পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : একসময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চস্থানে থাকা বরিশালে লেখাপড়ার মান ক্রমশ নিচের দিকে বলে উদ্বিগ্ন অনেক প্রবীন শিক্ষাবীদসহ ওয়াকিবাহাল মহল। বিগত এসএসসি ও সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি’র ফলাফলে বেশ কিছু উদ্বেগজনক বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এইচএসসি’র ফলাফলে বরিশাল বোর্ডের অবস্থান নিচের দিকে। পাশের হারের সাথে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও বরিশাল বোর্ডের অবস্থান সর্বনি¤েœ।
এমনকি অন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর আওতাধীন একটি জেলা থেকে যে সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রী জিপিএ-৫ নিয়ে পাশ করেছে, গোটা বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের সংখ্যা তার চেয়েও নিচে। এবারের এইচএসসির ফলাফলে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে পাশের হার গত বছরের তুলনায় দশমিক ৭ভাগ বেড়ে ৭০.১৩ শতাংসে উন্নীত হলেও এ বোর্ডের আওতাধীন বরগুনা জেলায় পাশ করেছে ৫৪.৩৯%। যা গতবছর ছিল ৬৯.৪৩%। এমনকি বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলার ফলাফল বিপর্যয় গোটা শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলকেই পেছেনে ফেলে দিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন জেলা দুটির প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগনও। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার মধ্যে এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে পিরোজপুর জেলা শীর্ষস্থান দখল করেছে। জেলাটিতে পাশের হার ৭৫.১৩%। দ্বিতীয় অবস্থানে ভোলা জেলা। পাশের হার ৭৫.০৮%। পটুয়াখালী জেলার ছাত্রÑছাত্রীরা ৭৩.১৩% নিশ্চিত করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর অনেক বড় বড় নেতা ও কর্তাদের সমাবেশের বরিশাল বিভাগীয় সদরের পাশের হার ৭০.৭০%। অবস্থান ৪র্থ।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ৩১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬১হাজার ৫৩৮ছাত্রÑছাত্রীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণের সংখ্যা মাত্র ৭৮৭। যা পরিক্ষার্থীর তুলনায় মাত্র ১.২৮%। গতবছর এ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএÑ৫ পেয়ে উত্তীর্ণের সংখ্যা ছিল ১,৩১৯। যা ছিল পরিক্ষার্থীর তুলনায় ২.৩৬%। কোচিং বাণিজ্যের ব্যাপক বিকাশের পরেও বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫ প্রপ্তির হার হৃাস পেয়ে এবার অর্ধেকে নেমেছে। বিগত মাধ্যমিকের ফলাফলেও বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে জিপিএÑ৫ প্রাপ্তির হার প্রায় ৩৫% হ্রাস পাবার চিত্র ফুটে ওঠে। আর গত তিন বছরে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এসএসসির পাশর হার কমেছে ১১%-এরও বেশী।
এমনকি বিভাগীয় সদর বরিশালের অবস্থান এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে এবার ৪র্থতে নেমেছে। এ জেলাটির পাশের হার গতবছর ৭২.৯৪% থেকে ২.২৪% হৃাস পেয়ে ৭০.৭০%-এ নেমেছে। জেলার ৯৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২২হাজার ৫৫৮ছাত্রÑছাত্রীর মধ্যে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৪৬৮ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল ক্যাডেট কলেজে ৫০ছাত্র ঐ লক্ষ অর্জন করেছে। নচেৎ জেলাটিতে এ সংখ্যা আরো নিচে নামতে পারত। অথচ গতবছর উচ্চ মাধ্যমিকে বরিশাল জেলায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৭৯৭। দক্ষিণাঞ্চলের অন্য জেলাগুলোর মত বরিশালের লেখা পড়ারও বেহাল দশা এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে উঠে এসেছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। অথচ এ জেলার আমলা আর রাজনৈতিক নেতাদের নানা বিষয়ে অর্জন নিয়ে ব্যপক প্রচারনার কোন কমতি নেই। বিগত মাধ্যমিকের ফলাফলেও বরিশাল জেলার অবস্থান ছিল ৬টি জেলার মধ্যে পঞ্চমে। অথচ অতি নিকট অতীতেই শিক্ষা ক্ষেত্রে এ জেলার অবস্থান ছিল সারা দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে। এ বিভাগীয় সদরে কোচিং বানিজ্য অন্য যেকোন জেলার চেয়েও অনেক সমৃদ্ধ হলেও লেখাপড়ার মান বাড়েনি বলে অভিযোগ অভিভবাবক সহ সাধারণ ওয়াকিবাহাল মহলের। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা বিভাগসহ প্রশাসনিক পর্যায়ে তেমন কোন হেলদোলও নেই। এব্যাপারে বরিশালের উচ্চ প্রশাসনিক পর্যায়ে আলাপ করার চেষ্টা করা হলেও সেখান থেকে অপরাগতা প্রকাশ করা হয়েছে।
এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে বরগুনা জেলায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ৪৮। গতবছর যা ছিল ৬৩। আর ঝালকাঠী জেলায় এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার ৬৫.০১%। যা গতবছর ছিল ৭২.৪১%। জেলাটিতে এবার জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণের সংখ্যা ৪৫হলেও গত বছর তা ছিল ৭১। এমনকি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মত করেই ঝালকাঠী জেলায়ও মেধাক্রমে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা যথেষ্ঠ ভাল করছে। এবার জেলাটির জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৪৫জনের মধ্যে ৩১জনই ছাত্রী। গতবছরও ৭১জনের মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫২। জেলার ২৮টি কলেজের মাত্র ৯ছাত্র জিপিএ-৫পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়ে বরগুনা ও ঝালকাঠীর জেলা প্রশাসকদ্বয়ের সাথে আলাপ করা হলে তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিস্থিতি উত্তরনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান। খুব শিঘ্রই শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষদের নিয়ে বৈঠক করে তাদের স্ব-স্ব জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকবৃন্দ। পাশাপাশি ছাত্রÑছাত্রীদের লেখাপড়ায় মনোনিশে করার ক্ষেত্রে শিক্ষক ও অভিভাবকদের আরো সচতন হবারও আহ্বান জানান জেলার শীর্ষ এ দুই কমকর্তাগণ।
তবে বিষয়টি নিয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসকের মতামত জানতে টেলিফোন করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।