পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মেট্রোরেল-৬ লাইনকে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য ভাঙ্গতে হবে কমলাপুর আইকনিক রেল স্টেশন ভবন। স্টেশন ভবনটি উত্তর দিকে সরিয়ে মেট্রোরেলের স্টেশনের জন্য জায়গা খালি করে দিতে সম্মত হয়েছে রেলওয়ে।
শুরুতে পরিকল্পনা ছিল ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলটি হবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। নির্মাণকাজ অর্ধেক শেষ হওয়ার পর পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে সরকার। এখন প্রায় এক কিলোমিটার বাড়িয়ে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লাইনটি। নতুন পরিকল্পনায় মেট্রোরেলের সর্বশেষ স্টেশনটি পড়েছে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বিল্ডিংয়ের ঠিক সামনে। কমলাপুরে শেষ স্টেশন হওয়ায় সেখানে মেট্রোরেলের লাইন পরিবর্তনের জন্য জায়গা লাগবে বেশি। মেট্রোরেলকে বাড়তি জায়গা দিতে গিয়ে পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যাবে বাংলাদেশ রেলওয়ের আইকনিক স্টেশন ভবন। এজন্য বিদ্যমান স্টেশন ভবনটি ভেঙে উত্তরপাশে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব এসেছে, যাতে সম্মতিও দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এর আগে মেট্রোরেল লাইনটি যখন কমলাপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এবং কমলাপুর স্টেশনের ঠিক সামনেই মেট্রোরেলের এলিভেটেড স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। তখন আইকনিক স্টেশন ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন যুক্তি দেখিয়ে তাতে আপত্তি জানিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। পাশাপাশি ডিএমটিসিএলের পরিকল্পনাটি কমলাপুরে রেলওয়ের মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে বলেও জানানো হয়েছিল।
ডিএমটিসিএলের প্রস্তাবিত নকশা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স¤প্রসারিত মেট্রোরেল লাইনটি মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে সেনাকল্যাণ ভবন-কমলাপুর আইসিডি হয়ে বিদ্যমান স্টেশনের সামনে দিয়ে তিন রাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। কমলাপুরে মেট্রোরেলের স্টেশনটি হবে রেলওয়ে স্টেশনের সামনে দক্ষিণ পাশে। আর মেট্রো ট্রেনের লাইন বদলানোর জন্য এলিভেটেড লাইনটি দক্ষিণ দিকে তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত এগিয়ে নেয়া হবে। উত্তরা-মতিঝিল-কমলাপুর মেট্রোরেলটি হচ্ছে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। ডিএমটিসিএলের নকশায় এটি বাস্তবায়ন হলে বিদ্যমান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের আইকনিক ভবনটি পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যাবে।
সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে মাল্ডিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজিমা করপোরেশনের নেতৃত্বে একটি সাব ওয়ার্কিং গ্রæপ। ডিএমটিসিএলের বর্ধিত মেট্রোরেল লাইনের নকশায় আপত্তি জানিয়েছিল কাজিমা করপোরেশনও। পরে মেট্রোরেলের প্রস্তাবিত নকশা ও মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবের প্রস্তাবিত নকশায় কিছুটা পরিবর্তন এনে নতুন একটি নকশা প্রস্তাব করেছে কাজিমা করপোরেশন। তারা প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যমান রেলওয়ে স্টেশন ভবনটি উত্তরপাশে সরিয়ে দেয়ার। পাশাপাশি স্টেশন বিল্ডিং সরিয়ে দেয়ার ফলে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে, মেট্রো ট্রেনের লাইন বদলের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সেখানে গড়ে তোলারও প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল মঙ্গলবার রেলভবনে রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে, ডিএমটিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে কাজিমা করপোরেশন। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও। সভায় কাজিমা করপোরেশনের প্রস্তাবিত নকশায় বিদ্যমান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বিল্ডিংটি উত্তরপাশে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রস্তাবটি নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।
কাজিমা করপোরেশনের প্রস্তাবটির বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, মেট্রোরেল-৬-এর জন্য যে নকশা করা হয়েছিল, তাতে বিদ্যমান কমলাপুর স্টেশনের সামনে মেট্রোরেল স্টেশনের পাশাপাশি দক্ষিণ দিকের তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত অংশ এলিভেটেড হওয়ার কথা ছিল। এলিভেটেড লাইনটি তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল মেট্রোর ট্রেনগুলো ঘোরানোর সুবিধার্থে। তাদের এ নকশায় আমাদের বিদ্যমান স্টেশন বিল্ডিংটি ঢেকে যায়। এখন কাজিমা করপোরেশন প্রস্তাব করেছে স্টেশন বিল্ডিংটিই উত্তরপাশে সরিয়ে দেয়ার। এতে মেট্রোরেলের এলিভেটেড অংশটি তাদের স্টেশন পর্যন্ত এসেই শেষ হয়ে যাবে। বিপরীতে বিদ্যমান রেলওয়ে স্টেশনটি উত্তরপাশে নিয়ে গেলে যে ফাঁকা জায়গা থাকবে, মেট্রোরেলের ট্রেনগুলো শান্টিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সেখানে গড়ে তোলা হবে। আমরা এ প্রস্তাবটিতে সম্মত হয়েছি। নতুন নকশায় রাজি হয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হবে।
রেলমন্ত্রী বলেন, কমলাপুরে বিদ্যমান রেলওয়ে স্টেশন ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর একটি। এটি উত্তরপাশে সরানো হলেও তার নকশায় কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। নতুন বিল্ডিং বর্তমান বিল্ডিংয়ের আদলেই তৈরি করা হবে।
রেলওয়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এক সময় ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ছিলো তৎকালীণ পূর্ব বাংলার এবং পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশন। বাংলা বিভক্তীকরণের পর ঢাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরে রূপান্তরিত হয়। তাই ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনকে প্রতিস্থাপন করে তুলনামূলক নতুন ও অধিক বড় রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সে সময় সদ্য প্রতিষ্ঠিত বুয়েটের আমেরিকান শিক্ষকদের তত্ত¡াবধানে কমলাপুর স্টেশন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কমলাপুর স্টেশনের নকশা করেছেন মার্কিন স্থপতি রবার্ট বাউগি। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে কমলাপুর স্টেশন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬৮ সালে শেষ হয়। ১৯৬৮ সালের ২৭শে এপ্রিল স্টেশনটি উদ্বোধন করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১লা মে ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে শেষ ট্রেন ছেড়ে যায় এবং এর পরের দিন স্টেশনটিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে, ২০২১ সালের মধ্যেই দেশের প্রথম মেট্রোরেলের কাজ শেষ করতে চায় সরকার। এজন্য মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত স¤প্রসারণ কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। মেট্রোরেলের জন্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনটি সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন পেলে আনুষঙ্গিক কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, বর্ধিত অংশসহ নির্মাণাধীন ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ২১ কিলোমিটার। নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। উত্তরা-মতিঝিল-কমলাপুর মেট্রোরেলসহ ঢাকায় সব মিলিয়ে মেট্রোরেলের পাঁচটি লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের, যেগুলো বাস্তবায়ন হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।