পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যুর ঘটনায় ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে অচলাবস্থা নেমে এসেছে। এ ঘটনায় ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এদিকে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের প্রাইভেট চেম্বার এবং অনলাইন কনসালটেশন সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। গতকাল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস এর সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ডা. মামুনের গ্রেফতারের বিষয়ে যৌক্তিক সমাধান না হলে আগামী শনিবার থেকে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।
সভা শেষে সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্রি. জেনারেল প্রফেসর আজিজুল ইসলাম জানান, ঘটনার সময় এএসপি আনিসুল করিমের সাথে ধস্তাধস্তিতে ডাক্তার মামুন অংশ নেননি। তাহলে কিভাবে তিনি হত্যা মামলার আসামি হলেন? এমন প্রশ্ন রাখেন সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, হত্যার সঙ্গে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। অন্যায়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে হত্যার আসামি করেছে। ডা. মামুনের গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি। অন্যথায় আগামী শনিবার থেকে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ার দেন তিনি।
সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন প্রফেসর আজিজুল ইসলাম, কারণ পুলিশ যেহেতু মামলার বাদী তাই তাদের ওপর আস্থার সংকট আছে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে শুধু মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটেই নয়; এ ঘটনায় সারাদেশের চিকিৎসকদের মধ্যে এক ধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক বলেন, ডা. মামুনকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। তাকে গ্রেফতার করার আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা দরকার ছিল, সেটা পুলিশ করেনি। তা না করে, গভীর রাতে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসা নিতে বিপাকে পড়া এক রোগীর স্বজন বলেন, প্রতিদিনই সারা দেশে আনিসুল করিমের মতো অনেক হত্যার ঘটনা ঘটছে। এতে মামলাও করা হচ্ছে। কিন্তু কখনই দেখিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন। বরং মামলা করতে গিয়ে অনেক ভুক্তভোগী পুলিশের হয়রানির স্বীকার হয়েছেন। কিন্তু এখন যখন তাদের ক্ষেত্রেই ঘটনা ঘটলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই বীরদর্পে জাগ্রত হয়ে উঠল। এটা সবার ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরেকজন চিকিৎসক দাবি করেন, সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে মাইন্ড এইডে পাঠানোর পরমর্শ দেয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তা ‘সঠিক নয়’। উনি (আনিসুল) তার পরিচিত চিকিৎসকদের মাধ্যমে আমাদের হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলেন। এখানে এলে প্রথমে তাকে অবজার্ভ করা হয়। পরে আউটডোরে চিকিৎসা দেয়া হয়। ডা. মামুন তাদের বুঝিয়েছিলেন, তারা যেন বাইরের হাসপাতালে না যান। কিন্তু তারা এখানে থাকতে চাননি। তারা স্বেচ্ছায় গেছেন। এখানে ডা. মামুনের কোনো দায় থাকতে পারে না।
এদিকে গত দু’দিন থেকে হাসপাতালে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সারাদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা।
গত বুধবারও ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাতে ইনস্টিটিউটে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ডা. মামুনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে হাসপাতালের পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় ও সিনিয়র চিকিৎসকদের অবরুদ্ধ করে রাখে তারা।
এদিকে রাজধানীর আদাবরের বেসরকারি মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মীদের মারধরে নিহত এএসপি আনিসুল করিমের চিকিৎসার কোনো পর্যায়ে চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে জানিয়েছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। গতকাল হাসপাতালের পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাসপাতালের তদন্ত প্রতিবেদনে এটা প্রতীয়মাণ হয় যে উক্ত রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো পর্যায়েই ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। গত ৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনকে উত্তেজিত অবস্থায় তার ভগ্নিপতি ডা. রাশেদুল হাসান রিপন এবং পুলিশের কিছু সদস্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সে সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক আনিসুল করিমের ভগ্নিপতির সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে জরুরিভিত্তিতে শান্ত করার জন্য উত্তেজনা উপশমকারী ইঞ্জেকশন দেন এবং তাকে পর্যবেক্ষণে রাখেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সেদিন সকাল ৯টার দিকে রোগীর ভগ্নিপতি এবং উপস্থিত স্বজনরা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শাহানা পারভীনের সঙ্গে দেখা করেন। আর রোগীর ভগ্নিপতি ডা. শাহানা পারভীনের পূর্ব পরিচিত।
শাহানা পারভীন রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জরুরিভিত্তিতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। কিন্তু তার ভগ্নিপতিসহ অন্যান্য স্বজনরা তাকে ভর্তি করতে অসম্মত হন বলে দাবি করেছে হাসপাতাল। এ বিষয়টি ডা. শাহানা পারভীন রোগীর আউটডোর টিকিটেও লিখে দিয়েছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ডা. শাহানা পারভীন আউটডোর টিকিটে প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দেন। রোগীর সঙ্গে আগত পুলিশ সদস্যদের সিসিতে আউট লিখে স্বাক্ষর দেন। তারপর রোগী আনিসুল করিম, তার বোন, ভগ্নিপতি এবং আগত পুলিশ সদস্যরা হাসপাতাল ছেড়ে যান।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কোনো কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করতে হলে আগে আমাকে জানানোর কথা। কিন্তু আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুন হাসপাতালের ডরমিটোরিতে থাকতেন। তাকে ভোর ৪টার সময় ‘উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার’ খবর পেয়ে বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে জানিয়েছিলেন। ডিজি স্যার জিডি করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী আমি থানায় জিডি করি। কিন্তু পরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে পুরো বিষয়টা জানতে পারি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আমাকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে পরিচালক বলেন, ডা. মামুনকে গ্রেফতারের ঘটনায় সবাই ক্ষুব্ধ, তারা আমার কাছে এসেছেন, আমি তাদের বলেছি, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি প্রপার চ্যানেলে বিষটি সুরাহা করার। তাদের বলেছি, রোগীদের দুর্ভোগ হয় এমন কিছু না করতে। আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়ে মারা যান এএসপি আনিসুল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আনিসুল উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় কর্মচারীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।
তবে হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে আনিসুলকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, আনিসুলকে ৬-৭ জন মাটিতে ফেলে চেপে ধরে আছেন, দু’জন তকে কনুই দিয়ে আঘাত করছিলেন। আনিসুল নিহতের পর তার বাবা ফাইজ্জুদ্দিন আহমেদ মোট ১৫ জনকে আসামি করে আদাবর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামিকে পুলিশ এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে।
পরে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গত মঙ্গলবার হাসপাতাল সংলগ্ন বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর ওই দিনই ডা. মামুনকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ডা. মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগÑ তিনি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আসা রোগীদের ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠাতেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।