Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাস্কর্য ও মূর্তির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে হেফাজতিরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে

সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত ইসলামী জোট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেছেন, চরমোনাই পীর ও হেফাজতিরা ধর্মের ধ্বজাধারী সেজে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে উস্কে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। ভাস্কর্য ও মূর্তি শব্দের ভুল ব্যখ্যা দিয়ে তারা অপরাজনীতির চেষ্টা করছে। ধর্মের ছদ্মাবরণে সরলমনা নিরীহ মানুষকে বিভ্রান্ত করে গুজব রটিয়ে তাদেরকে রাজপথে নামিয়ে তারা অরাজকতা সৃষ্টি করছে। এ ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাই।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মহান আল্লাহ- পবিত্র কুরআন- মহানবীকে (সা.) কটুক্তির প্রতিবাদের সীমারেখা এবং আমাদের করণীয় ও ভাস্কর্যকে মূর্তি পূজার সঙ্গে তুলনা করার পোস্টমর্টেম’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে কুরআন ও হাদীসের আলোকে তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বিভিন্ন ব্যখ্যা তুলে ধরেন।
জিয়াউল হাসান বলেন, ভাস্কর্য মানে শিরক নয়। ভাস্কর্য ও মূর্তি এক জিনিস নয়। অথচ মুসলমান নামধারী কিছু বিপথগামী লেবাসধারী আলেম এ নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি বলেন, প্রাণীর ভাস্কর্য মানেই শিরক নয়। বিশ্বের অনেক ইসলামি দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে। চরমোনাইর পীর ও হেফাজতিরা যদি ভাস্কর্য বিরোধীই হয়, হাটহাজারীর কাছেই খাগড়াছড়ি শহরের দ্বারপ্রান্তে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটি বৃহদাকার ভাস্কর্য রয়েছে। মানুষের এই মূর্তি ভেঙে তারা প্রমাণ করতে পারেন যে এ বিষয়ে তারা কতটা সিরিয়াস।
মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ভাস্কর্য স্থাপনকে মূর্তি স্থাপনের সঙ্গে তুলনা করে শিরক সংস্কৃতি বলে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করার দাবি মামার বাড়ির আবদার বলেই মনে হয়। বাঙালি সংস্কৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতি নয় এটি আমাদের স্বজাতীয় নিজস্ব সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতিতে যেসব জিনিষ শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদিতার মিশ্রণ ছাড়াই পালিত হয়ে আসছে সেটিকে হঠাৎ করে শিরকী সংস্কৃতি বলা নোংরা রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়। বুখারী শরিফের হাদিস অনুযায়ী মূর্তি মানেই শিরকের উপকরণ নয়। হযরত আয়শা (রা.)- এর ঘরে খেলনা ঘোড়ার ছোট মূর্তি রাখা ছিল। কই রাস‚ল (সা.) তো নিষেধ করেননি। এই ছোট পুতুল বা মূর্তি পূজার জন্য ছিল না বরং খেলার জন্য ছিল। তাই রাস‚ল (সা.) নিষেধ করেননি। একইভাবে যেসব ভাস্কর্য সৌন্দর্য চর্চা ও রুচিশীলতার পরিচয় বা ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার স্মৃতিফলক হিসাবে স্থাপিত হয় তা ইসলামী শিক্ষানুযায়ী নিষিদ্ধ নয়।
তিনি বলেন, ‘ভাস্কর্য এবং প্রতিমা পূজা মূর্তি এক জিনিস নয়। মূর্তি ও ভাস্কর্য শব্দের অর্থকে ভুল ব্যাখ্যা করে মাঠ গরম করার চেষ্টা করবেন না। কারণ এ দেশের মানুষ আপনাদেরকে ’৭১ সালেও চিনতে ভুল করে নাই, এখনো করবে না। ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নামে স্থাপিত স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে বাংলাদেশের কোন মুসলমান একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ যখন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তখন তারা কেউ সেখানে বোখারী এবং মুসলিম হাদিস ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়্যাত এর শিক্ষা অনুযায়ী ইবাদতের নিয়তে, প্রার্থনা করার নিয়তে আমরা কেউই স্মৃতিসৌধে এবং ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি না।
মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাস্কর্য রয়েছে উল্লেখ করে ধর্মীয় এই নেতা আরও বলেন, কট্টর ওয়াহাবীপন্থী হুজুররাও এটি জানে, প্রাণীর ভাস্কর্য মানেই শিরক নয়। সৌদি আরবে জেদ্দার মূল কেন্দ্রে দি ফিস্ট নামে একটি ভাস্কর্য আছে, এটি একটি মুষ্টিবদ্ধ হাতের ভাস্কর্য। আরও আছে ঘোড়ার ও মাছের ভাস্কর্য। একইভাবে মুসলিম অধ্যুষিত দুবাই, ইরান ইন্দোনেশিয়া ও মিশরে রয়েছে ঘোড়া ও অন্যান্য জীবের ভাস্কর্য। প্রমাণিত হল ভাস্কর্য জীব দেহের হোক বা জীব দেহের কোন অংশের হোক তা যদি শিরক বা পূজার উদ্দেশ্যে নির্মিত না হয় তবে এতে কোন বারণ নেই।
চরমোনাই পীর ও হেফাজতের নেতার সমালোচনা করে মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ‘মূর্তি ও ভাস্কর্য যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে সেই উদ্দেশ্য নির্ধারণ করবে এটি বৈধ নাকি অবৈধ। লোকেরা বলাবলি করছেন এই কথা বলে যে, চরমোনাই পীর সাহেবের নির্বাচনী মার্কা হাত পাখা আজ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হাতপাখা যা বিলুপ্ত প্রায়, হাতপাখার কিছু ভাস্কর্য নির্মাণ করে বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হোক! চরমোনাই পীর মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এবং হেফাজতের নেতা মামুনুল হককে আমরা বলবো আপনাদের দেশবিরোধী এই সকল আন্দোলন বাস্তবায়নের জন্য জনগণের মেন্ডেট নিয়ে সংসদে গিয়ে বিল উত্থাপন করে সংখ্যা গরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের সমর্থন নিয়ে আপনাদের বাপ-দাদাদের আমলে নির্মিত এ সকল ভাস্কর্য-মূর্তিপূজা বন্ধ করার আইন পাস করতে পারেন কিনা তা চেষ্টা করে দেখুন।
মসজিদকেন্দ্রিক রাজনীতি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে ইসলামী জোটের সভাপতি বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর, এর পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সকলের কর্তব্য। মসজিদে নোংরা রাজনীতি, কূটনীতি, মিছিল, আন্দোলন, ককটেল, বোমা, মসজিদের মাইক ব্যবহার করে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে মারধর করা, ইট-পাথর নিক্ষেপ করা কোনো ধার্মিকের কাজ হতে পারে না। একই কথা মাদরাসার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দীর্ঘদিন যাবত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্লিপ্ততায় উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মের নামে বায়তুল মোকাররম মসজিদ এবং তার চত্বরে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। অবিলম্বে জামাত-শিবির হেফাজতি চক্রসহ জঙ্গি মদদদাতা, ধর্ম ব্যবসায়ী সা¤প্রদায়িক সংগঠনগুলোর সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও তার চত্ত্বরে নিষিদ্ধ করার জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহ-সভাপতি মুফতি জোবাইদ আলী, সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আব্দুস সোবহান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবুল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন ফোরকান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা ফারুক হোসাইনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ