পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে দেশ দ্রুত এ উগ্রবাদী ছোবল থেকে বের হয়ে আসছে। ধর্মীয় উগ্রবাদ ও উগ্রবাদী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর সাঁড়াশি অভিযান ও তাদের দমনের ফলে আতঙ্ক চেপে বসা সাধারণ জনগণের মনেও ধীরে ধীরে স্বস্তির ভাব ফিরে আসছে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও কঠোর মনোভাবের কারণে গজিয়ে ওঠা জঙ্গিবাদের আপদ থেকে দ্রুত সামলে উঠছে দেশ। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার। সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতেও সরকার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে। জনগণের মধ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা এবং টেলিভিশন মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ছোট নাটিকা প্রচার করা হচ্ছে। দেশের সব মসজিদে নিয়মিতভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বিশেষ করে পবিত্র জুমার নামাজের আগে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশের মাঠ প্রশাসনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনই শুধু নয়, প্রতিটি জেলার দলীয় নেতা, সুশীল সমাজ ও সমাজের প্রভাবশালী মানুষকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যক্তিগতভাবে অনুপ্রাণিত করছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগের কারণেই দেশের সাধারণ মানুষ প্রকাশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ-মানববন্ধনের মাধ্যমে নিজেদের ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদকে বারবার আন্তর্জাতিক মোড়কে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হলেও একে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকগণ। তারা একে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিশেষ করে বিগত নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন। দলটির নেতাদের ভাষ্য, যেনতেনভাবে সরকার উৎখাতের চক্রান্ত থেকে জোটটি তথাকথিত জঙ্গিবাদীদের ব্যবহার করছে। সরকার এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছে।
সূত্র জানায়, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি সম্পর্কে গত কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ডিসি (জেলা প্রশাসক) সম্মেলনে দিকনির্দেশনা দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে সর্বোচ্চ কর্মতৎপরতা প্রদর্শন করতে মাঠ প্রশাসন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে এ ব্যাপারে স্থানীয় জনসাধারণকে বেশি সম্পৃক্ত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেন। এছাড়া সম্মেলনে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদী তৎপরতার বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ মনোভাব আবারও জেলা প্রশাসকদের কাছে পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সমানভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় ডিসি সম্মেলনে। জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে জেলা পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটি আরও কার্যকর করতে পরামর্শ দেয়া হয়। একই সঙ্গে মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে সন্ত্রাস এবং নাশকতাবিরোধী কমিটিগুলো যাতে আরও কার্যকর হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। সরকারের হাইকমান্ড থেকে দেয়া সেই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যেই মাঠ প্রশাসন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রশাসন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে আরও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করায় তা ফলপ্রসূ হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের ভয়ের কিছুই নেই। আমি আবারো দৃঢ়ভাবে বলছি বাংলাদেশে কোনো আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেই। তথাকথিত আইএস নেই। ষড়যন্ত্র এবং দেশীয় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশে আমরা গণজাগরণ সৃষ্টি করতে চাই। তেমনি বিদেশেও সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরতে চাই আমরা। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কল্যাণপুরে বড় অভিযান পরিচালনা করে ইতোমধ্যে সরকার দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় ও দৃঢ় নেতৃত্বে সামনে আরও সফলতা আসবে বলে আমরা মনে করি।
আওয়ামী লীগের সূত্রমতে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের যোগসাজশে হঠাৎ করেই বিশ্বশান্তির বিষফোঁড়া তথাকথিত ইসলামী জঙ্গিবাদের বিষবাষ্পের বিষাক্ত ছোবল সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির অনন্য দেশ বাংলাদেশকে কুলষিত করছিল। একের পর এক নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে দেশে হত্যাকা-ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান হোটেলে ও কিশোরগঞ্জের ঈদগাওতে হামলা চালায় খুনি জঙ্গিরা। এ ধরনের জিম্মি ঘটনা সিনেমা বা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেলেও বাংলাদেশের মতো ধর্মীয় সম্প্রতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশের জন্য বিশাল এক ধাক্কা। সেই ধাক্কায় থমকে না গিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি দেশের শান্তিকামী সাধারণ মানুষও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যে কারণে জঙ্গিরা এদেশে সুবিধা করতে পারবে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে নানা চক্রান্ত অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যখনই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছে, তখন থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীদের চিরতরে নির্মূল করা হবে। শত্রুরা যেন আর কোনোভাবে দেশ ও মানুষের মাঝে হানা দিতে না পারে। ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এই সকল ষড়যন্ত্রকারীদের আমরা ’৭১-এ পরাজিত করেছি, এখনও পরাজিত করব। যত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রই হোক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সফলতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করে আসছে।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, দেশ যখন উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নানা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদী ও দেশবিরোধী শক্তিকে আমরা নির্মূল করব। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে কোনো আপস নয়।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে, সরকারকে বিপদে ফেলতেই বিএনপি-জামায়াতই এসব ষড়যন্ত্র চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত।
হানিফ বলেন, গুলশান হত্যাকা-ের মাধ্যমে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। গুলশানে ১৭ জন বিদেশী নাগরিককে হত্যার মাধ্যমে সরকারকে আঘাত করে সরকার পতনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দক্ষতার সঙ্গে এই সন্ত্রাসী কর্মকা- মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন। এই হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। এছাড়া যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি কর্মকা- করেছে, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ অংশ নিচ্ছে। আমরা চাই, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এভাবে যে সামাজিক ঐক্য গড়ে উঠেছে তা সামনের দিনে আরও জোরদার করতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।