Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মরার আগে মরতে রাজি নই : শেখ হাসিনা

প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৭ পিএম, ২১ আগস্ট, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মরার আগে তিনি মরতে রাজি নন। তিনি বলেন, আমি কখনও মৃত্যুকে ভয় করি না। কারও কাছে মাথা নত করি না উপরে আল্লাহ ছাড়া। একমাত্র আল্লাহর কাছেই আমি মাথা নত করি। কারণ আমি জাতির পিতার কন্যা, এটা আমি সব সময় মনে রাখি। জন্মালে মৃত্যু হবে, তাই মরার আগে মরতে আমি রাজি না। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলাই আমার প্রতিজ্ঞা। এজন্য প্রত্যেক মুজিব সৈনিককে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা স্মরণে গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর আগে ২১ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এত বড় একটি ঘটনা। যেখানে বিশ্ব বিবেক নাড়া দিয়েছে। বিএনপি নেত্রী উল্টো আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে, ‘আমাকে একটা নিন্দা প্রস্তাব করতে দেয়া হয়নি’Ñ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আমার প্রশ্ন, আমরা কি সেদিন সেখানে সুইসাইড করতে গিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট হামলার আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, আমি বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারব না। গ্রেনেড হামলার পর প্রকাশ হতে শুরু করে, কেন খালেদা জিয়া এ কথা বলেছিলেন। খালেদার পুত্র তারেক রহমান ধানমন্ডি ৫ নম্বরে তার শ্বশুরবাড়িতে একটানা দশ মাস ছিল; ১ আগস্ট সেনানিবাসের বাসায় ফিরে যায়। তারেক রহমান কেন ছিল সেখানে? ষড়যন্ত্রের সুবিধায়? তাদের প্রতিটি বক্তব্যে আভাস ছিল আমাকে হত্যার।
তিনি আরও বলেন, ওইদিন ভয়াবহ এ হামলায় আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। অজ্ঞাত মারা গেছে দু’জন। জানিনা তারা কারা। হামলাকারীও হতে পারে। এতবড় একটি ঘটনা ঘটল, পুলিশ ছিল নীরব। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ, আহত মানুষের আর্তনাদ। অবাক লাগে, এত বড় ঘটনার পরও পুলিশের কোনও তৎপরতা ছিল না। তারা আহতদের উদ্ধার না করে তৎকালীন সরকারের নির্দেশে টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। আমি জানি না, পৃথিবীতে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা।’
তিনি বলেন, হামলাকারীরা যাতে নিরাপদে চলে যেতে পারে, সে জন্য টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। একটি ঘটনা ঘটলে সরকার আলামত সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে। কিন্তু তারা আলামত নষ্ট করেছে। কোথাকার কোন গ্রামের একজনকে ধরে জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট হাসপাতালগুলোতে বিএনপিপন্থী একজন ডাক্তারকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা সন্ত্রাস করে, গ্রেনেড হামলা করে, তাদের স্থান যেন বাংলার মাটিতে না হয়। এ বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কারণ, তারা কখনো বাংলাদেশের মানুষকে কল্যাণ দিতে পারে না, অমঙ্গল ছাড়া। তারা তো স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, সেখানেই তারা বারবার আঘাত আনে। ২১ আগস্টের মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে সেটাই আমরা চাই।
২১ আগস্টের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম তিনটা গ্রেনেড মারার পর, কয়েক সেকেন্ড সময়; এরপর আবার গ্রেনেড। প্রকাশ্যে দিবালোকে কোনো জনসভায় এভাবে গ্রেনেড মেরে মানুষ হত্যা করা, আমি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা তখন। ওই ট্রাকে আমাদের সব নেতা-কর্মী। ওই র‌্যালিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমবেত। একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করেছে। জানি না আমার কী ভাগ্য, গ্রেনেড ট্রাকের ভেতরেই পড়ার কথা, কিন্তু সেখানে না পড়ে, ডালায় লেগে পাশে পড়ে যায়। আমাদের সাবেক মেয়র হানিফসহ ওখানে যারা নেতা-কর্মী ছিল, তারা আমাকে ঘিরে ধরে। আমি টের পাচ্ছি সব স্পিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায় এসে লাগছে। আমার গায়ে গরম রক্ত বেয়ে পড়ছে। একটার পর একটা গ্রেনেড মেরেছে। ১৩টি গ্রেনেড তারা ছুড়েছিল। তার মধ্যে প্রায় মধ্যে ১১ থেকে ১২টি ফুটেছিল। ওই অবস্থা যখন চলে, মনে হচ্ছিল কেয়ামত এসে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেনেড হামলায় আমরা আইভি রহমানকে হারাই। অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়েছি। অনেকে রক্তাক্ত হয়েছে। সেদিন চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ দেখা যায়। এ সময় গ্রেনেডের ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছিল না। চলে যাওয়ার সময় আমার গাড়িতে গুলিও করা হয়েছিল। তবে বুলেট প্রুপ গাড়ি হওয়ায় গুলি লাগেনি। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলার মাটিতে যে দিন থেকে পা রেখেছি সেদিন থেকেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাকে। তবে আমি কখনো মৃত্যুভীত ছিলাম না। আমি কখনো মৃত্যুকে ভয় পাইনি। কোটালীপাড়ায়ও আমাকে মেরে ফেলতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যিস এক চা দোকানির কারণে এ বোমা থেকে বেঁচে যাই। আল্লাহ কিছু মানুষকে কিছু কাজ দিয়ে পাঠান। তা না হলে আমি রক্ষা পেতাম না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট সমগ্র দেশে একই সঙ্গে আধা ঘণ্টায় পাঁচশ’ স্থানে বোমা হামলা চালানো হয়। দেশকে ধ্বংস করতে কিনা করেছে তারা। ওয়ান-এলেভেনের প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৭ সালে ইমারজেন্সি সরকার আমাকে গ্রেফতার করেছে। সমস্ত আঘাত আসে আমার ওপরে। শুধু মামলা নয়, একটার পর একটা ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ দেশের অনেকে প্রতিবাদ করেছে। ফলে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধওে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দারিদ্র্য বিমোচনে বহুমুখী কর্যক্রম নিয়েছি। দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দূর করতে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছি।
গোটা বিশ্বের অস্থিরতার কথা উল্লেখ তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমেরিকার মতো জায়গার মসজিদের ইমাম নামাজ পড়ে ফিরছেন, তখন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা সারা বিশ্বে ঘটে যাচ্ছে। জনগণের শক্তি হচ্ছে বড় শক্তি, সমাজের সব স্তরের মানুষ যদি রুখে দাঁড়ায়, তবে এই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের ঘটনা দেশকে মুক্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।



 

Show all comments
  • Harun ২২ আগস্ট, ২০১৬, ২:১০ পিএম says : 0
    Go Ahead PM . We all are with you
    Total Reply(0) Reply
  • রেজা ২২ আগস্ট, ২০১৬, ৩:৩৪ পিএম says : 0
    প্রত্যেক মুজিব সৈনিককে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মরার আগে মরতে রাজি নই : শেখ হাসিনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ