Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্প পারেননি বাইডেন পারবেন?

ইসিতে জয়ী ঘোষিত -রাশিয়ার অভিনন্দন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রশাসনও সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন জো বাইডেন। সোমবার মার্কিন ইলেকটোরাল কলেজও আনুষ্ঠানিক ভাবে তার জয় ঘোষণা করলো। এরপরেই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আপাতত কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত করাই নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এরপর তাকে মার্কিন সাম্রাজ্যের পতন বন্ধ করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। অন্যথায় বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্রটি নিজের ছায়ায় পরিণত হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুই দশক পরে যেমনটি হয়েছিল ব্রিটেনের ক্ষেত্রে।

সোমবার মার্কিন ইলেকটোরাল কলেজ আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেয়, বাইডেনই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। তবে ইলেকটোরাল কলেজ জানালেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এ দিনও কারচুপির অভিযোগ করেছেন। তার বক্তব্য, মিশিগানে যে কারচুপি হয়েছে তার অপ্রকাশিত রিপোর্ট তার কাছে আছে। যদিও সেই রিপোর্ট তিনি প্রকাশ করেননি। ট্রাম্পের টুইটের সত্যতা পরীক্ষা করা যায়নি বলে জানিয়ে দিয়েছে টুইটার। জয় ঘোষণার পর জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাইডেন বলেছেন, ‘এই জয় প্রত্যেক ভোটদাতার ও মার্কিন গণতান্ত্রিক ভোট ব্যবস্থার জয়।’ পাশাপাশি ট্রাম্পকেও এক হাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন প্রেসিডেন্ট হয়েও ট্রাম্প যে ভাবে মানুষের মতামতকে অস্বীকার করছেন, ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলছেন, তা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম।’ আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার কথা বাইডেনের। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ট্রাম্প সেই অনুষ্ঠানে থাকবেন না। ওই দিনই ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে পারেন তিনি।

এ দিকে, গত ৩ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার তিনদিন পরে মার্কিন গণমাধ্যম বাইডেনকে বিজয়ীর হিসাবে ষোষণা করার পরপরই তাকে অভিনন্দন জানান বিশ্বনেতারা। কিন্তু ক্রেমলিন জানায়, তারা মার্কিন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করবে। যদিও ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিনন্দন জানিয়েছিলো ক্রেমলিন। গতকাল ক্রেমলিন থেকে বাইডেনকে দেয়া শুভেচ্ছা বার্তায় বলা হয়, ‘পুতিন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সাফল্য কামনা করছেন। আমরা আশা করছি, ভিন্নতা সত্তে¡ও দুই নেতা বিশ্বের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে একযোগে কাজ করবেন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ঐকবদ্ধভাবে কাজ করবে।’ পুতিন বলেন, ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধার জায়গা থেকে আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত। আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি।’

বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনীতি হিসাবে প্রায় আট দশক ধরে আধিপত্য বজায় রাখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সূর্য এখন অস্তমিত হওয়ার পথে। মুদ্রার মানকে সামঞ্জস্য করাসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে ২০১৬ সাল থেকেই চীনের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে শুরু করেছে। এটি এখন সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে, আগামী এক দশকের মধ্যেই তারা সবদিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। এক দশক আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশাল উদ্দীপনা কর্মসূচি গ্রহণ করে বিশ্ব অর্থনীতিকে মহা মন্দা থেকে বের করে আনার পর থেকে, তার দেশ আবারও বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত। কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিশ্লেষণ অনুসারে, বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক দেশগুলোর মধ্যে চলতি বছর একমাত্র চীনের অর্থনীতিই সম্ভবত উত্থিত হবে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তার প্রভাব বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হারানোর পথে রয়েছে। কিন্তু তা ঠেকানোর জন্য তাদের করার মতো তেমন কিছুই নেই। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ স্তরে উঠে স্বাভাবিকভাবেই ধীর হয়ে গিয়েছে, যেখানে চীনের ১৪০ কোটি মানুষ আরও ধনী হয়ে উঠছে। চীনের সাথে টিকে থাকার জন্য আমেরিকানরা এখন যা করতে পারে তা হচ্ছে, প্রথমেই ভাগ্যকে মেনে নিয়ে তারা তাদের মিত্রদেরকে আরও বেশি সুবিধার্থে ব্যবহার করতে পারে। এমন সহাবস্থানই বাইডেনের লক্ষ্য হওয়া উচিত এবং আমেরিকার সেরা সুযোগটি হ’ল তার এশীয় প্রতিদ্ব›দ্বীকে তাদের নিজের খেলায় পরাজিত করা।

গত মাসে, চীন ‘আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব’ (আরসিইপি) শীর্ষক একটি বাণিজ্য জোট গঠন করেছে যেখানে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ মোট ১৫টি দেশ সাক্ষর করেছে। এটি ২৩০ কোটি মানুষ ও বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। তুলনায়, কানাডা ও মেক্সিকোর সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি ২৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। আরসিইপিকে চীনের জন্য জয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্ব থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। সেটি ছিল এমন একটি বাণিজ্য চুক্তি যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সেই দেশগুলোকে ধরে রাখতে পারত, যাদেরকে এখন চীন আরসিইপির অধীনে অংশীদার করেছে এবং করতে পারে। তবে কানাডা ও ভারতের মতো দেশের সাথে চীনের সম্পর্কের অবনতি এবং ক্ষুদ্র দেশগুলোর প্রতি তাদের অবহেলা বাইডেনের জন্য সুযোগ হিসাবে দেখা দিতে পারে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণতন্ত্রগুলোকে একটি শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে সমবেত করে সবাইকে এক কাতারে আনতে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, সেটি একটি ভাল সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। চলতি বছর বাইডেন তার পররাষ্ট্র পরিকল্পনায় উল্লেখ করেছেন যে, ‘চীন অর্ধেক বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিকে উপেক্ষা করার সামর্থ্য রাখে না।’

বাইডেন এই ব্যপারে নিঃসন্দেহে সঠিক। ট্রাম্প যে ভুল করেছিলেন তা হলো, তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে, মার্কিন অর্থনীতির ওজন ব্যবহার তিনি চীনকে পদানত করতে পারবেন। তবে চীন এখন সে তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আমেরিকার জন্য এখন সাহায্য প্রয়োজন। যদিও তারা কারও কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ায় অভ্যস্ত নয়, তবে বিশ্বে প্রভাব বজায় রাখার স্বার্থে মূল্য হিসাবে তাদেরকে সেই গর্ব ত্যাগ করতে হবে। সূত্র : এনবিসি নিউজ, রয়টার্স, এপি, সিএনএন।



 

Show all comments
  • ইউসুফ বিন ইকবাল ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫১ এএম says : 0
    আজিব আশ্চর্য এক নির্বাচন। আমি তো মনে করেছিলাম কয়েক যুগ ধরেই ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Aminul Islam Amin ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫১ এএম says : 0
    জো বাইডেন বিজয়ী হতে হতে আগামী নির্বাচনে এসে যাচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Sajjad Hossain ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫২ এএম says : 0
    চুড়ান্ত বিজয়ী হতে এতদিন সময়। বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিন ভোটের আগের রাতেই বিজয়ী।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabeya Boshory ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫২ এএম says : 0
    আহারে ট্রাম্প
    Total Reply(0) Reply
  • Asif Ahmed Srabon ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৩ এএম says : 0
    একজন দাম্ভিক শাসকের পতন ঘটবে, আলহামদুলিল্লাহ.!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ