Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভ্যাট প্রক্রিয়া সহজতর করতে হবে

ঢাকা চেম্বারের আলোচনায় বক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘অর্থ আইন ২০২০ এবং মূল্যসংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ শীর্ষক অনলাইনভিত্তিক ওয়ার্কশপ গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্কশপে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক এবং সদস্য (আয়কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন।

ওয়ার্কশপের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারির কারণে এ বছর সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়েছে, এমতাবস্থায় ২০২০-২১ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা এবং এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সাথে ঢাকা চেম্বার একযোগে কাজ করছে। তিনি বলেন, এনবিআর চলতি বছর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করেছে, যা গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। শামস মাহমুদ বলেন, সরকারের বিশাল ব্যয়ের জন্য অর্থসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি এ বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা কর ও ভ্যাট প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার জন্য আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই এবং এজন্য করের আওতা বৃদ্ধি, ট্যাক্স ও ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন করা, রিফান্ড পদ্ধতি সহজীকরণ করা একান্ত আবশ্যক প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি শিল্পখাতের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে স্থাপিত নিবন্ধিত কারখানাসমূহকে লিজরেন্টের উপর মূসক অব্যাহতি দেয়ার আহ্বান জানান এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারী খাতের উদ্যোক্তাদের বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়ার নিমিত্তে কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর হ্রাস করের প্রস্তাব করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, চেম্বারের সদস্যদের পাশাপাশি অন্যান্য করদাতাদের কর প্রদান প্রক্রিয়া বোধ্যগম্য ও সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ‘ট্যাক্স গাইড ২০২০-২১’ প্রকাশ করেছে। ডিসিসিআই সভাপতি করোনো মহামারি সময়ে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া সহজতর করার উপর প্রস্তাব করেন।

এনবিআর’র সদস্য (আয়কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, দেশের অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখা, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান রাখা এবং কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চলতি বছরের বাজেট প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, করদাতাদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে, সরকার কর কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং আগামী বছর হতে অনলাইনে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদান প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলমগীর হোসেন বলেন, বছরের যে কোনো সময়ে এসআরও জারির মাধ্যমে ট্যাক্স হার কমানো-বাড়ানোর, ফলে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিঘ্নিত হয় এবং এ অবস্থা উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদে করনীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নে এনবিআর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আরজেএসসিতে বর্তমানে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার, যার মধ্যে টিনধারী কোম্পানির সংখ্যা ৭০-৭৫ হাজার এবং মাত্র ৩৬ হাজার কোম্পানি প্রতিবছর রিটার্ন দাখিল করে থাকে। তিনি নিবন্ধিত সকল প্রতিষ্ঠানকে রিটার্ন দাখিলের আহ্বান জানান।

এনবিআর-এর সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সমাজের ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রক্রিয়া সহজতর করার দাবি জানিয়ে আসছে এবং এনবিআর’র পক্ষ হতে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে। তিনি আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাবনাগুলো এনবিআর’র নিকট লিখিতভাবে জমাদানের পাশাপাশি খাতভিত্তিক প্রস্তাবনাসমূহ আলাদা আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট বিভাগে জমাদানেরও প্রস্তাব করেন। মাসুদ সাদিক জানান, ভ্যাট রিফান্ড প্রক্রিয়াসম্পন্ন করতে অনেক ক্ষেত্রেই বিলম্ব হচ্ছে, তবে এ প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য এনবিআর কাজ করছে। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরে হতে তা আরো ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সকলেরই ভোগান্তি লাঘব হবে। তিনি বলেন, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য রাজস্ব আহরণের কোনো বিকল্প নেই, তবে সেটা যেন সকলের জন্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে।

উক্ত ওয়ার্কশপে ডিসিসিআই’র আহ্বায়ক এম শফিকুল আলম এবং ডিসিসিআই ট্যাক্স কনসালটেন্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া যথাক্রমে ‘জাতীয় বাজেটে ঢাকা চেম্বারের প্রস্তাবনা ও ব্যবসায়িক খাতে-এর প্রভাব’ এবং ‘ফিন্যান্স এ্যাক্ট ২০২০-এর প্রধান প্রতিবন্ধকতা’ শিরোনামে দুটো মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। শফিকুল আলম বলেন, অনলাইনে ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া চালুকরণ এবং ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া আরো সহজীকরণের জন্য এনবিআর-এর প্রতি আহ্বান জানান। স্নেহাশীষ বড়ুয়া অগ্রিম কর প্রদান প্রক্রিয়া অটোমেশন করার প্রস্তাব করেন এবং কর রেয়াত নেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর জন্য এনবিআরকে সাধুবাদ জানান।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন, ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বাশির উদ্দিন প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্যাট-প্রক্রিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ