Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মার এপারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে চরম অনিহা বকেয়া ৩৫৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর আওতাধীন পদ্মার এপারের একুশ জেলায় বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিমাণ ৩৫৫ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৩ কোটি ৬৩ লাখ ৭০ হাজার, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০৫ কোটি ৭ লাখ ৭৯ হাজার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২২৭ কোটি ১৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা পাওয়া রয়েছে। বিগত অর্থ বছরের শেষ মাস অর্থাৎ গত জুন পর্যন্ত এমন বকেয়ার হিসাব রয়েছে ওজোপাডিকোর সংশ্লিষ্ট বিভাগে। গড় হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎবিল পরিশোধের চরম অনিহা লক্ষ্যণীয়।
সূত্রটি বলছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাওনার পরিমাণ ৪ কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাওনার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনার পরিমাণ ৪ কোটি ৭ লাখ ২২ হাজার টাকা।
সরকারি অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দুই কোটি ৩৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দুই কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দুই কোটি ছয় লাখ ৬৪ হাজার টাকা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এক কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।
এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী পাওনা রয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোর কাছে। এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিদ্যুৎ বিল পাওনার পরিমাণ ৮৯ কোটি ৫১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাওনার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ বেসরকারি পাটকলগুলো।
সূত্রটি জানায়, বছরে চারবার কোম্পানীর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলে হিসাব বিবরণী পাঠানো হয়। ওই হিসাব বিবরণীতে যেসব সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে সেগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতাও কামনা করা হয়। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে যে হারে বিদ্যুৎ বিল আদায় হয় তার চেয়ে মন্থর গতি লক্ষ্য করা যায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন কিস্তি করে অনেক আগের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দেয়া শুরু করে। কিন্তু বিলের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও ৩৪টির মধ্যে অধিকাংশ পৌরসভার।
এ প্রসঙ্গে একটি সূত্র বলছে, সরাসরি জনগণের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোর বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য সেটি হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওজোপাডিকো অনেক সময় কঠোর হতে পারে না। কেননা বিদ্যুৎ বিল আদায়ের প্রধান হাতিয়ারই হলো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে অনেক সময় জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে রাস্তাঘাট যেমন অন্ধকার হয়ে পড়তে পারে তেমনি পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেটি জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বিধায় এমন কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে বরাবরই বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওজোপাডিকো পিছিয়ে থাকছে। আর এর ফলেই এসব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় কোম্পানীর কার্যক্রম বিশেষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে ওজোপাডিকোর উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) রবীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, কোম্পানীকে গতিশীল রাখতে বিদ্যুৎ বিল সবসময়ই আপ টু ডেট রাখা উচিত। ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ শফিক উদ্দিন বলেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল আদায়ের জন্য ওজোপাডিকো বরাবরই মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়ে আসছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ের ক্ষেত্রে যে কোন প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করারও নির্দেশনা রয়েছে তাদের ওপর। কিন্তু তারা এমন কঠোর সিদ্ধান্তের দিকে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বকেয়া বিল আদায়ের চেষ্টা করছেন। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করলেও অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মার এপারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে চরম অনিহা বকেয়া ৩৫৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ