Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিঃশ্বাস নেয়া দায়

ধুলো-দূষণে কাহিল চট্টগ্রাম : বাড়ছে রোগবালাই

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

চারিদিকে ধুলোবালি। সয়লাব যানবাহন, দোকানপাট, ঘরবাড়ি। চট্টগ্রাম নগরজুড়েই এখন ধুলার যন্ত্রণা। শ্বাস নেয়াও যেন দায় হয়ে পড়েছে। ধুলো-দূষণে বাড়ছে রোগবালাই। করোনা মহামারির মধ্যেই শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, গলাব্যথা, সাইনাস আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে। কাহিল শিশু ও বৃদ্ধরা।
নগরীতে চলছে উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ি। বড় বড় সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সর্বত্রই রাস্তা কাটাকাটি চলছে। এতে ধুলোর বন্যা বইছে সর্বত্র। এর সাথে যোগ হয়েছে যানবাহন, কল-কারখানা এবং শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ইট ভাটার কালো ধোঁয়া। শুষ্ক মৌসুম শুরু হতেই পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের শুরুতে শুষ্ক আবহাওয়ায় এমনিতেই রোগবালাই বাড়ে। তার ওপর ভয়াবহ মাত্রায় বায়ু দূষণে শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর বায়ুর মান ছিল ১২৩ (একিউআই)। যা শ্বাসকষ্টজনিত বিশেষ করে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ও সাইনাস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আবার বাতাসের এ ধরনের মান অব্যাহত থাকলে শ্বাসকষ্টজনিত এসব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে পারে।
নগরীতে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। প্রধান সড়কের বিমানবন্দর থেকে কাটগড় হয়ে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। বিমানবন্দর থেকে প্লোটিলা জেটি পর্যন্ত সড়কেও চলছে সম্প্রসারণ কাজ। ওই সড়কের কয়লার ডিপো এলাকায় নির্মিত হচ্ছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট কানেকটিং রোড, মাঝিরঘাট সড়ক, টাইগারপাস থেকে আমবাগান হয়ে পাহাড়তলী সড়ক, বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট সড়ক, বায়েজিদ বোস্তামী সড়কসহ মহানগরীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ চলছে। পানিবদ্ধতা নিরসন মহাপ্রকল্পের জন্য মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে সড়ক ও নালা-নর্দমা সম্প্রসারণ কাজ।
চট্টগ্রাম ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপন, সিটি কর্পোরেশনের এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং একইসাথে কর্ণফুলী গ্যাস, পিডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থারও উন্নয়ন কাজ চলমান। ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ির ফলে মহানগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কই এখন ধুলোবালিতে ভরা। যানবাহনের চাকায় আর বাতাসে উড়ে এসব ধুলোবালি ছড়িয়ে পড়ছে নগরময়। সড়কের আশপাশের বাসাবাড়ি, দোকানপাট, গাছপালায় জমেছে ধুলোবালির আস্তরণ। মহানগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহন থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহন ঢেকে যাচ্ছে ধুলোবালিতে। গণপরিবহনের যাত্রী এমনকি পথচারীদের শরীরেও জমছে ধুলার আস্তরণ। মাস্ক ব্যবহার করেও ধুলাবালি থেকে নিস্তার মিলছে না। ধুলোয় পরনের পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে হোটেল-রেস্তোঁরা, খাবারের দোকান, ফলমূল, শাকসবজি ধুলোবালি থেকে রক্ষায় নানান প্রচেষ্টা চলছে।
তবে এরপরও রেহাই মিলছে না ধুলো দূষণ থেকে। রাস্তার পাশে থাকা দোকানীদের ব্যবসা লাটে উঠার উপক্রম হয়েছে। মাঝিরঘাট, স্ট্যান্ড রোড, অলঙ্কার, নিমতল, নন্দনকানন, আগ্রাবাদ, পতঙ্গা ইপিজেড, হালিশহর পোর্ট কানেক্টিং রোড এলাকায় চলাচল করতে হচ্ছে এই ধুলাকে সঙ্গী করেই।
সড়কে ধুলার দাপট কমাতে চসিকের আছে তিনটি সুইপিং গাড়ি। স¤প্রতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাস্তার ধুলাবালি পরিষ্কারে চসিককে আরও তিনটি সুইপিং গাড়ি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এসব গাড়িতেও ধুলোর যন্ত্রণা কমানো যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম ওয়াসার উদ্যোগে মহানগরীতে পানি ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগেও মাঝে মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পানি ছিটানো হচ্ছে। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আগের অবস্থা ফিরে আসছে ওইসব এলাকায়।
এ প্রসঙ্গে সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, সড়কে উন্নয়ন কাজের জন্য ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ধুলো দূষণ হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে দূষণ কমিয়ে আনতে কাজ করা হচ্ছে। তিনি নগরবাসীকে মাস্ক পরিধান এবং পারতপক্ষে ধুলোবালি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।
উন্নয়ন প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদারদের উদ্যোগে দূষণ কমাতে পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী বলেন, ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালককে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ইপিজেড হয়ে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দিনে তিনবার পানি ছিটাতে বলা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে পাইলিংয়ের কাজ যেখানে চলছে সেখানে প্রাচীর দিতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার কিছু কল-কারখানায় পরিবেশ দূষণের তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কারখানা মালিকদের শুনানিতে হাজির হতে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ধুলো দূষণের ফলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগবালাই বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি ধুলো দূষণ থেকে রক্ষায় মাস্ক পরার পাশাপাশি ফুল শার্ট এবং মাথায় ক্যাপ পরার পরামর্শ দেন। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে ভাল করে হাত মুখ ধোঁয়া, পারলে গোসল করে নেয়া হলে দূষণ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধুলো-দূষণ

২৪ নভেম্বর, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ