ত্র থাকে। তখন ভারত বাধ্য হয়ে ভয়ে ওদের গুলি করে। এর কিছুদিন আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু আনতে গিয়ে ইন্ডিয়ার গুলি খেয়ে মারা যায়, তার জন্য দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার নেবে না। বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক রক্তের রাখিবন্ধনে আবদ্ধ। দুই দেশের এই সম্পর্ক কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, ‘যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদের পাখির মতো গুলি করে খুন করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা উল্টো মন্ত্রীরা ভারত বন্দনাতেই মশগুল।

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সাথে সমমর্যাদা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে সুসম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্ত সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদেরকে লাগাতার ভারত খুন করে যাবে, আর বাংলাদেশ সুসম্পর্ক রক্ষার জন্য চুপচাপ সয়ে যাবে এটা কেউ চায় না। আমরা চাই সরকার সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হোক, সীমান্তে নাগরিকদের জানমালের হেফাজতে বর্ডার গার্ডের জাওয়ানরা বীরের মতো ভ‚মিকা রাখুক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সীমান্তে যে কোন আগ্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ