Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চালে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েই চলছে। বেঁচে থাকার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এই নিত্যপণ্যের দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় সরকারের আমন সংগ্রহ কর্মসূচিও প্রায় ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। 

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চালের দাম খুচরা পর্যায়ে গত এক সপ্তাহে কেজিতে ৪ টাকা থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৪ থেকে ৪৮ টাকার মধ্যে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ঢাকা মহানগরীর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদরের গতকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৮টাকা। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৯ দশমিক ০৩ শতাংশ।
চলতি মাসের প্রথম দিকের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি খাদ্যশস্যের মোট মজুত ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫৪০ টন, এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮ টন এবং গম ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৬০ টন। এই মজুত গত বছরের চেয়ে অর্ধেক। গত বছর একই সময়ে মোট মজুতের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫০ টন, এর মধ্যে চাল ছিল ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৭ এবং গম ৩ লাখ ২৯ হাজার ৬৮০ টন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আমনের ভরা মৌসুম হলেও ধানের দাম বেশি, এর প্রভাব পড়ছে চালে। তারা মনে করছেন, আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে, তাই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
অথচ, গত এক দশকে চালের যে উৎপাদন বৃদ্ধি, তার কোনো সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। দেশের উৎপাদন ও পণ্যের দামের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকে চালের উৎপাদন বেড়েছে ৫০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। তারপরও দাম বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যনুযায়ী, এক দশক আগে (২০১০-১১ অর্থবছর) প্রতি কেজি (মাঝারি মানের) চালের গড় দাম ছিল ৪১ টাকা, যা বর্তমান বাজারে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে । গত অর্থবছরও (২০১৯-২০) প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকের মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত চালের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা। এরপর হঠাৎ করেই পরের বছর চালের দাম ৫৩ টাকায় ওঠে। পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাম এক টাকা কমেছিল। কিন্তু এরপর আবার চালের দাম লাগাম ছাড়া হয়। প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে এ নিত্যপণ্যটির দাম। তথ্য বলছে, পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে চালের দাম ছিল যথাক্রমে ৫৩ টাকা, ৫৫ টাকা, ৫৭ টাকা ও ৫৬ টাকা।
অন্যদিকে কৃষি অধিদফতরের তথ্য বলছ, এক দশক আগেও দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৫ লাখ টন, যা এখন (২০১৯-২০ অর্থবছর) তিন কোটি ৮৭ লাখ টনে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরে প্রতি বছর চালের উৎপাদন প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টন করে বেড়েছে।
তারপরও ভোক্তা পর্যায়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের বিভিন্ন মহলও এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন অনেকবার। তারপরও নানা অদৃশ্য কারণে চালের দাম কমাতে সরকারের নেয়া কোনো পদক্ষেপের সুফল মেলেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল

১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ