পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিক্রির হার বৃদ্ধি দেখে সুদের হার কমানোর পাঁয়তারা
মোবায়েদুর রহমান : অর্থনীতির কয়েকটি সেক্টরে অগ্রগতির আলামত পরিস্ফুট হয়েছে। সঞ্চয় তার অন্যতম। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত অর্থবছরে সরকারের সঞ্চয়পত্র যে পরিমাণে বিক্রি হয়েছে সেটি স্বাধীনতার পর এই ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার। অথচ সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির টার্গেট দিয়েছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। তারও আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিক্রির পরিমাণ ১১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। তারও আগের বছর অর্থাৎ ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিক্রির পরিমাণ মাত্র ৭৭২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত চার বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ গুণ। অর্থাৎ ৭৭২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা থেকে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
মেয়াদি আমানতের কম সুদ
সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ এমন হু হু করে বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী বা আমলাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। তারা সকলে এক বাক্যে বলেন যে, মেয়াদি আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। সর্বোচ্চ ৫ বছরমেয়াদি আমানতে সুদ দেওয়া হয় মাত্র ৭ শতাংশ। আর ৩ বছর মেয়াদে ৫ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদ অনেকের জন্যই দীর্ঘ সময়। তাই অধিকাংশ আমানতকারী স্বল্প মেয়াদে আমানত জমা রাখার পক্ষপাতী। সে ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে তারা সুদ পান মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ সঞ্চয়পত্র কিনলে তারা সুদ পাচ্ছেন ১১ শতাংশ। অর্থাৎ মেয়াদি আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের তারতম্য কম করে হলেও ৫ শতাংশ এবং ঊর্ধ্বে ৬ শতাংশ। এই প্রতিনিধির এক ঘনিষ্ঠজন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ২১ দিন আগে বিপুল পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। যে ব্যাংক থেকে তিনি এটি কিনেছেন সেই ব্যাংক থেকে তাকে দেওয়া হয়েছে ১৩ শতাংশ সুদ। এখন যারা ১১ শতাংশ সুদ পাচ্ছেন তারা মেয়াদি আমানতের টাকা উঠিয়ে নিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। এর একটি নেতিবাচক দিক হলো এই যে এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমানত প্রায় খালি হয়ে যাবে।
এখনো যারা ফিক্সড ডিপোজিট মেইনটেইন করছেন তারা একটিমাত্র আকর্ষণেই করছেন। আর সেটি হলো এসওডির সুবিধা। এই সুবিধা মোতাবেক যত টাকা মেয়াদি আমানতে গচ্ছিত থাকে তার সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ পাওয়া যায়। কিন্তু সেই ঋণের সুদ আবার ১১ শতাংশ বা তার বেশি। অনেক মোয়াক্কেল একদিকে ১১ শতাংশ সুদে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন, অন্যদিকে ওই ১১ শতাংশ সুদের টাকা দিয়ে ফিক্সড ডিপোজিটের এসওডি লোনের ১১ শতাংশ সুদ পরিশোধ করেন। এ ক্ষেত্রে ওই মোয়াক্কেল এসওডির বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করেন খুব কম অ্যামাউন্টের। ফলে ফিক্সড ডিপোজিটের (স্থায়ী আমানত) এসওডির সুদের হার পরিশোধ করেও কিছু টাকা সঞ্চয়ীর হাতে থাকে।
সঞ্চয়পত্রে সুদের হার হ্রাস কোনো সমাধান নয়
এই অবস্থা দেখে কোনো কোনো ব্যবসায়ী মন্তব্য করেছেন যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশ হ্রাস করা উচিত। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীদের মতে এটি কোনো সমাধান নয়। কারণ যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন তারা দেশের উচ্চবিত্ত বা ধনাঢ্য শ্রেণীর মানুষ নন। এদের প্রধান অংশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী। তারা দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর চাকরি করে যে যৎসামান্য সঞ্চয় করেন, সেটি অতীতে এফডিআর বা স্থায়ী আমানতে রাখতেন। সেখান থেকে যে সুদ পেতেন সেই সুদের টাকা দিয়ে অবসর জীবনে গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু স্থায়ী আমানতের সুদের হার দারুণভাবে পড়ে যাওয়ার পর এরা সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এছাড়া ছোট ব্যবসায়ী এমনকি যারা পার্ট টাইম চাকরি করেন তারাও দুটো পয়সার মুখ দেখার জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন।
ধনিক গোষ্ঠীর আবদার
উল্লেখ করা যেতে পারে যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাস করার জন্য বারবার আবদার করছেন দেশের উচ্চবিত্ত তথা ধনাঢ্য শ্রেণী। এদের প্রায় সকলেই ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। এরা মনে করেন যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখনো বেশি থাকায় লেন্ডিং রেট অর্থাৎ ব্যাংকসমূহ বেসরকারি খাতে যে ঋণ দেয় তার সুদের হার সিঙ্গল ডিজিটে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এখনো সেটি ডাবল ডিজিটে রয়েছে। তারা মনে করেন যে আমানতের মেয়াদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমালে লেন্ডিং রেট ১০ শতাংশের নিচে নামানো সম্ভব হবে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে বড়লোক ব্যবসায়ীদের এই কথা শুনলে হয়তো হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী লাভবান হবেন। তারা হয়তো এ কথাও বলবেন যে এর ফলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে।
অতীতে লাভ হয়নি
তবে অতীতে কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্র এবং স্থায়ী আমানতের সুদের হার কমানো হয়েছে। কিন্তু তাতে বিনিয়োগ বা শিল্পায়নের কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। মাঝখানে লাখ লাখ ক্ষুদ্র সঞ্চায়ীর পেটে লাথি পড়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন বনাম
সামাজিক ন্যায়বিচার
পুজিঁবাদী অর্থনীতিতে বিনিয়োগ এবং মুনাফা প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তাই সেটি হয় লপ সাইডেড ডেভেলপমেন্ট। কিন্তু কল্যাণধর্মী অর্থনীতিতে উন্নয়নের পাশাপাশি এটি নিশ্চিত করতে হয় যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। সমাজের একটি শ্রেণীকে ধনী বানানোর জন্য গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে যেন আরও গরিব বানানো না হয়। এখন যদি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আরো কমানো হয় তাহলে গরিব ও মধ্যবিত্ত আরো গরিব হবে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।