পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার
স্বাধীনতা সংগ্রামের চার খলিফার এক খালিফা ও প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় ব্যর্থ বিশ্বাসঘাতক ও বেঈমান ভীরু সেক্টর কমান্ডারদের যুদ্ধকালীন সব পদবী প্রত্যাহার করুন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদের জীবন্ত ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। জাতির জনকের শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন এ সভা আয়োজন করে।
নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, দায়িত্বে থেকেও যারা ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারেনি তারা বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান ও ভীরু-কাপুরুষ। তাদের কোনো সন্মানজনক পদবী থাকা ঠিক নয়। ১৯৭৫ সালে জাতির জনকের হত্যার সময় কেএম সফিউল্লাহ, এমএইচ খান, মেজর জেনারেল খলিল, নুরুজ্জামানসহ যারা সেক্টর কমান্ডার রয়েছেন তাদেরকে প্রদত্ত পদবী প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এরা বিশ^াসঘাতক, বেঈমান ও ভীরু। ১৯৭৫ এর জাতির জনক হত্যার সময় তারা তাদের কর্তব্য পালন করেনি। কেএম সফিউল্লাহকে বন্ধবন্ধু তিনবার ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এগিয়ে আসেননি।
মতিয়া চৌধুরী, নূহউল আলম লেনিন, রাশেদ খান মেননকে ইঙ্গিত করে বঙ্গবন্ধুর সময়ে ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ওসব রাজনীতির জঞ্জাল-যাদেরকে আমরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছিলাম তারাই এখন সরকারের রাজনীতির উপদেষ্টা। তারাই শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ।
তিনি আরও বলেন, মোশতাক সরকারসহ বিভিন্ন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান যে ব্যক্তি পরিচালনা করেছে; যার বংশের কেউ কখনও রাজনীতির ‘র’ জানে না সেই এইচটি ইমাম এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা। এনএসএফে’র আবুল মাল আব্দুল মুহিত এরশাদ ও শেখ হাসিনা দুই সরকারেই অর্থমন্ত্রী।
শেখ হাসিনাকে সমর্থনের প্রশ্নে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমি সেই দিন শেখ হাসিনাকে সমর্থন করবো যেদিন তিনি গণবাহিনীর নেতৃত্ব দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবেন না। যারা বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে জুতা বানাতে চেয়েছিল, যারা বঙ্গবন্ধুর হাড্ডি দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিল এবং যারা তাঁকে সিআই এর এজেন্ট, অর্বাচিন ও অথর্ব আখ্যা দিয়েছিল তারাই এখন প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে আছে। তারা সংগঠনের ও সরকারের অস্তিত্বকে রাহুর মতো গ্রাস করছে। এই সরকারকে সমর্থন করবো সেদিন-যেদিন কমিউনিস্টদের ওই প্রেতাত্মারা সরে যাবে। শেখ হাসিনার চারপাশে এখন যারা রয়েছেন তাদের অনেকেই একসময় বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করতো। এখনও সময় আছে বামদেরকে পাশ থেকে সরিয়ে দিন।
এদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতাদের সমালোচনা করে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, বাংলাদেশে একজনও কমিউনিস্ট নেই। যাদের কিছু থাকে না, যারা সর্বহারা তারাই কমিউনিস্ট। বাম আন্দোলনে এধরনের কোনো নেতার দেখা এখানে মেলেনি।
বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার কিছু কারণ উল্লেখ করে সিদ্দিকী বলেন, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির সময় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু তার কেনো প্রতিবেদন আর প্রকাশ হয়নি। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের কয়েকজনের যদি বিচার করা যেত, একজন দুর্নীতিবাজকে যদি ফাঁসি দেয়া হত; তাহলে পরবর্তীতে ডেসটিনি, হলমার্ক, যুবক, ব্যাংকের অর্থ কেলেংকারি মতো ঘটনা আর ঘটতো না। আপনারাই এগুলো লালন করছেন।
আমি ক্ষমতাসীন হতে চাই না নিজের এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার কেনো প্রত্যাশা নেই, আমি কাউকে ভয় পাই না। আল্লাহ ছাড়া আজরাঈলেকেও ভয় পাই না। প্রাক্তন ছাত্রলীগকে আমি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হতে দেব না। আমি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণের চেয়েও ভালোবাসি। আমার হৃদয়ের সিংহাসনে বঙ্গবন্ধু রয়েছেন। তিনি মঞ্চে উপবিষ্ট নেতাদের প্রতি আহ্বান করে বলেন, আমি আর সক্রিয় রাজনীতি করবো না। আমি নেহেরু, শাস্ত্রি ও ইন্দিরা হতে চাই না। আমি রাজনারায়ন হতে চাই। রাজনীতি মন্টু সাহেবরা করুন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুররা করুন। আমি পাশে থাকবো।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে সারাদেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল। সেখানে ২০১৪ সালে এসে এমন কি ঘটলো যে আজীবন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করা আওয়ামী লীগকে একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে হলো। যে নির্বাচনে প্রায় শূন্যের কোটায় ভোটার। এটা আওয়ামী লীগের মতো সংগ্রামী রাজনৈতিক দলের জন্য লজ্জার।
ছাত্রলীগের কর্মকা-ের সমালোচনা করে মোস্তফা মহসিন বলেন, আগে ছাত্রলীগের কথা শুনলে সবাই সম্মান করতো। সাধারণ মানুষ, মুরুব্বিরা ভরসা পেতেন। আর এখন ছাত্রলীগের কথা শুনলে মুরুব্বিরাসহ সবাই দৌড়ে গলির মুখ থেকে ঘরে ঢুকে যায়।
জাতীয় ঐক্য ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারী দলের এম বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ স্বাধীনতা সংগ্রামী বলেন, হয় নাই। দেশে কোনো জাতীয় ঐক্য হয় নাই। বঙ্গবন্ধু যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে তখন জাতীয় প্রশ্নে অন্য সকল দলের সঙ্গে মত পার্থক্য সত্ত্বেও ছাত্রলীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য হয়েছিল। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে সবার ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণেই শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধী দেয়া হয়েছিল। এক সঙ্গে সকলেই সেøাগান তুলেছি, জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় আছেন বলেই যদি শেখ হাসিনা বলে থাকেন জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। তাহলে তা ভুল। বাংলাদেশের সামনে ভয়াবহ জাতীয় দুর্যোগ অনিবার্য। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার, জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের স্বাধীনতাত্তোর সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কেএম সাইফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান ও মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। আলোচনা পরিচালনা করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।