পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে যেখানে মনে হয় যে, মাদ্রাসা মানেই অশিক্ষা কুশিক্ষার স্থান এবং মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক মানেই অচ্ছুৎ। তাদের সম্পর্কে এখন এমন অবজ্ঞা এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য দেখানো হয় যে, মনে হয়, ওরা মানুষ নয়, ওরা ‘মাদ্রাসার ছাত্র’। তাই ওদের মৃত্যুতেও কিছু এসে যায় না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যা কিছু ঘটলো তার মূলে ছিল একজন মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে অথবা গুলি করে হত্যা করা (মতান্তরে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা)। এরপর প্রতিক্রিয়া হিসাবে যা কিছু ঘটেছে সেগুলিকে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের ‘তা-ব’ বলে সেক্যুলার ও বাম ঘরানার পলিটিশিয়ান ও বুদ্ধিজীবী এবং ঐ ঘরানার পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া অভিহিত করেছে।
অথচ একজন তাজা তরুণ পুলিশি বা দল বিশেষের ক্যাডারের নির্যাতনে মারা গেল সে সম্পর্কে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দেওয়া তো দূরের কথা, কোন কোন মিডিয়া এই হত্যাকা- বা নিহত হওয়ার খবরটিও বেমালুম চেপে গেছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক তরুণ চিকিৎসকের একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাস অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং প্রগতিবাদের লেবাসধারী অনেক মুসলিম আঁতেলকে লজ্জা দিয়েছে। ঐ চিকিৎসকের নাম পিনাকি ভট্টাচার্য্য। সম্মানিত পাঠক ভাইদের অবগতির জন্য পিনাকি ভট্টাচার্য্যরে ঐ স্ট্যাটাসটি নীচে হুবহু তুলে দিলাম।
পিনাকির স্ট্যাটাস
পিনাকি লিখছেন, ‘‘বাংলাদেশের ইতিহাস বলে ছাত্রদের সম্মিলিত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ অধিকাংশ সময়েই হিংসাত্মক হয়েছে। ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাও একই ধরনের ছাত্র বিক্ষোভ। তফাৎ শুধু এই ছাত্রদের মাথায় টুপি ছিল এবং তারা পায়জামা পাঞ্জাবী পরা ছিল। এর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংসতার ভিন্ন বয়ান দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের মোড়ল এবং তাঁদের স্থানীয় বরকন্দাজরা যেভাবে মুসলিম পরিচয়কেই সন্ত্রাসী তকমা এঁটে দেয়ার প্রকল্প নিয়েছে, অবচেতনে সেই প্রকল্পের সহযোগী হয়ে উঠেছে এদেশের বামপন্থীরাও। এর চাইতে বড় দুঃখ আর নাই। এর মধ্যে যদি তাদের সামনে টুপি পরা ছাত্রদের সহিংসতার ছবি থাকে তাহলে তো তাদের জন্য সোনায় সোহাগা।
ওস্তাদ আলাউদ্দিনের স্মৃতিচিহ্ন বিজড়িত সঙ্গীত ভবন আক্রান্ত হওয়াকে যদি বর্বরতা বলেন, তাহলে স্বীকার করুন, নকশাল আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভাস্কর্য ভেঙে আপনার কমরেডরাও বর্বরতা করেছে। রুশ বিপ্লবের সময় বলশেভিকরা অসংখ্য ঐতিহাসিক আর্টিফেক্ট ধ্বংস করেছিল, সেটা জানেন?
আমি কয়েকটা পত্রিকা পড়ে ঘটনার যে বয়ান পেলাম তার একটাও বিশ্বাস করতে পারছি না। মাদ্রাসা সম্পর্কে যারা সামান্য ধারণাও রাখেন তাঁরা নিশ্চয় বুঝবেন; যেই ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্ররা সহিংস হয়ে উঠেছে বলে দাবী করা হচ্ছে, সেই ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্রদের এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা নয়। তাঁরা যেই ধরনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের ভিতরে থাকে তার ফলে কাউকে দল বেঁধে মাস্তানি করে পেশী দেখিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মাদ্রাসায় ‘‘আদব’’ শিক্ষা দেয়া হয়, সেই আদবের সংস্কৃতির সাথে যারা পরিচিত নন, তাঁরা মাদ্রাসার কালচার বুঝতে পারবেন না।
একটি পত্রিকায় দেখলাম ওই এলাকায় কোন এক মাদ্রাসায় কিছুদিন আগে তালা মেরে দেয়া হয়েছিল। রাতে মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে ঢুকে পুলিশ এবং সরকারি দলের কর্মীরা আক্রমণ করেছে, ছাত্র নিহতের ঘটনা সেই সময়ের।’’ উল্লেখ্য, ঐ স্ট্যাটাসে ১৩০০-এর বেশি লাইক পড়েছে।
ঘটনার উৎপত্তি
দুঃখের বিষয়, ১২ ই জানুয়ারী মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছাত্র-জনতার পদভারে উত্তাল হয়ে উঠল কেন সে বিষয়ে সেক্যুলার এবং বামপন্থীরা আলোকপাত করে নি। কিন্তু সত্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন পিনাকি ভট্টাচার্য্য। তিনি লিখেছেন, ‘রাতে (১১ ই জানুয়ারী সোমবার) মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে ঢুকে পুলিশ এবং সরকারি দলের কর্মীরা আক্রমণ করে। ছাত্র নিহতের ঘটনা সেই সময়ের’। পিনাকি বাবুর বক্তব্য সঠিক।
বিষয়টি ছিল অত্যন্ত তুচ্ছ। সোমবার ১১ ই জানুয়ারী সন্ধ্যায় শহরের জেলা পরিষদ মার্কেটের মোবাইল দোকানের সামনে তুচ্ছ ঘটনায় এক মাদ্রাসার ছাত্রকে মারধর করা হয়। তারই জের ধরে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসার ছাত্র ঘটনাস্থলে গিয়ে পাল্টা প্রতিপক্ষকে মারধর করে। এ ঘটনায় নিউ মোড়াইল এলাকার কিছুলোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শহরের টি,এ,রোড এলাকায় তা-ব চালায়। এ সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা পুলিশের সাথে এসে মাদ্রাসার ছাত্রদের উপর হামলা করে এবং দেশের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে কান্দিপাড়ার মহল্লার লোকজন ও মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এ সময় প্রায় ৫০/৬০ টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫০৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৭৬ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করা হয়। জামেয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাওলানা মোবারক উল্লাহ জানান, গভীর রাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের মূল ফটক ভেঙ্গে প্রবেশ করে। পরে হিফজ বিভাগের ৮টি কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে উপস্থিত ছাত্রদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এমনকি পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা জুতা ও বুট দিয়ে কোন কোন ছাত্রের মাথা মাটিতে চেপে ধরে। মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর ছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমান (২০) কে মাদ্রাসার তিন তলা থেকে লাথি মেরে নীচের রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় রাত ২ টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার সকালে মাদ্রাসার ছাত্র নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে মাদ্রাসার বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা এবং আশ পাশের এলাকার তৌহিদী জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
অথচ ওরা এই ঘটনা
ব্ল্যাক আউট করেছে
ওপরে বর্ণিত এই ঘটনা সম্পূর্ণ ব্ল্যাক আউট করেছে প্রগতির সোল এজেন্টদের মিডিয়া। পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ১২ ই জানুয়ারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাত্র-জনতার উত্তাল বিক্ষোভকে তারা তা-ব বলে নিন্দা করেছে। একটি তাজা প্রাণের মূল্যও তারা দেয়নি। পিনাকি ঠিকই বলেছেন যে, ওস্তাদ আলাউদ্দিনের সঙ্গীত নিকেতনে হামলা যদি অসভ্যতা ও বর্বরতা হয়, তাহলে নকশাল আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভাস্কর্য ভাঙ্গচুর এবং রুশ বিপ্লবের সময় বলশেভিকদের অসংখ্য ঐতিহাসিক আর্টিফেক্ট ধ্বংস করাকে আওয়ামী ও বাম ঘরানা কি বলবেন?
সম্ভবত সে কারণেই কলকাতার ‘সানন্দা’ ম্যাগাজিনের একটি লেখায় বলা হয়েছিল, ‘দেবতার বেলা লীলা খেলা/পাপ হয়েছে মোদের বেলা’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।