পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্পোর্টস ডেস্ক : বিদায় সব সময়ই বেদনার। তবে একটু ব্যতিক্রম বুঝি অলিম্পিক। এখানে একদিকে যেমন বিউগলে বাজে করুন বিদায়রাগিনী, ঠিক একই সাথে বেজে ওঠে পরের আসরের আগমনী বারতাও। এই যেমন ১৬ দিনের ক্রীড়াযজ্ঞ শেষে গতকাল ভোরে পর্দা নামলো রিও অলিম্পিকের। সেই সাথে টোকিওর মেয়রের কাছে ব্যাটন হস্তান্তরে আমন্ত্রণপত্রও এসে গেছে আগামী ২০২০ অলিম্পিকের।
এর মাঝখানে যে সময়টুকু পেরিয়েছে, তাতে উত্তেজনার পারদ মাপার নিক্তিও হার মেনেছে ট্র্যাকে উসাইন বোল্টের ক্ষিপ্রতা, পুলে মাইকেল ফেল্পসের ধূর্ততার কাছে। এই দুই কিংবদন্তিগাঁথার পাশাপাশি ছিলো পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুনের আগমনী বার্তাও। এবারের অলিম্পিকে ৩০৬ সেট পদকের জন্য লড়াই করেন ২০৭টি দেশের ১১ হাজার অ্যাথলেট। সবচেয়ে বেশি ৪৬টি স্বর্ণ পদক জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাথে ৩৭টি রুপা ও ৩৮টি ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে আমেরিকার পদকসংখ্যা ১২১টি। এই নিয়ে ১৬বার পদক তালিকার শীর্ষে থেকে অলিম্পিক শেষ করলো মার্কিনীরা। ব্যক্তি হিসেবেও স্বর্ণ জেতা শীর্ষ দশজনের প্রথম তিনজনই যুক্তরাষ্ট্রের। অবসর ভেঙে পুলে ফেরা ফেল্পস রিওতে ৫টি স্বর্ণ ও একটি রুপা জিতে আছেন সবার ওপরে। এই নিয়ে অলিম্পিকে ২৩টি স্বর্ণ পদক জমেছে পুলের রাজার ঝুলিতে। তবে আগামী বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে টানা তিন আসরের যে ক’টি ইভেন্টে নেমেছেন সবগুলোতেই স্বর্ণালী পদক পেয়ে ‘সর্বকালের সেরা’র খেতাবটা ঠিকই নিজের দাবির তলে রেখে দিয়েছেন ট্র্যাকের রাজা জ্যামাইকান বোল্ট। কে সেরা- এই নিয়ে তর্ক থাকবে, থাকুক না! একটু অবসরের রসদও তো চাই! তবে এই তর্কের একটু বাইরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসবেন তখন আরেকজন- মোহাম্মেদ ফারাহ। দূরপাল্লার দৌড়ে ডাবলের ডাবল জেতা এই যুক্তরাজ্যের সমতুল্য কি কোনদিন হবে?
বজ্রবিদ্যুৎ বা লাইটনিং বোল্টÑযে নামেই ডাকুন না কেন, বিশেষনটা কম হয় যায়। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক থেকে সেই যে শুরুটা করেছেন, তাতে অলিম্পিকে আতশবাজির উৎসবটাই মেনেছে হার তার পারফরমেন্সে। রাতের আকাশে বজ্রবিদ্যুৎ জ্বলেছে তার পারফরমেন্সে! স্প্রিন্টের রাজার খেতাবটা পেয়েছিলেন ২০০৮ বেইজিংয়ে। ২০১২ লন্ডনের পর ২০১৬ রিওÑ ১০০ মিটার, ২০০ মিটার এবং ৪*১০০ মিটার স্প্রিন্টের রাজা তিনিই। তিনটি অলিম্পিকে ৯টি ইভেন্টের ৯টিতেই স্বর্ণÑ বিস্ময়কর রেকর্ডে বড় দৈর্ঘের দৌড়ে ফিনল্যান্ডের কিংবদন্তী পাভো নুর্মি (১৯২০-১৯২৮ অলিম্পিকে ৯ স্বর্ণ ৩ রৌপ্য) এবং স্প্রিন্টে এক সময়ের মহারাজা যুক্তরাষ্ট্রের কার্ল লুইসকে (১৯৮৪-১৯৯৬, ৯ স্বর্ন ১ রৌপ্য) টপকে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে সেরা গ্রেটেস্ট জ্যামাইকান উসাইন বোল্ট। অলিম্পিকে দ্রুততম মানবের খেতাব ইতোপূর্বে উপর্যুপরি তিন আসরে ছিল না কারো, ৯.৮১ সেকেন্ডে দৌড়ে সেই ইতিহাস করেছেন রচনা রিওতে এসে। ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও ছিল না কারো এমন রেকর্ড, নুতন করে সেই গল্পটিও লিখেছেন তিনি ১৯.৭৮ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে এই দূরত্ব পার করে। দু’টি ইভেন্টে হ্যাটট্রিকে অমরত্ব পেয়ে অলিম্পিকে শেষ ইভেন্টে হ্যাটট্রিকের নেশা চেপে বসেছিল। হেভিওয়েট বক্সিংয়ে তিনবারের খেতাব জয়ী মোহাম্মদ আলী এবং তিন তিনবার বিশ্বকাপ ফুটবল ট্রফিতে হাত রাখা ফুটবল কিংবদন্তী পেলের পাশে গ্রেটেস্ট কাতারে উঠে আসতে ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিক ইভেন্টকে নিয়েছিলেন বেছে। ৪*১০০ মিটার রিলেতে জ্যামাইকা স্প্রিন্ট দলের এই নিউক্লিয়াস এবারো হাসিয়েছেন জ্যামাইকাকে, হেসেছেন নিজেও। ৩৭.২৭ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে জ্যামাইকা স্প্রিন্ট দলের ফিনিশিং মার্কে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই অমর কাব্য রচনা করেছেন বোল্ট! যেখানে রৌপ্যজয়ী জাপানের লেগেছে ৩৭.৬৪ সেকেন্ড। অলিম্পিকে তার সাফল্যে রচিত হলো ‘ট্রিপল ট্রিপল’ কাব্য।
২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে সুইমিং পুলে কি ঝড়ই না তুলেছিলেন মাইকেল ফেল্পস। ৮ টি ইভেন্টের সব ক’টিতে স্বর্ণ, যার মধ্যে ৭টিই আবার বিশ্বরেকর্ড! এমন বিস্ময় জন্ম দেয়ার টনিকটা পেয়েছিলেন এই মার্কিন সাঁতারু বেইজিং অলিম্পিককে সামনে রেখে সিঙ্গাপুরে ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে। সেই ট্রেনিং ক্যাম্পে সিঙ্গাপুরের ১৩ বছরের এক কিশোর সাঁতারু মাইকেল ফেল্পসকে দেখে তাকে আইডল মেনে ভবিষ্যতে এই কিংবদন্তীর মতো হতে চেয়েছেন, ফেল্পসের সঙ্গে ছবি তুলে তা ফ্রেমে লাগিয়ে টানিয়েছেন বাসায়। সেই ক্ষুদে সাঁতারুকে চিনতে হলো ফেল্পসকে নিজের অলিম্পিক ক্যারিয়ারে শেষ ইভেন্টে এসে! ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে গড়েছিলেন বিশ্বরেকর্ড, ৮ বছর পর সেই ইভেন্টেই সিঙ্গাপুরের উদীয়মান সাঁতারু জোসেফ স্কুলিংয়ের বিশ্বরেকর্ড দেখতে হলো ফেল্পসকে, তাও আবার পাশের লেন থেকে ঝাঁপ দেয়া সিঙ্গাপুর যুবকের কাছে হারতে হলো ফেল্পসকে। যে ছেলেটি কি না অলিম্পিক ইতিহাসে সিঙ্গাপুরের প্রথম সাঁতারু হিসেবে জিতেছেন স্বর্ণ।
অলিম্পিকে অমরত্ব পেয়েছেন আগেই, এথেন্স থেকে লন্ডনÑএই তিনটি আসরে ১৮ স্বর্ণপদক জিতে অলিম্পিকের সব রেকর্ড নিজের করে নেয়া মাইকেল ফেল্পস অবসর ভেঙ্গে রিও অলিম্পিকে এসে ৩১এ ফিরে পেয়েছেন তারুণ্য, জিতেছেন আরো ৪টি স্বর্ণ। ৪*১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল ইভেন্ট দিয়ে রিও’তে শুরু, জিতেছেন দলীয় ইভেন্ট ৪*২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ২০০ মিটার ইনডিভিজ্যুয়াল মিডলে এবং ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে ব্যক্তিগত স্বর্ণপদকও। তবে ৫ম ইভেন্ট এবং শেষ ইভেন্টে এসে থামলেন ফেল্পস, রৌপ্যতেই শেষ হলো তার অলিম্পিক ক্যারিয়ার। ২৭টি পদকের ২৩ টি স্বর্ণ, ৩টি রৌপ্য, ২ টি ব্রোঞ্জ অলিম্পিকে এমন গর্বিত ইতিহাসেও পরও যে শেষ ইভেন্টটিতে অতৃপ্তি সঙ্গী হলো তার।
গত সপ্তাহের ঘটনা। ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের লড়াই তখনও জমেনি। এক কিংবদন্তি উসাইন বোল্ট তখনও নামেননি নিজের দ্যুতি দেখাতে। ঠিক তখনই দূরপাল্লার দৌড়ে এক ঘটনা ঘটিয়ে এই ইবেন্টে শ্রেষ্ঠত্বের ঝা-া গাড়েন মোমামেদ ফারাহ। ১০ হাজার মিটারে নিজের টানা দ্বিতীয় স্বর্ণ পদকের জন্য নামলেন ট্র্যাকে। দৌড়ালেনও ঠিকঠাক মত। কিন্তু দৌড়ের একপর্যায়ে ট্র্যাকে এমনভাবে পড়ে গেলেন! অন্য কেউ হলে হয়তো সেখানেই দৌড় শেষ। কিন্তু ফারাহ পড়ে গেলেন, উঠে দাঁড়ালেন এবং ১০ হাজার মিটার দৌড়ের স্বর্ণ পদকটি জিতলেন। গ্রেটরা বুঝি এমনই হয়।
৪ বছর আগের লন্ডন অলিম্পিক থেকে এই ইভেন্টে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে পা রেখেছিলেন ব্রাজিলের রিওতে। তখনই জানান দিয়েছিলেন, কিংবদন্তী’ হতেই এসেছেন। সেই স্বপ্ন পূরণে বাকি ছিলো কেবল একটি সোনালী আভায় মোড়ানো পদক গলায় ঝোলানো। সেটিও করে ফেললেন গ্রেট ব্রিটেনের এই দৌড়বিদ। নিজেকে কিংবদন্তির পর্যায়ে আগেই নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ৫ হাজার মিটার দৌড়ের সোনালী পদকটাও নিজের করে নিয়ে কিংবদন্তি হওয়ার সব বন্দোবস্ত পাকা করে ফেললেন। পরপর দুবার, ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের পর এবারের রিও অলিম্পিকেও ১০ হাজারের পর ৫ হাজার মিটারের শ্রেষ্ঠত্ব নিজের করে নিয়ে ডাবল জয়ের ‘ডাবল’ কীর্তি গড়লেন তিনি। ১৯৭৬ সালের মন্ট্রিল অলিম্পিকে এমন কীর্তি শেষবারের মতো করেছিলেন ফিনল্যান্ডের ল্যাসে ভিরেন। অলিম্পিকের দূরপাল্লার দুই ইভেন্ট ১০ ও ৫ হাজারে স্বর্ণ জিতেছিলেন পরপর দুবার (১৯৭২ মিউনিখ ও ১৯৭৬ মন্ট্রিল)। ৪০ বছর পর এমন কীর্তির পুনরাবৃত্তি করলেন সোমালিয়ায় জন্ম নেওয়া ৩৩ বছর বয়সী ফারাহ। চলে গেলেন অলিম্পিকের সর্বকালের সেরারের দলে। শেষ ল্যাপের লড়াইয়ে কেউই ফারাহর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি। ফারাহ সময় নেন ১৩ মিনিট ৩.৩০ সেকেন্ড। ০.৬০ সেকেন্ড বেশি নিয়ে রুপা জিতেছেন কেনিয়ায় জন্ম নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পল কিপকেমই চেলিমো। ইথিওপিয়ার হাগোস গেবরিওয়েত ব্রোঞ্জ জিতেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।