পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছুটিতে এসে আটকেপড়া প্রবাসী জাফর মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবির ইকামায় রেড সিগন্যালের বেড়াজালে পড়ে রাজধানীর দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। স্বপ্নের দেশ আবুধাবির কর্মস্থলে কবে যোগ দিতে পারবেন সে চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যথাসময়ে কর্মস্থলে যোগদান করতে না পারলে চাকরিসহ দীর্ঘ তের বছরের সার্ভিস বেনিফিটসহ অন্যান্য সুবিধাদিও হাত ছাড়া হবে।
নগরীর ট্রাভেলস এজেন্সিগুলোতে ধরনা দিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না ফেনীর দাগুনভূঁয়ার প্রবাসী জাফর। কবে ভাগ্যে যুটবে আবুধাবির গ্রিন সিগন্যাল তা’ কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। ছুটিতে আটকে পড়া বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিরা একই শঙ্কায় ভুগছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে আবুধাবি থেকে দেশে ছুটিতে এসে আটকে পড়েন তিনি। দেশটিতে লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে।
মহামারি করোনাভাইরাসের চলমান সঙ্কটের মধ্যেও প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের ১৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১২১ কোটি মার্কিন ডলার। সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের ইতিহাসে একক মাসের মাত্র ১৫ দিনে এর আগে কখনো এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জুলাই থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার (১০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪২ শতাংশ বেশি। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭০৭ কোটি ৩০ লাখ (৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। প্রবাসী আয়ের এ উর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকার জন্য সরকারের ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
করোনা মহামারিতে ছুটিতে দেশে এসে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীরা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। করোনা মহামারির আগে তেল সমৃদ্ধ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে কর্মরত লাখ লাখ প্রবাসী কর্মীদের দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল। দেশটির বিভিন্ন কফিলের সম্মতি নিয়ে হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী ছুটিতে দেশে এলে শুরু হয় করোনার সংক্রমণ। থেকে ছুটি এসে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীরা চরম অনিশ্চয়তার মুখে।
এদিকে বিএমইটি’র সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশে কাজ না থাকায় এবং নানা কারণে গত ১ এপ্রিল থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিদেশ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৩ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেই দেশে ফিরেছে ৪৬ হাজার ৪৩ জন প্রবাসী কর্মী।
ছুটিতে এসে দীর্ঘ আট মাস ধার দেনা করে সংসারের ঘানি টানছেন প্রবাসী জাফর। করোনার দুর্দিনে এখন প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনরাও ধার দিচ্ছে না। মুদি দোকানেও বাকিতে চাল-ডাল দিতে অনিহা প্রকাশ করছে। ছেলে মেয়েদের পড়া-লেখার খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। প্রবাসী জাফর কান্না জড়িত কন্ঠে গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে এসব কথা বলেন। দীর্ঘ ১৩ বছর আবুধাবির ডেলটা ডিজাইন কোম্পানীতে প্রবাসী জাফরের দিনকাল ভালোই কাটছিল। করোনা সংক্রমণে ছুটিতে দেশে এসে তিনি এখন দেশটির কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। করোনা সংক্রমণের দরুণ হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী একই সমস্যায় পড়েছেন। দেশটির কফিল মি. হাদি প্রবাসী জাফরকে বার বার তাগিদ দিচ্ছে তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। প্রবাসী জাফরের ইকামার মেয়াদ ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত রয়েছে। প্রবাসী জাফর আটকে পড়া রেড সিগন্যালধারী বাংলাদেশি কর্মীদের ইকামা গ্রিন সিগন্যাল করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অন্যথায় এসব প্রবাসী কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থানের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এতে জনশক্তি রফতানিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। দাগুনভূঁইয়ার হানিফও ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়ে বিপাকে পড়েছেন। তার ইকামাও রেড সিগন্যাল দেখাচ্ছে।
এদিকে, আবুধাবি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ছুটিতে আটকে পড়া অভিবাসী কর্মীদের ইকামা গত এক মাস ধরে রেড সিগন্যাল করে রেখেছে। কোনো এয়ারলাইন্সই রেড সিগন্যালধারী প্রবাসী কর্মীদের দেশটির টিকিট দিচ্ছে না। আবুধাবি ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর রেড সিগন্যালধারী প্রবাসীদের ইকামা যে দিন গ্রিন সিগন্যাল করে দেবে সেদিন থেকেই আটকে পড়া এসব কর্মী দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ পাবে। বায়রার নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
আটাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জুম্মন চৌধুরী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ছুটিতে বাইরের দেশে আটকে পড়া আবুধাবি ও এলাইন শহরের অভিবাসী কর্মীদের ইকামা গত এক মাস ধরে রেড সিগন্যাল করে রেখেছে। এতে রেড সিগন্যালধারী প্রায় দশ হাজার প্রবাসী কর্মী ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। এদের অনেকেরই ভিসা ও ইকামার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ কিছুটা শিথিল হওয়ায় গত জুলাই মাস থেকে গত তিন মাসে দেশটিতে চড়া দামে টিকিট কিনে অনেকেই চলে গেছে। যারা চড়া দামে টিকিট কিনতে পারেনি তারা দেশটিতে যেতে পারেনি।
করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশি কর্মীরা যেন চাকরিচ্যূত হয়ে দেশে ফেরত না আসে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত জুন মাসের প্রথম দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সাথে ফোনালাপকালে তিনি এ অনুরোধ করেন। আমিরাতের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, কেউ চাকরিচ্যূত হলেও যেন কমপক্ষে ৬ মাসের সমপরিমাণ ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পায়। তিনি সেদেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য ইউএইর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। জবাবে এ সব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্ত্রী নাহিয়ান আশ্বস্ত করেন।
বায়রার ইসির অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আলী গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইনকিলাবকে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে বাংলাদেশের সুসর্ম্পক রয়েছে। দেশটি মাত্র দু’টি রাজ্যে প্রবাসী কর্মীদের ইকামা রেড সিগন্যাল দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে ছুটিতে আটকে পড়া কর্মীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। তিনি বলেন, দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত যদি কূটনৈতিক উদ্যোগ নেন তা হলে আটকে পড়া কর্মীদের ইকামা গ্রিন সিগন্যাল করার বিষয়টি দ্রæত সুরাহ সম্ভব। তিনি এ ব্যাপারে অবিলম্বে কূটনৈতিক পর্যায়ে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় জনশক্তি রফতানি খাতে আরো ব্যাপক ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে বলেও বায়রা নেতা উল্লেখ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।