পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজিবুল হক পার্থ : পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের পরে এবার দলীয় প্রতীকে আয়োজন করা হচ্ছে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদের নির্বাচন। সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ নিয়ে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলেই এ বছরের ডিসেম্বরে ৬১টি জেলা পরিষদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইনটি পর্যালোচনা করে এর বিভিন্ন দুর্বল দিক এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আইনটি পাস করে দেওয়া হলেই সেই মোতাবেক বিধিমালা তৈরি করে তা ভেটিং শেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। যেহেতু এই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা কম এবং নির্ধারিত তাই ব্যাপক প্রচারণাও হবে না। এ লক্ষ্যেই নির্বাচনের সময় নিয়ে বেশি ভাবতে হচ্ছে। আইন এবং বিধিই এখন মুখ্য বিষয়।
ডিসি সম্মেলনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর ৬ মাসের মধ্যে জেলা পরিষদের নির্বাচনের ঘোষণার পরেই নড়েচড়ে বসেছে ইসি এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে নির্বাচনের সব বাধা দূর করতে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আইন প্রণয়নে আইন মন্ত্রণালয় এবং বিধিমালা তৈরিতে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে বলে আলাদা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ইসির আইন শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, আমরা অপেক্ষা করছিলাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের আইনের সংশোধনী। কারণ এবছরের শেষে বা সামনে বছরের শুরুতে কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন করতে হবে। এরই মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আমরা দু’টি আইনের জন্য অপেক্ষায় আছি যেটি আগে পাবো সেটি বিধিমালা তৈরি করবো। দু’টি এক সাথে পেলেও বিধিমালা করে কমিশন নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, সরকার জেলা পরিষদ আইনে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনলে কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করতে পারে।
এদিকে এরই মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ) বিধিমালা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা পরিষদ সংশোধিত আইনের খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগে ভেটিং-এর জন্য পাঠানো হয়েছে। সংশোধিত আইনে ইসিকে নির্বাচন পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। এ হিসেবে সাধারণ সদস্য নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকটি জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হবে এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের জন্য হবে ৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত।
সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত করে কোন এলাকা কোন ওয়ার্ডে অন্তর্ভুক্ত হবে তার প্রাথমিক তালিকা বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করবেন। তালিকা প্রকাশের পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আপত্তি দাখিল করা যাবে। তদন্ত কর্মকর্তা আপত্তি ও পরামর্শ প্রয়োজনীয় শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবেন। দরকার হলে প্রাথমিক তালিকা সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন করা যাবে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মেয়র/চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর/সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর/সদস্য জেলা পরিষদের নির্বাচনম-লীর সদস্য/ভোটার হবেন। ওয়ার্ড গঠনের বিধিমালায় বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ওয়ার্ড সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নির্বাচনের জন্য পরস্পর সন্নিহিত ওয়ার্ড সমূহ যতদূর সম্ভব একত্রে রাখতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের অখ-তা বজায় রাখতে হবে। প্রতি ওয়ার্ডের নির্বাচক ম-লীর সংখ্যা যথাসম্ভব কাছাকাছি সংখ্যায় নির্ধারণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের ৪ ধরনের জনপ্রতিধি এই নির্বাচনে ভোটার হবেন। স্থানীয় কোনও স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জেলা পরিষদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না থাকায় প্রার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগেরও সুযোগ থাকছে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া দ্রুত করা হচ্ছে। অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করে তা ভেটিং-এর জন্য পাঠানো হয়েছে। বিধিমালাও জারি হচ্ছে। জেলা প্রশাসকগণ ১৫টি ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ করে জেলা পরিষদের অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করবেন। বিধিমালায় এ ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ সহকারী সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করবেন।
জানা গেছে, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনও দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে অধ্যাদেশ জারি করে দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচনের আয়োজন করে সরকার। জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করতেও একই পদ্ধতি অনুসরণের কথা ভাবা হচ্ছে। আর জেলা পরিষদের বর্তমান আইন দিয়ে দলীয়ভাবে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এজন্য আইন সংশোধন করতে হবে। আইন সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু এতে বিলম্ব হওয়ায় সরকার অধ্যাদেশ জারির পরিকল্পনা নিয়েছে। মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সব কাজ গুছিয়ে এনেছে। এলাকা নির্ধারণসহ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার যে কোনো মূল্যে জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে অনড়। এজন্য দুই-তিন দিনের মধ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হবে। এই অধ্যাদেশবলেই অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। পরে অধ্যাদেশটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। সেখানেই অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত হবে।
এর আগে দলীয়ভাবে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গত বছর ১১ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) (সংশোধনী) বিল-২০১৫ উত্থাপিত হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এটি উত্থাপন করেন। এর চার দিনের মাথায় (১৫ নভেম্বর) বিলটি তিনিই আবার প্রত্যাহার করে নেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধানে ৫৯ অনুচ্ছেদের ১ উপধারায়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালনার স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। এতে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ডিসি সম্মেলনের পর থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচন করতে সরকার তৎপর। এ জন্য বিদ্যমান আইনে কিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে। সরকার চাইলে আগে অধ্যাদেশ জারি করেও এ নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। যেটা পৌরসভায় হয়েছে।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বছর নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরের মধ্যেই পার্বত্য তিন জেলা বাদে একযোগে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও জানানো হয়। পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনও দলীয়ভাবে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০০০ সালে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো বিধিমালা তৈরি হয়নি। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এ আইন প্রয়োগযোগ্য নয়। আইন সংশোধন করে অন্যান্য স্থানীয় সরকার আইনের মতো এর বিধিমালা তৈরির ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।
১৬ বছর আগে আইন প্রণয়নের পর জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ-পদবিতে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আগে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় কমিশনার পদ ছিল, এখন কাউন্সিলর হয়েছে। পৌরসভার চেয়ারম্যান পদটি মেয়র হয়েছে। উপজেলা পরিষদে দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যপদ সৃষ্টি হয়েছে। ইসি বলছে, জেলা পরিষদ আইন অনুসারে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়র, চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে নির্বাচকম-লী গঠন করে তাদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচন করতে হবে। ফলে জেলা পরিষদ আইনে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু পদ-পদবিতে পরিবর্তনের জন্য সংশোধনী আনতে হবে। অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করতে চাইলে বিষয়টি আইনে সংযুক্ত করতে হবে।
ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ বিষয়ে এখনো আমাদের কিছু জানানো হয়নি। জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইনে বলা আছে, সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে যে তারিখ নির্ধারণ করবে, সে তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।