Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলোর মুখ দেখবে তো?

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আড়াই মাস পার
হাসান সোহেল : বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজকোষ লুটের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। প্রতিবেদনটি প্রকাশের বিষয়ে একাধিকবার জনসম্মুখে অর্থমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কোন এক নেপথ্য শক্তির কারণে আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও ড. ফরাসউদ্দিনের দেয়া রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলারও তেমন অগ্রগতি নেই। ফলে প্রতিবেদনটি আদৌ প্রকাশ করা হবে কি না সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক ও অর্থনীতিবিদের ধারণা, এভাবেই হয়তো সময় চলে যাবে। রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখবে না। দেশের মানুষ জানতে পারবে না ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮শ’ কোটি টাকা চুরির কাহিনী। তাদের মতে, এ রিপোর্ট প্রকাশ না হলে দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কষ্টকর হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চাইলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের আপত্তিতে এখন রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীও কথা বলতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। রাজকোষ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির পর ঘটনা ৪০ দিন গোপন রাখার পর পদত্যাগ করা সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। অনিয়মের কারণে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে গ্রেফতার করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
এদিকে ওই প্রতিবেদনটি সুইফট থেকে অফিসিয়ালি অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে চাওয়া হয়েছে। একই প্রতিবেদন ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) পক্ষ থেকেও চাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় প্রতিবেদন চেয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটি। এর আগে একই বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতি শওকত আলীর সভাপতিত্বে বৈঠক বলা হয়, আগামী বৈঠকের এজেন্ডায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়টি রাখা হবে। বৈঠকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য বলা হবে। আর তাই প্রতিবেদন নিয়ে বিপাকে রয়েছেন অর্থমন্ত্রীও। ইতোমধ্যে একাধিকবার রিপোর্ট প্রকাশের সময় দিয়েছেন কিন্তু কথা রাখতে পারেননি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বেশ অ্যাকশন ও পর্যবেক্ষণের বিষয় আছে। এর আগে রিপোর্ট বেরিয়ে গেলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই একটু দেরি হচ্ছে। তবে এ প্রতিবেদন অবশ্যই প্রকাশ করা হবে। আগের ধারাবাহিকতায় চলতি আগস্ট কিংবা আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার কথা জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজকোষ লুট হয় এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি। ২৯ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করে ফিলিপাইনের পত্রিকা দৈনিক এনকোয়ার। পরে ৭ মার্চ দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিষয়টি প্রকাশ পেলে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ ও ঊর্ধ্বতনরা প্রথমে পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। গোপনে দুই কর্মকর্তাকে পাঠায় ফিলিপাইনে। তারা দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে ঢাকায় ফেরেন শূন্য হাতে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও অনেকে কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল এ ঘটনা প্রকাশ পেলে চাকরি চলে যাবে। দেশের গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসায় যা পরবর্তীতে দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরে রিজার্ভ লুটের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সুইফট সিস্টেমকে দায়ী করে। রিজার্ভ চুরির দায় নিয়ে ১৫ মার্চ গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। ওই দিনই ঘটনা তদন্তে সরকার সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি ২০ এপ্রিল অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট জমা দেয়। পরে ৩০ মে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে কমিটি। সে সময় ফরাসউদ্দিন বলেছিলেন, এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় রয়েছে। একই সঙ্গে কার দায় কতটুকু আছে তা আইনের মাধ্যমেই ঠিক করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, শিগগিরই এই তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। পরে বলেছিলেন, ঈদুল ফিতরের পর প্রকাশ করা হবে। এরপর একাধিকবার অর্থমন্ত্রী জনসম্মুখে এভাবে প্রতিশ্রুতি দেন।
সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার গাফিলতিকে শনাক্ত করা হয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তাকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার কথাও সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সেই মামলাটিও এখন হচ্ছে না। এদিকে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, প্রতিবেদনে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়, তবে রিজাল ব্যাংককে কেন দুষছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ঘটনায় ফিলিপাইনের আদালতে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যদি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়, তবে সে ক্ষেত্রে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংককে দায়ী করে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি প্রকাশ কেন করা হচ্ছে না এ বিষয়ে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সঙ্গে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সূত্র জানায়, সরকার আপাতত রিপোর্টটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রিপোর্টটি চাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সরকার। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে চুরি হওয়া রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গেছে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে। সেখান থেকে বেআইনিভাবে ওই অর্থ তুলে নেয়া হয়। ফিলিপাইনের সিনেটের ব্লু-রিবন কমিটি বিষয়টি নিয়ে ৭টি শুনানি করেছে। দেশটির এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) ওই অর্থের বিষয়ে তৎপর। ইতোমধ্যে রিজার্ভের অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে। যদিও ওই দিনই তিনি জামিনে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এখন বিষয়টি দেশটির আদালতে বিচারাধীন। কয়েকদিন আগে আদালতে আরসিবিসির প্রধান আইনজীবী মারিয়া সেসিলিয়া ইস্তাভিলো রিজার্ভ চুরি নিয়ে আরসিবির দায় কতটুকু আছে তা দেখতে বাংলাদেশ সরকারের তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, এ মুহূর্তে রিজার্ভ লুটের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে চাচ্ছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে অর্থ মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর যেমন এখন পর্যন্ত মেলেনি, ঠিক তেমনি সুশীলসমাজ মনে করছে, আর্থিক দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় দেয়া হলে তারা ফের আরো বড় ধরনের কেলেঙ্কারি করবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি পুরো আর্থিক খাতকে ধ্বংস করে দেবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ব্রান্ডিং হবে এই ভেবে যে, বাংলাদেশে অপরাধ করে পার পাওয়া যায়।
এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ লুটের বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়েছে। তাদের মতে, রিজার্ভ লুটের সময় দ্বিতীয় দফায় আরো ৮৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা চুরি করে পাঠানো হয় ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ফেডারেল রিজার্ভের সন্দেহ হলে সেই অর্থের ছাড় আটকে দেয় ফিলিপাইন। পরে সে অর্থ ফেরত নেয় ফেডারেল রিজার্ভ। কিন্তু এ বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে আনা হয়নি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে শুরু থেকে কথা বলেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির বিষয়টি প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়। পরে আবারও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, মোট ৩৫টি আদেশের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ৫টি আদেশ কার্যকর হয়েছিল। বাকি ৩০টি আদেশ কার্যকর হয়নি। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সার্ভার ফরেনসিক পরীক্ষা করে সিআইডির টিম দেখতে পায় আসলে ৭০টি আদেশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তখনও বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি গোপন রেখেছিল। যদিও সর্বশেষ ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, অর্থ স্থানান্তর করতে মোট ৭০টি আদেশ দেয়া হয়েছিল। এই আদেশের বিপরীতে অর্থ স্থানান্তর করার নির্দেশ ছিল ১৯২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে মাত্র ৫টি আদেশের মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চলে যায় ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায়। বাকিগুলো নিউইয়র্ক ফেডের হস্তক্ষেপে স্থগিত হয়ে যায়। ফলে রক্ষা পায় বাংলাদেশের ১ হাজার ৮২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ হচ্ছে ১৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
সূত্র মতে, রিজার্ভ লুটের ঘটনায় গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। পরে অব্যাহতি দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো দুই ডেপুটি গভর্নরকে। ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। সরিয়ে দেয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমকে। অর্থ মন্ত্রণালয় এই কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করলেও চক্রের নাটের গুরু এখনো রয়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকেই মনে করছেন অনেকেই। তাদের মতে, রিজার্ভের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জড়িত দেশী ও আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হলে এই নাটের গুরুকেও আনতে হবে সামনে। তাদের বের করতে না পারলে এই চক্র আরো জেঁকে বসবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভ চুরির প্রায় দেড় মাস পর দায়ের হওয়া মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। এখনো মামলার তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি। অপরদিকে ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী কিমের ফেরত দেয়া অর্থ বাংলাদেশে আনতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু ফিলিপাইনের আদালত রিজাল ব্যাংককে যে অর্থ জরিমানা করেছে তা বাংলাদেশ পাবে না বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। পাশাপাশি এ ঘটনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককেই দায়ী করছেন রিজাল ব্যাংকের আইনজীবী। ফলে কিছু অর্থ উদ্ধার হলেও পুরো অর্থ ফিরে পাচ্ছে না বাংলাদেশ তা ক্রমশই দৃশ্যমান হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও এমন কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এর পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের চারজন মহাব্যবস্থাপককে বদলি করা হয়েছে মাত্র। কারো বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।
অনেক আগ থেকেই দেশী পর্যবেক্ষক মহল আশঙ্কা করে আসছিলেন ঘটনাটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তদন্ত করলেও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা এই চক্রটি এতটাই প্রভাবশালী যে, সরকারও হিমশিম খাচ্ছে তাদের নাম প্রকাশ করতে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক থেকে অর্থ লোপাট, ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ দশ হাজার কোটি টাকার ওপরে। দেশের আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয়নি কখনই। ফলে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুট করতে সাহস পেয়েছেন। দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় দেয়ার কারণেই এতবড় কেলেঙ্কারি হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও সুশীলসমাজ। তাদের মতে, দেশের ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় কেউ শাস্তি না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসন ভেঙে পড়েছে। রেগুলেটরি ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি সামাল দিতে পরেনি। এ দুর্নীতির সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত ছিল সে কথা অনেক আগ থেকেই আলেচিত হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকে ঘাপটি মেরে থাকা সেই চক্রটিই এখনো বহাল তবিয়তে থাকায় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন এই তদন্ত প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখবে না। এবারও পার পেয়ে যাবে দুষ্কৃতকারীরা।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট থেকে সুইফটের মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৮২০ কোটি টাকা সরানো হয়েছে। সরিয়ে নেয়া অর্থের মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ফিলিপাইনে ও বাকি ২০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করা হয়েছে শ্রীলংকায়। শ্রীলংকায় যাওয়া অর্থ পরে ফেরত পায় বাংলাদেশ। বাকিটা উদ্ধারে বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আলোর মুখ দেখবে তো?

২১ আগস্ট, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ