পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ইতিহাসের ভয়াবহতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১২তম বার্ষিকী আজ রোববার। বারো বছর আগের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য এই ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে গেলেও অপর ২৪ জন নিহত হন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের শান্তি সমাবেশে বিকালে একটি ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চে যখন শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন আকস্মিক এই হামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান এবং আরও ২৩ জন নেতাকর্মী নিহত হন।
এছাড়াও এই হামলায় আরও ৪শ’ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গুতে পরিণত হয়েছেন। তাদের অনেকেই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দেশের বৃহৎ এই রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে এ হামলা করা হয়েছিল বলে পরবর্তী সময়ে অভিযোগ করেছিলেন দলটির নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আকস্মিক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃংখলা, ভয়াবহ মৃত্যু ও দিনের আলো মুছে গিয়ে এক ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ অন্যান্য নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে এক মানব বলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে তাকে গ্রেনেড ও গুলির আঘাত থেকে রক্ষা করেন। গ্রেনেডের আঘাত থেকে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণ শক্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সেদিন মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকে এখনও বিশ্বাসই করতে পারেন না আসলে তারা জীবিত আছেন কি-না। মৃত্যুর এতো কাছাকাছি গিয়ে আবার ফিরে আসায় হয়তো তারা নতুন জীবন পেয়েছেনÑ কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তাদের বহন করে যেতে হবে সেই দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ানো স্মৃতিকে। হঠাৎ করে গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার সেই ঘটনাকে।
এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেনÑ আইভি রহমান, ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।
মারাত্মক আহতরা হলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, সাহারা খাতুন, মরহুম মোহাম্মদ হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেখ দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।
অভিযোগ রয়েছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এই হত্যাকা-ের প্রতিকারের ব্যাপারে তৎকালীন বিএনপি সরকার নিলিপ্ত ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় এ হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে সরকারের কর্মকর্তারা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত পাঁচটি তাজা গ্রেনেড ধ্বংস করে দিয়ে প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টাও করা হয়েছিল।
হামলার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এতে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরে, একজন ছাত্র, একজন আওয়ামী লীগের কর্মীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ পরবর্তী তদন্তে তাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনুকূল পরিস্থিতিতে সরকার এ হামলার পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং সাড়ে তিন বছর পর বিলম্বিত পুলিশ চার্জশিট নথিভুক্ত করা হয়। অথচ বিএনপির কতিপয় সংসদ সদস্য এই জঘন্য হামলাকে আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত হামলা বলে দাবি করেছিলেন।
পুনরায় তদন্তে পুলিশ এই হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ জনকে চিহ্নিত করে।
অভিযুক্তদের মধ্যে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসিতে ইতোমধ্যেই মৃত্যুদ- সম্পন্ন হওয়া সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদও ছিলেন।
অন্যদিকে, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান কারাগারে রয়েছেন। এই মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী এবং সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা-সিআইডির সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডির সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছেন।
পলাতক আসামিদের মধ্যে তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ব্যাংককে, হানিফ এন্টারপাইজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ কলকাতায়, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালীন ও তার ভাই মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের একটি কারগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়।
জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও মওলানা লিটন ওরফ জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ডিএমপির তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ও ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ওবায়দুর রহমান এবং খান সৈয়দ হাসানও বিদেশে অবস্থান করছেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব অভিযুক্ত হারিছ চৌধুরীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পলাকতকদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন ও বাবু কারান্তরীণ উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই।
বেশ কয়েকটি বিদেশি মিশন যেমন ব্রিটিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, ইউএস ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং ইন্টারপোল বাংলাদেশী তদন্তকারী টিমকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলেও এসব প্রতিষ্ঠানকে তৎকালীন সরকার সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার এখন শেষ পর্যায়ে। দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই মামলার রায় তিন মাসের মধ্যে জাতি দেখতে পাবে বলে তিনি আশা করেন।
তিনি বলেন, দুইজন তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) জেরা সম্পন্ন হলেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেয়া হবে এবং এজন্য প্রয়োজন দুই থেকে তিন মাস। ৪৯১ জনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ২২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্পন্ন হওয়ায় তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিবসটি উপলপক্ষে আজ বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, সংসদ সদস্য, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসময় উপস্থিত থাকবেন।
এই সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দও এসব কর্মসূচিতে যোগ দিবেন।
পরে একই স্থানে শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।