পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থেকে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধেকই লোকসানের শিকার হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শেয়ার বাজারে এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত মোট ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটি লোকসান করেছে এবং বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান ২০১৯-২০ অর্থবছরে লাভ করতে পেরেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেগুলো স্বাভাবিক মনোপোলি সুবিধা পাচ্ছে এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত বাজারে ব্যবসা করছে, সেগুলো লাভের মুখ দেখছে। আর যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসা করছে সেগুলো লোকসানের মুখে পড়ছে বলে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক বিশ্লেষণ থেকে। ক্ষতিগ্রস্ত সাতটি প্রতিষ্ঠান চিনি, মোটরসাইকেল, বৈদ্যুতিক তার ও কাঁচের শিট উৎপাদন এবং হোটেল সেবা নিয়ে কাজ করে।
অথচ পণ্যে বৈচিত্র্য আনয়ন, গুণগত মানোন্নয়ন এবং সেবার মান বাড়িয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পকারখানাগুলো লাভজনক এবং মুনাফা বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন পেছনের দিকে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমদ বলেন, লোকসান দিয়ে কোনো ব্যবসা চলতে পারে না। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন, তাদের দুর্নীতি দেশের সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা না থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনো লোকসান গুনতে হচ্ছে।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারী রহিম শেখ বলেন, বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান অনেক বছর ধরে কোনো ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না। ফলে বিনিয়োগকারীরা কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছে না। রেনউইক যজ্ঞেশ্বর এবং উসমানিয়া গ্লাস গত দুই বছরে কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি।
ডিএসই’র তথ্য অনুসারে, শ্যামপুর সুগার এবং জিল বাংলা সুগার অন্তত গত দুই দশক ধরে কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কলগুলো ৬০ বছরের পুরানো। সেগুলোর অর্থনৈতিক জীবনকাল কমপক্ষে ৩০ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে বলে জানান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা। তিনি বলেন, এ জন্যই এগুলো বহু বছর ধরে লোকসান করছে। শ্যামপুর সুগার, জিল বাংলা এবং রেনউইক যজ্ঞেশ্বর নামে তালিকাভুক্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিএসএফআইসি’র আওতায় রয়েছে। সনৎ কুমার সাহা আরও জানান, বাণিজ্যিক অবস্থান নিশ্চিত করতে এগুলোর আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
এক সময় লাভজনক রাষ্ট্র পরিচালিত মোটরসাইকেলের উৎপাদন এবং পরিবেশক ছিল অ্যাটলাস বাংলাদেশ। তবে গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের মুখে। প্রতিষ্ঠানটির পরিস্থিতি এতটাই খারাপ, ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছে এর অডিট করা প্রতিষ্ঠান।
বিনিয়োগকারী রহিম শেখ বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতার মনোভাবের অভাব পতনের প্রধান কারণ। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই বছরের পর বছর ধরে আধুনিকায়ন ও পণ্য বৈচিত্র্যে জোর দেয়নি। মুনাফা অর্জনের জন্য কোনো প্রকার চেষ্টা এসব প্রতিষ্ঠানে হয় না বলেও যোগ করেন তিনি।
একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, তারা রাষ্ট্র পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার কেনেন না। কারণ যে কোনো সময় সরকারের সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
যেমনটি দেখা গেছে তিতাস গ্যাসের ক্ষেত্রে। ২০১৫ সালে জ্বালানী বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠানটির চার্জ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে এর আয় হঠাৎ করেই কমে যায়। এতে করে গ্যাস বিতরণকারী এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়।
তিনি বলেন, কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের বিশাল সম্ভাবনা আছে। কারণ এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সম্ভাবনাময় খাতে অপ্রতিদ্ব›দ্বী। তার মতে, অদক্ষতা, প্রতিযোগিতাহীনতা ও জবাবদিহিতার অভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান করছে। ফলে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত বাজারে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোই লাভজনক, প্রতিযোগিতামূলক বাজরে নয়।
তালিকাভুক্ত ১১টি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান লাভে রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে নিয়ন্ত্রিত বাজারে। যেখানে বেসরকারি খাতের ব্যবসা করার অনুমতি নেই।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা ওয়েল, পদ্মা ওয়েল, তিতাস গ্যাস, পাওয়ারগ্রিড, ডেসকো এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল।
কেবলমাত্র চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে মুনাফা অর্জন করছে। এগুলো হলো- ন্যাশনাল টিউবস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং রূপালী ব্যাংক।
এক সময় তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক ছিল। তবে দক্ষতা ও যথাযথ দেখাশোনার অভাবে সেগুলো লোকসান করছে বলে মনে করেন শেয়ার বাজার বিশ্লেষক প্রফেসর আবু আহমেদ। তিনি বলেন, সরকারের উচিত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তাদের শেয়ার কমানো এবং নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়া। যাতে করে সংশ্লিষ্ট দক্ষ ব্যক্তিরা পরিচালনা বোর্ডে আসতে পারেন। তবে অজানা কারণে সরকার বেশিরভাগ শেয়ার ধরে রাখছে। তা ছাড়া, আমলারা চান না প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে। সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ার সরকারকে যা দিচ্ছে তা হলো বার্ষিক লোকসান উল্লেখ করেন তিনি।
প্রফেসর আবু আহমেদ মনে করেন, সরকার তার শেয়ারগুলো বিক্রি করলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত পেতে পারে। অপরদিকে দক্ষ পরিচালকরা এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করে তুলতে পারে। যেখান থেকে বছরের শেষে সরকার রাজস্ব পেতে পারে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচুর অব্যবহৃত রিসোর্স রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করা যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।