Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঘোষণা ছাড়াই এবি ব্যাংক পরিচালকদের এক মাসে সাড়ে ১০ কোটি শেয়ার ধারণ

প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক ঃ কোনো ঘোষণা ছাড়াই ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক লিমিটেডের সাড়ে ১০ কোটি শেয়ার কোনো এক ভৌতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিনে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির স্পন্সর পরিচালকগণ। সিকিউরিটিজ আইনের বিধান অনুযায়ী কোম্পানির স্পন্সর পরিচালকগণ শেয়ার ক্রয় কিংবা বিক্রয়, এমনকি দান বা উপহার হিসেবে কাউকে ন্যূনতম কোনো পরিমাণের শেয়ার প্রদান করতে চাইলেও তা স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে হস্তান্তর করার বিধান রয়েছে। অথচ কোম্পানির কেউ এ ধরনের কোনো ঘোষণা ছাড়াই গত ৩১ মে’র পর থেকে ৩০ জুনের ভেতর মাত্র এক মাসের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির ১৫.৪৬ শতাংশ বা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫২টি শেয়ার কিনে নিয়েছেন সবার অলক্ষ্যে, অজান্তে।
এই পরিমাণ শেয়ার কেনার পরও কোম্পানির পরিচালকগণ বড় একটি আইনী বিধানের ব্যত্যয় ঘটানোর ব্যর্থতা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারেননি। অর্থাৎ টু সিসি আইন অনুযায়ী এরপরও তাদের ৩০ শতাংশের কোটা পূরণ হয়নি। অথচ পুরো ঘটনার ক্ষেত্রে তদারকি সংস্থা বিএসইসি ছিল একেবারে নিশ্চুপ। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে এ ধরনের আইন লঙ্ঘনকে অমার্জনীয় অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেছেন, মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণে বিএসইসি’র দুর্বলতার কারণেই কোম্পানিগুলো এ ধরনের বড় বড় অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি অবিলম্বে এবি ব্যাংকসহ যারা এখনো টু সিসি আইন পরিপালনে ব্যর্থ হচ্ছে এবং সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে চলেছে, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। আর বিএসইসি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়টি কোম্পানি কিংবা ডিএসই’র যেকোনো কারো ভুলও হতে পারে। যদি তেমনটি না হয়, তা হলে কেউ বিএসইসি’র নজরে আনলে এ সমস্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে বিধান মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েব সাইটে প্রদর্শিত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে এবি ব্যাংকের স্পন্সর ডিরেক্টরদের মোট শেয়ার ছিল ১৩.৯০ শতাংশ। ৩১ মে, ২০১৬ পর্যন্ত এই পরিমাণ শেয়ার অক্ষুণœ ছিল। ৩০ জুনের হিসাবে দেখানো হয়েছে স্পন্সর ডিরেক্টরদের শেয়ারের পরিমাণ হঠাৎ করে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯.৩৬ শতাংশ। এই এক মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৫৭.২০ শতাংশ থেকে ৩৭.৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ শুধু জুন মাসে প্রাতিষ্ঠানিকরা শেয়ার বিক্রি করেছে ১৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪১টি বা ১৯.৭০ শতাংশ।
একই সময় পাবলিকে চলে গেছে প্রায় ৩ কোটি শেয়ার। মাত্র এক মাসের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকদের সাড়ে ১০ কোটি শেয়ার স্পন্সর ডিরেক্টররা কিনে নিলেন অথচ গত ৬ মাসের মধ্যে এই কোম্পানির প্যাসিফিক ট্রেডার্স মনোনীত পরিচালক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ঘোষণা দিয়ে মাত্র ১০০০ শেয়ার কিনেছেন। তিনি এই এক হাজার শেয়ার কেনার জন্য ডিএসই’র ওয়েব সাইটে গত ৩ আগস্ট ঘোষণা দিয়েছেন এবং ৯ আগস্ট আরেকটি ঘোষণার মাধ্যমে তিনি তার ১০০০ শেয়ার ক্রয় কার্যক্রম শেষ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। যেখানে কোম্পানিটির ১০০০ শেয়ার ক্রয় সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে, সেখানে সাড়ে ১০ কোটি শেয়ার কিভাবে কি প্রক্রিয়ায় কোম্পানির পরিচালকদের নামে অন্তর্ভুক্ত হলো সেটাই বিনিয়োগকারীদের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
বিষয়টি যে ভুলের মধ্যে নেই তা নিশ্চিত করেছে ডিএসই’র আরএন্ডডি বিভাগ। তারা বলেছে, এবি ব্যাংক থেকে যে তথ্য তাদেরকে দেয়া হয়েছে তারা সেটাই হবহু ওয়েব সাইটে সংযোজন করেছে। আর বিষয়টি জানার জন্য এবি ব্যাংকের ওয়েব সাইটে দেয়া ফোন নম্বরে (৯৫৬০৩১২) কথা বলতে চাইলে কেউ এই প্রশ্নের জবাব দিতে চায়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে কারো সাথেই কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আর এই ব্যাংকটির শেয়ার নিয়ে এই অনিয়মের খবর শুনে ঐক্য পরিষদ নেতা মিজান চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, একে তো কোম্পানিটি দীর্ঘ দিন ধরে টু সিসি আইন পরিপালন না করে আদালত অবমাননা করেছেন, দ্বিতীয়ত কোনো ঘোষণা ছাড়া বিপুল পরিমাণ শেয়ার স্পন্সর ডিরেক্টরদের নামে অন্তর্ভুক্ত করে সিকিউরিটজ আইন লঙ্ঘন করেছে। উভয়টির জন্যই তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। তিনি বিএসইসিকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক দোষীদের দ্রæত শাস্তির দাবী জানান। তিনি আরো বলেন, একটি নিষ্ক্রিয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার কারণেই আমাদের দেশে এ ধরনের কোম্পানিগুলো এতবড় জালিয়াতি করার সাহস পাচ্ছে। আগে থেকেই আইন বাস্তবায়নের রেওয়াজ থাকলে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘোষণা ছাড়াই এবি ব্যাংক পরিচালকদের এক মাসে সাড়ে ১০ কোটি শেয়ার ধারণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ