Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০ বছরের রেকর্ড বৃষ্টিপাত খুলনায়

বিভিন্ন স্থানে টর্নেডোর আঘাত

প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন স্থানে টর্নেডোর আঘাতে ল-ভ- হয়ে পড়ে জনজীবন। খুলনায় বৃষ্টিপাতে ২০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে মাগুরা, বোরহানউদ্দিন, উল্লাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাত হানে টর্নেডো। এসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
খুলনায় বৃষ্টিপাতে ২০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ
খুলনা ব্যুরো : একটানা ২৭ ঘণ্টা বৃষ্টির পর গতকাল সোমবার খুলনার আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। তবে গত ২০ বছরের রেকর্ড (২৮৩ মি.মি.) পরিমাণ বৃষ্টিপাতে বেশিরভাগ সড়ক ও নি¤œাঞ্চল থাকে। ফলে গতকালও স্বাভাবিক হয়নি জীবনযাত্রা। নগরীর অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় নির্ঘুম রাত যাপন করেছেন অনেকে। পোকা-মাকড় আর সাপের ভয়ে আতঙ্কিত তারা। বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভয়াবহ দিন কাটাচ্ছেন পানিবন্দিরা। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনা জেলার কয়রা, দিঘলিয়া ও ডুমুরিয়া উপজেলার কয়েকশ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী এলাকার কয়েকটি এলাকায় বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে খুলনার সুন্দরবন ঘেঁষা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ। খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় ঘর-বাড়ি ধসে পড়ার খবর শোনে গেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া কার্যালয়ের ইনচার্জ মোঃ আমিরুল আজাদ জানান, রবিবার ২৮৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এত বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত গত ২০ বছরেও হয়নি। টানা বৃষ্টিপাতের সাথে রবিবার দিবাগত সন্ধ্যা থেকে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে নগরজীবন।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসান জানান, বিভিন্ন ফিডারের গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় এবং সড়কে পানি জমে যাওয়ায় মেরামত কাজ করা যাচ্ছে না।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ নাজমুল আহসান জানান, খুলনার নি¤œাঞ্চলের জলাবদ্ধতার কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অসহায় মানুষের বসবাসের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক উপজেলা পর্যায়ে খবরা-খবর রাখা হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সোমবার সকালে আকাশ মেঘলা থাকলেও নতুন করে বৃষ্টিপাত হয়নি।
মহাম্মদপুরে শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত : আহত ২০ জন
মাগুরা জেলা সংবাদদাতা জানান, মাত্র ২ মিনিটের টর্নেডোয় মাগুরার মহাম্মদপুর উপজেলার দুটি গ্রাম ল-ভ- শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ২০ জন আহত হয়েছে। রবিবার বিকেলে মহাম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের সালদা ও চাকুলিয়া গ্রামের উপর দিয়ে এ টর্নেডো বয়ে যায়। মাত্র ২ মিনিটে ল-ভ- করে দেয় গ্রাম দুটির ঘরবাড়ি গাছপালাসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবন। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী মিয়া জানান, প্রচ- এ টর্নেডোয় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আহত হয়েছে আব্দুল হালিম ও আব্দুল মজিদসহ ২০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
বোরহানউদ্দিনে মালবাহী জাহাজ ডুবি
বোরহানউদ্দিন (ভোলা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনে তেঁতুলিয়া নদীতে অকস্মাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে মালবাহী জাহাজ ডুবে গেছে। রোববার বরিশাল থেকে বোরহানউদ্দিন আসার পথে এমভি বাহাদুর নামের মালবাহী জাহাজটি ২ হাজার ৮০ ব্যাগ সিমেন্ট নিয়ে তেঁতুলিয়া নদীর পাতার চর এলাকায় ডুবে যায়। ওই সময় চরে অবস্থানকারী জেলেরা জাহাজের সারেং সাইদ, তার সহযোগী আসাদ ও শহিদকে  উদ্ধার করে। আকিজ সিমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া বোরহানউদ্দিন থনা পুলিশও ঘটনাস্থল নির্ণয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে।  সোমবার জাহাজের সারেং সাইদ জানান, নদীর মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টিসহ ঝড়ো বাতাসে জাহাজটি কাঁত হয়ে পানিতে ডুবে যায়। তিনি ও তার ২ সহযোগী ওই সময় উল্টোদিকে নদীতে ঝাঁপ দেন।
আকিজ সিমেন্টের ভোলা জেলার পরিবেশক মাইনুল হক জানান, ওই জাহাজটি বরিশাল থেকে তার অর্ডার করা ১ হাজার ৩শ’ ৫২ ব্যাগ পিসিসি (পোর্টল্যান্ড কমপোজিট সিমেন্ট) ও ৭২৮ ব্যাগ ওপিএস (অর্ডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট) নিয়ে বোরহানউদ্দিনের দিকে আসছিল। কিন্তু তেঁতুলিয়া নদীতে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে সিমেন্টসহ জাহাজটি নদীতে তলিয়ে যায়। এতে তিনি ৮ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান। আকিজ সিমেন্টের বরিশাল এরিয়া ইনচার্জ সাইফুল আলম জানান, সোমবার বিকাল নাগাদ ডুবুরী এনে এমভি বাহাদুরের অবস্থান নির্ণয় করে তা উদ্ধারের  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বোরহানউদ্দিন থানার ওসি (তদন্ত) অসিম কুমার শিকদার জানান, সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ওই স্থান বোরহানউদ্দিনের মধ্যে হলে অবিলম্বে থানা পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিবে।
উল্লাপাড়ায় টর্নেডোয় ২৫ বাড়ি ল-ভ-
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রবিবার বিকেলে মাত্র ৪৫ সেকে-ের ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের গজাইল পশ্চিমপাড়ার গ্রামের ২৫টি বাড়ি ল-ভ- হয়ে গেছে। জানা গেছে, ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় অর্ধশত ঘর ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। ওই গ্রামের ইসমাইল হোসেন, বাবু ম-ল, আজিজুল হক, নাছির, হাফিজুর, ফরহাদ আলীর বসতভিটায় ঘরের কোনো চিহ্নই নেই। এ ঝড়ে অনেকেরই ঘরের টিনের চাল ল-ভ- হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল প্রামাণিক জানান, ঝড়ের পর তিনি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামটি পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তাদের পুনর্বাসনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের নিকট পাঠানো হয়েছে।








 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ২০ বছরের রেকর্ড বৃষ্টিপাত খুলনায়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ