Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পরিবর্তনের হাওয়া আলজেরিয়ায়

বাড়ছে মসজিদ আর শরীর ঢাকা পোশাক পরছে নারীরা : বন্ধ হচ্ছে মদের দোকান

প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : পরিবর্তনশীল আলজেরিয়ায় মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে, মহিলারা নিজেদের আবৃত করছেন আর অ্যালকোহলিক পানীয় বিক্রির দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে মুসলিম মৌলবাদীরা শক্তি অর্জন করছে।
১৯৯০ এর দশকে ইসলামের নামে উগ্রপন্থীরা আলজেরিয়াকে কব্জা করার চেষ্টা করার প্রেক্ষিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ ও তাতে সরকার জয়ী হয়। সালাফিরা ক্রমবর্ধমানভাবে আবার শক্তি অর্জন করলেও কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে প্রকাশ্যে কমই উদ্বেগ প্রকাশ করে।
সালাফিদের আশির্বাদ হিসেবে গণ্য করে আলজেরীয়দের তার প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে, পক্ষান্তরে সমালোচকরা উদ্বিগ্ন যে সালাফিবাদ সামাজিক রীতিনীতির গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধারণ করা আধুনিক আলজেরিয়ার সম্ভাবনাকে বিলুপ্ত করবে।
এক দশকেরও বেশি সময় আগে আলজেরীয় ইসলামপন্থীদের বিদ্রোহ দমন করার পর আলজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এখন আল-কায়েদার উত্তর আফ্রিকা শাখার সাথে বিচ্ছিন্নভাবে লড়াই করে চলেছে। ১৯৯১ সালে একটি ইসলামপন্থী দল নির্বাচনে বিজয়ী হতে চলেছে এমন সময় সেনাবাহিনী তা বাতিল করলে সহিংসতা শুরু হয়। এতে প্রায় ২ লাখ লোক নিহত হয় এবং সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ে। আলজেরীয় কর্তৃপক্ষ নির্ঝঞ্ঝাট সালাফিদের সাথে নরম আচরণ করছে যারা রাজনীতিকে পরিহার করে। কিন্তু  উত্তর আফ্রিকার উচ্চ বেকারত্ব কবলিত এবং ক্ষমতাসীনদের উপর আস্থার বিরাট অভাব সম্বলিত দেশে তার ওপরই নির্ভর করে তারা এগোতে চাইছে।
আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক সাইদ বাহমেদ বলেন, আল্লাহর কাছে শোকর যে, আলজেরীয় সমাজ তার পরিচিতির উৎসের কাছে ফিরে আসছে। উদারপন্থী ইসলামিস্ট পার্টি মুভমেন্ট ফর এ পিসফুল সোসাইটির সাথে ঘনিষ্ঠ বাহমেদ মহিলাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ইসলামী পোশাক পরাকে আশির্বাদ বলে মনে করেন।
আলজেরিয়ার উত্তর আফ্রিকীয় প্রতিবেশীরা সমাজে যারা ইসলামের বৃহত্তর ভূমিকা চায় তাদের নতুন ভূমিকার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন এবং ইসলামী দলগুলোকে তাদের ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মরক্কোতে দেশ পরিচালনা করছে উদারপন্থী ইসলামী দল। সেখানে বিশেষ করে কর্মজীবী এলাকার মহিলারা ক্রমেই বেশি সংখ্যায় বোরকা পরিধান করছে।
তিউনিসিয়ার ইসলামপন্থী আন নাহদা পার্টি ২০১১ সালের বিপ্লবের পর ক্ষমতায় আসে। এখনো তারা পার্লামেন্টে শক্তিশালি। কিন্তু তারা এ বছর রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করেছে। আন নাহদার প্রভাব গত বছর পর্যটকদের ইসলামিক স্টেটের হামলা বন্ধ করতে পারেনি।  
আজকের আলজেরিয়ায় সালাফিদের উৎসাহে ১৩০ বছরের ফরাসি শাসনের শেষ চিহ্নও লোপ পেতে চলেছে। ফরাসিদের শাসনের চিহ্ন বেশির ভাগই ছিল আলজিয়ার্সে যেখানে বাড়ির আঙ্গিনায়, বারে ও রেস্তোরাঁয় মদ পান চলত আর মহিলারা তাদের পছন্দমতো পোশাক পরত।
গত এক দশকে আলজেরিয়ায় প্রায় ১শ’ বার ও রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে যেগুলোর মধ্যে ৩৭টি ছিল শহরের কেন্দ্রস্থলে।
লেখকদের আকর্ষণস্থল ক্ল্যারিজ বার মে মাসে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে মরা পাতার স্তূপ জমেছে।
মদ বিক্রির দোকানগুলো বন্ধ করার সরকারিকারণ হিসেবে ভাড়া চুক্তির সময় পেরিয়ে যাওয়া ও উত্তরাধিকার সূত্র সংক্রান্ত সমস্যার কথা বলা হয়েছে। সাংবাদিক মোহাম্মদ আরেজকি বলেন, কর্মকর্তারা মদের দোকান বন্ধের যেসব কারণ প্রদর্শন করেছেন তা ইসলামপন্থীদের সন্তুষ্ট করার জন্য। তিনি বলেন, এর ফলে বহুমুখী সমাজ ও সহিষ্ণু আলজেরিয়া হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ২০০৫ সালে আলজিয়ার্সের প্রান্তে ঔপনিবেশিক আমলের মাছ ধরা বন্দর লা পেরুজে মোহাম্মদ আইত কুসাইদের বার-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর ফলে তার তিন প্রজন্ম ধরে চলে আসা ব্যবসার অবসান ঘটে। তিনি বলেন, ভেঙে দেয়া ইসলামিক স্যালভেশন আর্মির এক সাবেক স্থানীয় প্রধান জনশৃঙ্খলার স্বার্থে রেস্তোরাঁটি বন্ধের প্রচারণা চালান। তিনি বলেন, এর ফলে আমার তিন সন্তান ও তাদের পরিবার সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। তিনি ইসলামপন্থীদের মোকাবেলায় সরকারের কাপুরুষতার নিন্দা করেন।
আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোহাম্মদ সাইদ ইসলামপন্থীদের চাপের কাছে নতি স্বীকারের জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, এসব বার ও রেস্তোরাঁ কর্মসংস্থান করে, কর দেয় এবং ভারসাম্যপূর্ণ সমাজের অংশ।
প্রেসিডেন্ট আবদেল আজিজ বুতেফ্লিকা ৭৯ বছর বয়সে তার প্রেসিডেন্সির চতুর্থ মেয়াদে আলজিয়ার্সে শত কোটি ডলারের গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণ করছেন। এর ৮৬৭ ফুট উঁচু মিনার হবে সহিষ্ণু ইসলামের সাক্ষী। আগামী বছর নির্মাণ শেষ হওয়ার পর এটা হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ মসজিদ।  
এ মসজিদ নির্মাণে শ্রম দিচ্ছে চীনা শ্রমিকরা। আলজেরিয়াব্যাপী মসজিদ বিস্তার লাভ করছে। এর কিছু সংখ্যকের ব্যয় নির্বাহ করছে সরকার, বাকিগুলো ব্যক্তিগত দানে তৈরি হচ্ছে।
সাবেক পুলিশ প্রধান রশিদ রেজুয়ালি বলেন, বেসরকারি অর্থদাতারা এর মাধ্যমে লোকের কাছে নিজেদের আল্লাহর সেবক বলে পরিচিতি লাভ করতে চায়। তিনি সমাজের পরিবর্তিত দৃশ্যপটকে আলজেরিয়ার সহিষ্ণুতা ও আধুনিকতা বিলুপ্ত হওয়ার লক্ষণ বলে অভিহিত করেন।  
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতার রিপোর্টে বলা হয়, সালাফিজমের বিস্তার ঘটানোর জন্য আলজেরিয়ার ৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবী ইমামকে অপসারণ করা হয়েছে। তবে রিপোর্টে গত বছর রমজান মাসের আগে একটি সামাজিক মিডিয়া প্রচারণার উল্লেখ করে বলা হয় যে, তাতে রক্ষণশীল ইসলামী মূল্যবোধ অনুযায়ী স্ত্রী, কন্যা ও বোনদের পোশাক পরতে বাধ্য করার জন্য শাস্তি না দিতে আহ্বান জানানো হয়।
সমাজ বিজ্ঞানী নাসের দাবি বলেন, মহিলাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ইসলামী পোশাক পরা হচ্ছে সেই লক্ষণ যে আলজেরিয়া ফরাসি শাসনাধীনে একশ’ বছরেরও আগে যে পরিচয় অপসারণ করেছিল তা আবার পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে।
১৯৯৩ সালে সশস্ত্র ইসলামী গ্রুপ খ্যাতিমান লেখক বন্ধু তাহার জাবুতকে হত্যার ঘটনায় দেশ ত্যাগ করেন সাংবাদিক মেজিয়ান উরাদ। তিনি দেশে ফিরে আগের সেই ফেলে যাওয়া দেশকে চিনতে পারছেন না। তিনি বলেন, তিন মাসেরও বেশি সময় আমি দেশে ফিরেছি। কিন্তু নগ্ন পায়ের কোনো নারীকে দেখতে পাইনি। সূত্র এপি।







 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবর্তনের হাওয়া আলজেরিয়ায়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ