Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতের প্রবৃদ্ধিতে একসাথে হুয়াওয়ে ও আইসিটি বিভাগ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৭:২৬ পিএম | আপডেট : ৭:৫৮ পিএম, ১২ নভেম্বর, ২০২০

দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং আইসিটি খাতের জন্য প্রতিভাবান তরুণদের স্বার্থে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথোরিটির (বিএইচটিপিএ) সাথে বাংলাদেশে চারটি আইসিটি প্রোগ্রাম চালু করতে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। এ নিয়ে উল্লেখিত তিন পক্ষের মধ্যে বৃহষ্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিসিসি মিলনায়তনে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এই চুক্তির আওতায় শিগগিরই শিক্ষার্থী, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়, ডেভেলপার, স্টার্ট আপ এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০’, ‘আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার’, ‘হুয়াওয়ে আইসিটি অ্যাকাডেমি’ এবং ‘কিউরেটিং বাংলাদেশি স্টার্টআপস’ -শীর্ষক চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রোজেক্ট শুরু হবে। এর মধ্য থেকে বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০, আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার এবং কিউরেটিং বাংলাদেশি স্টার্টআপস -এই তিনটি আয়োজনে হুয়াওয়ের সাথে একযোগে কাজ করবে বিসিসি। হুয়াওয়ে আইসিটি অ্যাকাডেমি সংশ্লিষ্ট কাজে হুয়াওয়ের পাশে থাকবে বিএইচটিপিএ। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বোধনের দিন থেকে পরবর্তী অন্তত তিন বছরের জন্য নিজ নিজ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ রেজাউল করিম, এনডিসি, মহাপরিচালক, ডিএসএ, প্রকল্প পরিচালক, এলআইসিটি প্রকল্প। শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং ঝেংজুন। এ সময় অতিথিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন হোসনে আরা বেগম, এনডিসি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব), বিএইচটিপিএ; এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ, জ্যেষ্ঠ সচিব, আইসিটি বিভাগ; পার্থপ্রতীম দেব, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং অন্যান্যরা।

 

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমাদের সমস্ত উদ্যোগ এবং প্রকল্পগুলি তরুণ, আইসিটি এবং কর্মসংস্থাননির্ভর। এই চুক্তিটি তরুণ শিক্ষার্থী, আমাদের গবেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমাদের উদ্ভাবকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হবে। একই সাথে হুয়াওয়ের উদ্ভাবিত বিশ্বের সর্বশেষতম প্রযুক্তিগুলির অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে। এবং এই চুক্তির আওতায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং একাডেমিয়ার মধ্যকার ব্যবধানও কমাতে সক্ষম হবে। দ্বিতীয়ত আমরা কিছু বিশবিদ্যালয়ে একটি বিশেষ একাডেমি স্থাপন করতে যাচ্ছি। সেখানে আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়কে সংযুক্ত করার সুযোগ পাবে এবং তাদের আর্থিক সহায়তা পাওয়ারও সুযোগ থাকবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের যাত্রায় অবদানের জন্য আমরা হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের কাছে সত্যই কৃতজ্ঞ।’

 

ঝ্যাং ঝেংজুন বলেন, ‘আধুনিক সময়ে যেকোনো দেশের যেকোনো শিল্পখাতের জন্য একটি ডিজিটাল কাঠামো থাকা আবশ্যক। এজন্য নতুন ও পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে দেশের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে তরুণদের মধ্যে আইসিটি খাতে দক্ষতা থাকা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আমাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে আইসিটি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির উৎসাহ তৈরি করবে, যার ফলশ্রুতিতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নটি ধীরে ধীরে বাস্তবতার পথে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগের সাথে একজোটে কাজ করতে পেরে ও বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের পথে সঙ্গী হতে পেরে হুয়াওয়ে অত্যন্ত গর্বিত।’

হোসনে আরা বেগম বলেন, বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে প্রস্তুত করে তুলতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প ২০২১’ এর ঘোষণা করেন। সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল দেশ পেতে আইসিটি ও যোগাযোগ শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট সকল খাতের মধ্যে সংযোগ থাকতে হবে। দেশের প্রবৃদ্ধির জন্য এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হতে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথোরিটির পক্ষ থেকে নিরলস সহায়তার জন্য আমি হুয়াওয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। দেশের স্টার্টআপ খাত, আইসিটি উদ্ভাবন এবং তরুণদের উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে হুয়াওয়েকে অংশীদার হিসেবে পেয়ে আমরা আনন্দিত।

 

পার্থপ্রতীম দেব বলেন, স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠায় আমাদের অবস্থানকে জোরদার করে তুলতে এবং আমাদের চীনের প্রযুক্তির সুফল ভোগ করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য হুয়াওয়েকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। আমাদের তরুণদের জন্য ইনোভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং আইসিটি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহায়তার জন্য চীন সরকার এবং হুয়াওয়েকে বিশেষ ধন্যবাদ।

দু’মাসব্যাপী ‘বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০’ কর্মসূচিটি আগামী ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে। হুয়াওয়ে ও বিসিসি’র পক্ষ থেকে দেশের নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করা হবে। এছাড়া, প্রাথমিকভাবে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল সংক্রান্ত বিভাগের পক্ষ থেকে বিসিসি বা হুয়াওয়ের সাথে যোগাযোগ করেও তালিকাভুক্ত হওয়া যাবে। শুধুমাত্র নিবন্ধিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্রহী শিক্ষার্থীগণ এই প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত হতে পারবেন এবং অনলাইনে কোর্স ও পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের গ্রুপগুলোকে প্রশিক্ষণের জন্য থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট শিক্ষকগণ। প্রিলিমিনারি, সেমিফাইনাল এবং জাতীয় পর্যায়ের পর শীর্ষ তিনটি গ্রুপ হুয়াওয়ে আইসিটি কম্পিটিশনের রিজিওনাল ফাইনালে এবং বৈশ্বিক ফাইনালে অংশ নিতে পারবে।

 

‘আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার’ কর্মসূচিতে বিসিসি ও হুয়াওয়ে’র সমন্বয়ে একটি যৌথ দল গঠন করা হবে, যার উদ্দেশ্য হবে এই ইনোভেশন সেন্টারের মাধ্যমে সরকারি মালিকানাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করা। এর মধ্য দিয়ে আইসিটি কর্মক্ষেত্র তৈরি, আইসিটি-মেধাবীদের বের করে আনা এবং আইসিটি ভিত্তিক প্রযুক্তি ও ইকোসিস্টেম তৈরি – ইত্যাদি প্রসঙ্গে বিসিসি’কে সহায়তা দান করা হবে। পাশাপাশি, ডেভেলপাররা এর মাধ্যমে হুয়াওয়ে ও বিসিসি’র কাছ থেকে আইসিটি প্রশিক্ষণ ও সহায়তাও গ্রহণ করতে পারবেন। ফলে, একদিকে যেমন তারা বিনামূল্যে কম্পিউটার ও এআই প্ল্যাটফর্মের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, অন্যদিকে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ও বাজার পরিচিতির প্রশ্নে সময়ও সাশ্রয় করতে পারবেন।

‘হুয়াওয়ে আইসিটি অ্যাকাডেমি’র লক্ষ্য শিল্পখাত ও অ্যাকাডেমির মধ্যে আইসিটি বিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতার মধ্যে ব্যবধান দূর করা। এ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে হুয়াওয়ে আইসিটি অ্যাকাডেমি প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ দিবে, হুয়াওয়ের সনদ গ্রহণে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে এবং আইসিটি শিল্পখাত এবং কমিউনিটির জন্য মেধার বিকাশ করবে। এবং পাশাপাশি, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) -এর শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারে একটি করে আইসিটি অ্যাকাডেমির কাঠামো এবং ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার দায়িত্বে যৌথভাবে নিয়োজিত থাকবে হুয়াওয়ে এবং বিএইচটিপিএ। সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই এ কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

‘কিউরেটিং বাংলাদেশ স্টার্টআপ’ হতে যাচ্ছে এমন একটি কেন্দ্রস্থল যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, গবেষক, বিনিয়োগকারী, সরকারসহ অনুরূপ যে কোনো পক্ষ একসাথে যুক্ত হয়ে আইসিটি পণ্য উদ্ভাবনে কাজ করবে। এছাড়াও, বাংলাদেশের স্টার্টআপ কালচারের জন্য লোকাল এবং গ্লোবাল ফ্রন্টিয়ার সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার পরিকল্পনা করছে বিসিসি এবং বিএইচটিপিএ, যার মাধ্যমে দেশের এবং দেশের বাইরের উদ্যোক্তাগণ একসাথে মিলে পরিকল্পনা গঠন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বাস্তবায়নের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা অর্জন করেন। এর ফলে এই প্রোগ্রামটির মাধ্যমে দেশের গোটা স্টার্টআপ সংস্কৃতিই গতিশীলতা অর্জন করতে পারবে।

 

উল্লেখিত কর্মসূচিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশনটি আগামী মাস থেকে শুরু করার পরিকিল্পনা রয়েছে। এই প্রতিযোগিতাটি মূল দুইটি অংশে বিভক্ত থাকবে, যেমন- প্রাক্টিক্যাল কম্পিটিশন এবং ইনোভেশন কম্পিটিশন, ফলে অংশগ্রহণকারীদের পুঁথিগত দক্ষতার পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজের দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত খাতে পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়নে উদ্ভাবনীক্ষমতার দক্ষতাও যাচাই করা সম্ভব হবে। সুরক্ষা, বিগ ডাটা ও এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রভৃতির মত কৌশলগত বিষয়াদি এই প্রতিযোগিতায় উঠে আসবে। ইনোভেশন কম্পিটিশন অংশে আইওটি সল্যুশন ও ক্লাউড সার্ভিস সল্যুশনের মত দক্ষতার জায়গাগুলোতে জোর দেওয়া হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হুয়াওয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ