Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মাদকের ছোবল গ্রামে গঞ্জে

প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ১৭ আগস্ট, ২০১৬

নূরুল ইসলাম
১২ আগস্ট শুক্রবার কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। উদ্ধারকৃত ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মাত্র দু’দিন আগে ১০ আগস্ট বুধবার টেকনাফ বাস স্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে ৫০হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে কোস্টগার্ড সদস্যরা। গত ১৫ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে অভিযান চালিয়ে এক লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। ওই দিন ভোরে নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় একটি চালান আসার খবরে বিজিবির সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন। এ সময় ওই এলাকায় সন্দেহভাজন তিনজনকে দেখতে পেয়ে বিজিবির সদস্যরা থামার জন্য সংকেত দিলে তারা দৌড়ে প্যারাবনের ভিতর দিয়ে পালিয়ে যায়। সে সময় তারা পলিথিনের বড় একটি ব্যাগ ফেলে যায়। পরে ওই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে পলিথিন মোড়ানো ১০টি ছোট প্যাকেট থেকে এক লাখ ইয়াবা পাওয়া যায় বলে বিজিবি জানায়। উদ্ধারকৃত ইয়াবার দাম আনুমানিক তিন কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে উদ্ধারকৃত ইয়াবার মূল্য ৮ কোটি টাকারও বেশি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, দেশে যে পরিমাণ ইয়াবা ধরা পড়ে, তার চেয়ে কয়েকশ’ গুণ বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। উদ্ধারকৃত এই ইয়াবার পরিসংখ্যানই বলে দেয় শুধুমাত্র টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা আসছে। মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। ভয়ঙ্কর ইয়াবার বিস্তার এখন শুধু শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকাসহ দেশের যেকোনো জেলা, উপজেলা, এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও হাত বাড়ালেই ইয়াবা পাওয়া যায়। মাদকাসক্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক মাস যাবত পুলিশ ব্যস্ত জঙ্গি নিয়ে। এই সুযোগে রাজধানীসহ সারাদেশেই বেড়ে গেছে মাদকের বেচাকেনা। যেসব এলাকায় জঙ্গি ইস্যুতে পুলিশের নজরদারি আছে সে সব এলাকায় মহাসড়ককে বেছে নিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকার ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও সচ্ছল পরিবারে ঢুকে পড়েছে মাদক। এতে করে সংসার জীবনে অশান্তি ও ভাঙ্গন লেগেই আছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ বরাবরই জিরো টলারেন্স দেখানোর কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই দেখা যায়। বরং পুলিশকে ম্যানেজ করেই দেশের গ্রামে-গঞ্জে এখন মাদকের বেচাকেনা চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিগত ৫ বছরে দেশে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে ৮১ গুণ। ইয়াবা উদ্ধারের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ৮১ গুণ বেশি ইয়াবা ধরা পড়েছে। উদ্ধারকৃত ইয়াবার সংখ্যা থেকে এই তথ্য বের করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১০ সালে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭১৬ পিস, ২০১১ সালে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ১৮৬, ২০১২ সালে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৯২, ২০১৩ সালে ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫২৮, ২০১৪ সালে ৬৫ লাখ, ১২ হাজার ৮৬৯ এবং ২০১৫ সালে ২ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫ পিস। তবে উদ্ধারের এই পরিসংখ্যানের সাথে বাস্তবতার অনেক ফারাক। খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই মনে করেন, এর চেয়ে বহুগুণ বেশি ইয়াবা বেচাকেনা ও ব্যবহার করা হচ্ছে।
সীমান্ত হয়ে যেভাবে আসে ইয়াবা
গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় অভিবাসী সূত্রে জানা গেছে, শুধু বাংলাদেশে পাচারের জন্যই মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ৩৮টি ইয়াবা কারখানা। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন ৩০ লাখেরও বেশি ইয়াবা টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম সীমান্তের ৪৩টি পয়েন্ট দিয়ে আসছে। সূত্র জানায়, মিয়ানমারের মংডু হতে বিভিন্ন প্রকার ফিশিং বোটের মাধ্যমে টেকনাফের স্থলবন্দর, শাহপরীর দ্বীপ, মাঝিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, ট্রানজিট ঘাট, নাইট্যংপাড়া, সাবরাংয়ের লেজিপাড়া ও বার্মাপাড়া পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই দেশে লাখ লাখ পিচ ইয়াবা আসছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফের সাগরদ্বীপ, নয়াপাড়া, নাজির পাড়া, জেলেপাড়ায় প্রতি রাতে বসে ইয়াবার হাট। সেখানে মিয়ানমার থেকে আসা লাখ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের পাইকারি বেচাকেনা চলে। নৌকা নিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার মজুদ নিয়ে টেকনাফে ঢুকে মিয়ানমারের আকিয়াবের মংডু এলাকার কয়েকজন চিহ্নিত পাচারকারী। তারা সকলেই রোহিঙ্গা। টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম সীমান্ত এলাকায় এই সিন্ডিকেটের একাধিক নকল ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে। পাজেরোসহ দামি দামি গাড়িতে ‘প্রেস’ ‘সাংবাদিক’ বিভিন্ন এনজিও এমনকি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক দপ্তরের স্টিকার লাগিয়েও অহরহ ইয়াবা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইয়াবা একমাত্র মরণ নেশা যা সেবনকারীকে একদিন ব্যবসায়ী বানিয়ে ফেলে। উত্তরাধিকার সূত্রেও ঘরে ঘরে ইয়াবার ব্যবসায়ী তৈরী হচ্ছে। আকারে ছোট বলে বেচাকেনায় ঝুঁকি কম। আবার ক্ষুদ্র জিনিস হলেও বিক্রিতে লাভ হয় কয়েকগুণ। শুধু নেশা কাজে নয়, ইয়াবা এখন নানাবিধ কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর জন্য ইয়াবাকে ব্যবহার করছে এক শ্রেণির অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা। রাজধানীতে এমন কোনো থানা এলাকা পাওয়া যাবে না যেখানে ইয়াবা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর ঘটনা ঘটেনি বা চেষ্টা হয় নি। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, ইয়াবাকে ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানো এবং মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করার নেপথ্যে কাজ করে পুলিশের সোর্সরা। তারাই হাতে করে ইয়াবা নিয়ে মানুষের পকেটে অথবা ঘরের কোনো স্থানে রেখে পুলিশকে দিয়ে ধরিয়ে দেয়। রাজধানীর শ্যামপুর, মিরপুর, কদমতলী, ডেমরা, মোহাম্মদপুর থানায় এরকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, ইদানিং পুলিশের চেক পোস্টেও সোর্সরা নিরীহ মানুষের পকেটে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। উপায়ান্ত না দেখে ভুক্তভোগীরা পুলিশের দাবিকৃত অংকের টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে পুলিশ তৎপর হলে মাদকের বেচাকেনা অনেকটা কমে যায়। থানাগুলোতে মাদকবিরোধী বিশেষ টিম গঠন করার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা গাঢাকা দিতে বাধ্য হয়। ঈদুল ফিতরের আগে গুলশানে হামলার ঘটনার পর পুলিশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে জঙ্গি নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ভিআইপি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এছাড়া জঙ্গি নিয়ে পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালনার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ভাটা পড়েছে মাদকবিরোধী অভিযানে। এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকায় মাদকের ব্যবসা এখন জমজমাট। দিনে রাতে অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হোরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য। এ কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করছে থানা পুলিশের কতিপয় সোর্স, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, ছাত্রনেতাসহ কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসা তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকটি স্পটে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করছে লিটন ওরফে কুত্তা লিটন, রানা, রাসেল, হানিফ, আজম, ছাগলা বাবু, নাসির, রাজু, করিম, কিরণ, জালাল, হান্নান, রহিম, এরশাদ, আরমান, মাসু, জুয়েল, লিচিং, শুক্কুর ও আক্কাস। এরা বিক্রি করে হেরোইন ও ইয়াবা। যাত্রাবাড়ী থানার কথিত সোর্স কবির, আসিফ, সোবহান মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েক দিনের জন্য মাদক ব্যবসা বন্ধ হলেও পরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পার পেয়েছে। এসব এলাকা ছাড়াও রাজধানীর শ্যামপুর, মতিঝিল, পল্টন, লালবাগ, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, খিলগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, তুরাগ, খিলক্ষেত, সবুজবাগসহ বিভিন্ন থানা এলাকার সোর্স, প্রভাবশালী সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতা, জেল ফেরত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করছে। শ্যামপুরে মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ায় ৮ জুলাই রাতে খুন হয় শাহেদ নামে এক যুবক। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুরান ঢাকার এ্যাডভোকেট মন্ডল হত্যা মামলার আসামী মালেক রহমান মুক্তি পাওয়ার পর থেকে ঢালকানগরসহ পুরো শ্যামপুর থানা এলাকা মাদকে ভাসছে। মালেকের শত শত সহযোগী প্রকাশ্যে বিক্রি করছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। এ নিয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে বা বাধা দিলে গেলেই তাকে প্রথমে হুমকী ধমকি এবং পরে মারপিট করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জেল থেকে বের হওয়ার পর মালেক তার আধিপত্য বিস্তারের জন্যই কোটি কোটি টাকার ধান্দায় মাদক ব্যবসা শুরু করে। ঢালকানগর ছাড়াও শ্যামপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়েও একই চিত্র পাওয়া গেছে। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা অনেকটা আয়েশেই দিন কাটাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের ধারণা, ‘পুলিশ এখন জঙ্গি ধরায় ব্যস্ত।’
কদমতলী থানার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, কিছু সোর্সের যোগসাজশে এখানকার মাদক ব্যবসা জমজমাট। কদমতলী থানা এলাকার দু’শতাধিক স্পটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাদক বিক্রি হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, বড়ইতলার বিল্লাল, দোলাইপাড়ের ৩নং গলির দুলাল, শ্যামপুর পালপাড়ার মাদক সম্রাট ফরহাদ এই এলাকার সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসায়ী। এরা প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার মাদক বিক্রি করে। এ ছাড়াও যারা প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে তারা হলো, মুরাদপুর জিরো পয়েন্টে পিস্তল কামাল, বিড়ি ফ্যাক্টরী সোহাগ, বউ বাজারে আনোয়ারের বউ আলেয়া, সরাই মসজিদ রোডের মতি মিয়া, চায়না বাবুল, শ্যামপুর রানী স্টীলের পাশে মনসুরের ফার্মেসী, লাবুর বাড়ীর শাহেদ, বদনা রনি, লাইজু, ২৪/১ আলমবাগের মাদক সম্রাট আউয়াল, আলাউদ্দিন, কমিশনার রোড মিষ্টির দোকানের মাহমুদের ভাই বাবু, ছোট শাকিল, ওয়াসার ঢালে বজলুর বউ, জামাই মনির, শ্যামপুর ঢাকা ম্যাচ কলোনীর হানিফ, জুরাইন ঋষিপাড়ার রানা ও লাকী, মুরাদপুর ডিপটি গলির জুম্মন, দুলাল, জুবায়ের, শাহ আলম ও বিনা। দনিয়া এ কে স্কুলের গলির দারোগাবাড়ী ১ নং সড়কে ফেন্সিডিল বিক্রি করে দেলোয়ার, হাতকাটা ওয়াসিম, মুরাদপুর পেট্রোল পাম্পে গাঁজা বিক্রি করে আরিফ, মুরাদপুর হাইস্কুল রোডের আকবরের ছেলে বার রুবেল, ইয়াবা ব্যবসায়ী ডেউয়া সুমন, জুরাইন বৌবাজারের প্যাথেডিন ব্যবসায়ী নাসিমা, আলম মার্কেটের হেরোইন বিক্রেতা শামীম, খাল পাড়ের তাইজু, কালা বাজারের হেরোইন বিক্রেতা হাকিম, শ্যামপুর নতুন রাস্তার জনি ও সোহাগ। দনিয়া বাজারের চান্দু শাহীন, আকবর, দনিয়া আদর্শ স্কুল গলির রাসেল, আদম, ইতি, হাফিজুল, বগা মাসুম, কোকিলার ভাগ্নে নাঈম, রায়েরবাগের বাহার, সোহেল, সাহেব মিয়া, স্বপন কসাই, মুরাদ, নূরু, রফিক, ধোলাইপাড় ডিপটির গলির ফারুক, রহিম, সোর্স দুলাল, বাপ্পী ও রাজু। এলাকাবাসী জানায়, এদের মধ্যে অধিকাংশই ইয়াবা ব্যবসায়ী। থানা পুলিশের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সাথে এরা যোগাযোগ রক্ষা করে ইয়াবা বিক্রি করে থাকে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান সব সময়ই অব্যাহত আছে। নিয়মিতই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চালানসহ ধরা হচ্ছে।
রাজধানীর তেজগাঁও, পাইকপাড়া, শ্যামলী, বেড়িবাঁধ, আনন্দবাজার ও গোপীবাগ এলাকার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে বাড়তি আয়ের জন্য নানা কায়দায় মাদকের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছেন বিক্রেতারা। অভিযানের ভয় এখন কম। প্রকাশ্যে চলছে লেনদেন। এই পরিস্থিতির কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতাদের দাবি, পুলিশ এখন ‘জঙ্গি দৌড়ানিতে’ আছে।
ট্রানজিট পয়েন্ট রূপগঞ্জ চনপাড়া বস্তি
রাজধানীতে মাদক প্রবেশের ট্রানজিট পয়েন্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া বস্তি। এই বস্তিতে রয়েছে শক্তিশালী মাদকের সিন্ডিকেট। তারা বস্তিতে মাদক বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন পথে রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সরবরাহ করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপগঞ্জ থানার কয়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের বজলু মেম্বারের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে মাদকের বড় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের চিহ্নিত সন্ত্রাসীও রয়েছে। কথায় কথায় এরা খুন করতেও দ্বিধা করে না। সূত্র জানায়, সীমান্ত পথে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইনের বড় বড় চালান সরাসরি ঢাকায় প্রবেশ না করে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তিতে আসে। সেখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। বজলু সিন্ডিকেটের হয়ে মাদক সরবরাহের কাজ করে নবাবপুরের জাহাঙ্গীর। পুরান ঢাকার বিভিন্ন হোটেলগুলোয় পাইকারী মাদক সরবরাহ করে সে। সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। চনপাড়া বস্তিতে মাদক সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যরা হলো, সাহাবুদ্দিন, জাহেদ, পিচ্চি আনোয়ার, জামাল, মোস্তফা, শরিফ, আরব আলী, নূরহোসেন, ফয়েজ, মোফাজ্জল, জসিম, বাবুল মিয়া, মোহাম্মদ আলীসহ আরও অনেকে। চনপাড়া বস্তিতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া খোরশেদ হত্যার সাথেও এই মাদক সিন্ডিকেট জড়িত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় মামলা ঝুলে থাকে
র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সাড়ে চার হাজার, ২০১৫ সালে সাড়ে ছয় এবং চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শুধু র‌্যাবের হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় দেড় হাজার ইয়াবা ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও আছে। কিন্তু এসব গ্রেফতারের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার খুব একটা অগ্রগতি হয় নি। বরং সেগুলো ঝুলে আছে। বড় বড় চালান উদ্ধারের মামলার আসামীও জামিনে বেরিয়ে এসে আবার পুরনো ব্যবসায় নেমে পড়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, ইয়াবা চোরাচালানি, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতি বছর ১০ হাজারেরও বেশি মামলা হয়। কিন্তু বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় এসব মামলার বেশিরভাগ ঝুলে আছে বছরের পর বছর।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • Lokman ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১:৪৪ পিএম says : 1
    পুলিশকে ম্যানেজ করেই দেশের গ্রামে-গঞ্জে এখন মাদকের বেচাকেনা চলে .....
    Total Reply(0) Reply
  • Sojib ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১:৪৪ পিএম says : 0
    Thanks to the reporter
    Total Reply(0) Reply
  • ইব্রাহিম ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১:৪৭ পিএম says : 0
    আমার মনে হয় প্রশাসন ইচ্ছে করলে ৭ দিনে দেশকে মাদক মুক্ত করতে পারে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকের ছোবল গ্রামে গঞ্জে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ