Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

দালাল চক্রের সন্ধানে মাঠে পুলিশ

এএসপি শিপন হত্যাকান্ড

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

মাইন্ড এইড হাসপাতালের আরেক পরিচালক গ্রেফতার

চিকিৎসার নামে মারধর করে পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনকে হত্যার অভিযোগে মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক ফাতেমা খাতুন ময়নাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে ফাতেমা খাতুনকে তার রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে হাসপাতালটির দুই পরিচালকসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
এর আগে গ্রেফতার ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত মঙ্গলবার আদালত সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াজ অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তখন তার জন্য রিমান্ড আবেদন করেনি পুলিশ।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশীদ জানান, আজ হাসপাতালের দুই পরিচালককে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। ইতিমধ্যে যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের বোনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
রিমান্ডে নেয়া আসামিরা হলেন- মাইন্ড এইড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন শেফ মো. মাসুদ, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, ফার্মাসিস্ট মো. তানভীর হাসান, ওয়ার্ডবয় মো. তানিম মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, মো. লিটন আহাম্মদ ও মো. সাইফুল ইসলাম পলাশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কেউ মাউন্ড এইডে চিকিৎসা নিতে এলে প্রথমেই তাকে দোতলার বারান্দা ঘেঁষা ১০ ফুট বাই ৬ ফুটের ওই কক্ষে নিয়ে পেটানো হয়। অন্য রোগীদের মতো আনিসুল করিমকেও মারধর করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মারা যেতে পারেন, এমনটা তারা বুঝতে পারেনি।
সূত্র আরো জানায়, দালালদের মাধ্যমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভাগিয়ে নেয়া হতো মাইন্ড এইডে। রোগীদের বলা হতো সেখানকার পরিবেশ অনেক উন্নত এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত¡াবধানে চলে চিকিৎসা কার্যক্রম।

রিমান্ডে থাকা ওয়ার্ডবয়রা তদন্তসংশ্লিষ্টদের জানিয়েছে, দালাল চক্রের পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মাধ্যমেও রোগীদের ভাগিয়ে আনা হতো মাইন্ড এইডে। বিনিময়ে তাদের দেয়া হতো মোটা অঙ্কের কমিশন। এসব নিয়ন্ত্রণ করত প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়। জয় প্রথমে দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও পুলিশ কর্মকর্তাদের জেরার মুখে সে চুপ হয়ে যায়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জয় জানিয়েছে, সে তিতুমীর কলেজ থেকে বিএ পাস করেছে। আর রেদওয়ান সাব্বির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছে। তারাসহ গ্রেফতার হওয়া কারও কোনো প্রশিক্ষণ নেই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে থাবা সবাই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে দালালদের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে তারা। তাদের দেয়া তথ্যমতে দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।
আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মারুফ মোল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের বাবা। এ পর্যন্ত ১২জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, রাজধানীর আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিংয়ের ২ নম্বর সড়কের ২৮১ নম্বর বাড়িটিতে অবৈধভাবে চলছিল মাইন্ড এইড নামের এ মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি। মানসিক সমস্যার চিকিৎসা নিতে গত সোমবার সেখানে ভর্তির কয়েক মিনিটের মাথায় মারা যান সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম।

নিহত আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ওই বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারের মেধাতালিকায় দ্বিতীয় ছিলেন। প্রথমজন ফাউন্ডেশন কোর্স না করায় তাকেই ব্যাচের প্রথম হিসেবে ধরা হতো। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে ট্রাফিক বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে তিনি নেত্রকোনা জেলা, ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‌্যাব ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে দায়িত্ব পালন করেন। তবে পুলিশের এই কর্মকর্তা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ জন্য তাকে মানসিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এএসপি শিপন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ