Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। দেশের উপক‚লের ৭১০ কিলোমিটার এলাকার দেড় কোটি মানুষের কাছে এক বিভিষিকার রাত। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আড়াইশ’ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসে ঘূর্ণিঝড়। বৃহত্তর বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপক‚লের ১০ জেলার বিশাল জনপদকে ভাসিয়ে নিয়েছিল। প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নিখোঁজ হলেও তাদের বেশিরভাগই ফেরেনি। নিকটজনরা তাদের লাশেরও কোন সন্ধান পাননি। ঘূর্ণিঝড়ের পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীসহ অনেক রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপদ্রæত এলাকায় ছুটে যান।

সে রাতে যে ভয়াবহ বিভিষিকা নেমে এসেছিল তা গোটা বিশ্বে বিরল। তাই নভেম্বর এলেই গোটা উপক‚লীয় এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে থাকেন। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর আড়াইশ’ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে এসে বরিশাল, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরের বিশাল এলাকাকে লন্ডভন্ড করে দেয়। গত বছর ১১ নভেম্বর আরেক ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚লে আঘাত হানে। সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বনভূমি সে ঝড়কে প্রতিহত করায় দুর্বল হয়ে যায়। ‘৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের আলোকে গড়ে তোলা রেড ক্রিসেন্টের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) অর্ধ লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবী উপক‚লবাসীকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। ফলে সিডর ও বুলবুলে প্রাণহানি আশাতীতভাবে হ্রাস করা সম্ভব হয়। তবে সিডরের তান্ডব এবং ক্ষয়-ক্ষতি ব্যাপক ছিলো।

প্রকৃতির সাথে বঙ্গোপসাগরের বিচিত্র লীলার যে ভয়ঙ্কর রূপ, তার অস্তিত্ব অনুভব করতে গিয়ে দেশের উপকূলবাসীকে বার বার ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ পরবর্তী পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ ধরে উপকূলে আঘাত হানছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

গত দুই শতকে উপকূলভাগের অন্তত ২৫ লাখ মানুষের প্রানহাণি ঘটেছে। সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও অন্তত ১০ লাখ কোটি টাকা। এরপরেও প্রকৃতির সাথেই লড়াই করেই বেঁচে আছেন উপকূলসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ। তবে একের পর এক প্রকৃতির তান্ডব অব্যাহত থাকলেও উপকূলবাসীর নিরাপদ আশ্রয় ও প্রাণিসম্পদ রক্ষার বিষয়টি পরিপূর্ণ নিশ্চিত হয়নি। যদিও আগাম সতর্কতার কারণে প্রাণহাণির সংখ্যা আশাতীতভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে অন্তত ৫ লাখ মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিশ্চিত হয়েছে। তবে প্রাণিসম্পদের কোন আশ্রয়স্থল নির্মিত হয়নি।

সেই বিভিষিকাময় রাত আজো উপক‚লের বয়োজ্যেষ্ঠদের তাড়া করছে। স্বজনহারা সব বয়সী মানুষ দুঃসহ যাতনা নিয়েই স্মরণ করছেন ভয়াল ১২ নভেম্বরকে। ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের স্মরণে আজ ভোলাসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর

১২ নভেম্বর, ২০২২
১২ নভেম্বর, ২০২০
১২ নভেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ