পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। চলে গেলেন বিএনপিতে। হলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র। বিএনপির খাতায় নাম আর নেই। এখন কোথায় আছেন? ইদানীং যাকে নিয়ে এই প্রশ্ন রাজনীতি-সচেতন চাটগাঁবাসীর মুখে মুখে তিনি আর কেউ নন। সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম মনজুর আলম। দিলখোলা সদালাপী, হাস্যোজ্জ্বল একজন ‘সাদা মনের মানুষ’ হিসেবে পরিচিত। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, দানবীরও বটে। চট্টগ্রামের মানুষজনই বলে থাকেন, কথায় এমন জাদু তিনি যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারেন। তবে ‘কূটনৈতিক’ বৃদ্ধিসুদ্ধিতে তার জুড়ি মেলা ভার! গতকাল (সোমবার) দৈনিক ইনকিলাবের সাথে আলাপচারিতায় খুব দৃঢ়তার সাথেই বললেন, ‘আমি একশ পার্সেন্ট বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী এবং শ্রদ্ধাশীল। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাÑ অর্থাৎ এদেশের জনগণের মৌলিক পাঁচটি চাহিদা ও অধিকার পূরণের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। রাজনীতি যার যার, কিন্তু বঙ্গবন্ধু সবার ঊর্ধ্বে।’ তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি তিনি অকুণ্ঠ বিশ্বাসী।
আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন কিনাÑএই প্রশ্নের জবাবে এম মনজুর আলম বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে সব সময়ই তো আছি। যখন আওয়ামী লীগে ফিরে যাব আপনাদের জানিয়েই যাব। সবাইকে সাথে করে নিয়ে যাব।’ তবে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ এবং মনজুর আলমের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির রাজনীতির সাথে তিনি আগেই সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন একথা ঠিক। সেইসাথে ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফেরা’ তথা আওয়ামী লীগে তা প্রত্যাবর্তনের সাথে দুটি বিষয় সামনে চলে এসেছে। এক. যেহেতু তিনি বিএনপিতে চেয়ারপারনের উপদেষ্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে ইতিপূর্বে ছিলেন, আরও আগে আওয়ামী লীগেও ‘ভাল’ পজিশনে ছিলেন, তাই আওয়ামী লীগে ‘ভাল’ পদ-পদবি লাভ করেই তার ‘ঘরে’ ফিরে আসার ব্যাপারে নেপথ্যে প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। দুই. মনজুর আলমের ইচ্ছা, তিনি সদলবলে আওয়ামী লীগে ফিরবেন। এখন শুধু এই দুটি বিষয় সম্পন্ন হওয়ার সময়ের অপেক্ষামাত্র। নেপথ্যে ভূমিকা পালন করছেন মনজুরের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক গুরু চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ নগর ও জেলার কয়েকজন সিনিয়র নেতা।
মনজুর আলম বিগত ২৮ এপ্রিল-২০১৫ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন সকালবেলা সাংবাদিকদের সামনে এসে বিএনপিকে গুডবাই জানিয়েছিলেন। এখন বিএনপির রাজনীতিতে আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সরাসরি বললেন, ‘না, আমি বিএনপিতে আর নেই। তাছাড়া ওরাই তো আমার নাম কেটে দিয়েছেন।’ প্রসঙ্গত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মূলত মনজুর আলমের ভদ্র-মার্জিত ব্যবহার ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র থাকাকালে তাকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর সর্বশেষ গত ৬ আগস্ট বিএনপির নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপরোক্ত পদ এমনকি অন্য কোনো পদে তাকে রাখা হয়নি। যদিও ১৫ মাস আগে (২৮ এপ্রিল, ১৫ইং) এম মনজুর আলম বিএনপির রাজনীতিকে গুডবাই জানিয়ে নিজে নিজেই সরে যান। তার বিএনপিতে যাওয়ার ব্যাপারে নেপথ্যে ভূমিকা পালন করেছিলেন বর্তমানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সরব আলোচনা
গত পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমানের ৪১তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে ব্যাপক কর্মসূচি পালনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম মনজুর আলম বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের রাজনীতির অঙ্গনে এমনকি রাজনীতি সচেতন মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রে ফিরে এসেছেন। নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলতুন্নেছা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনে’র ব্যানারে তিনি এবার বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গরিব-দুস্থদের মাঝে বস্ত্র ও খাবার বিতরণ করেন। এ উপলক্ষে নগরীর উত্তর কাট্টলী বাগানবাড়িতে খতমে কোরআন, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এম মনজুর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তারই ভাতিজা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. দিদারুল আলম। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য মনজুর আলম বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সিটি মেয়র থাকাকালেও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করেন। দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছেন ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলতুন্নেছা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’।
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা
একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং তার এহেন সমাজসেবামূলক কর্মকা-ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মনজুর এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক। আর সভাপতি হলেন নগর আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আগামী বছর থেকে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঢাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার মৃত্যুবার্ষিকী পালনের পরিকল্পনা রয়েছে তার। তিনি আরো জানান, আমাদের সমগ্র পরিবারটি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ও গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। মনজুর আলম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে তিন-তিনবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর (আগে কমিশনার) নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। সেইসাথে নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য। নিজের অবস্থান থেকে দলের জন্য কাজ করে গেছেন। বিশ্বস্ততার জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরী তাকে ১৮ বার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে বেছে নেন। অবশ্য পরে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তবে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে মাঝখানে অভিমান করেই বিএনপিতে যোগ দিয়ে সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি পরাস্ত করেন নিজের রাজনৈতিক গুরু মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। এখন আবার গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক সুগভীর হয়েছে। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যে একে অন্যের সাথে ‘বাজি’ ধরেন, খুনসুটি করেন এমনটিও শোনা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।