Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা বিভাগকে আরও ছোট করা হবে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ১৭ আগস্ট, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা
নাগরিক সেবা বাড়াতে ঢাকাকে ভেঙে আরও ছোট করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ঢাকা বিভাগকে ভেঙে ময়মনসিংহ বিভাগ করা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে ঢাকাকে আরেকটু ছোট করে দেয়া। এতে জনগণের দোরগোড়ায় সেবাটা পৌঁছাতে পারব। গতকাল বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের উন্নয়ন পরিকল্পনাসংক্রান্ত সভায় শেখ হাসিনা এ পরিকল্পনার কথা জানান।
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। সবার কাছে সেবা পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ একান্তভাবে প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিভাগ বিশাল। এখানে ১৭টি জেলা। ১৭টি জেলায় কাজ করা অত্যন্ত কঠিন। সেবাটা নিশ্চিত করতে আমরা প্রশাসনিক কর্মকা-কে ছোট ছোট করে ভাগ করে দেব, যাতে সেবাটা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। তৃণমূলে সেবা পৌঁছাতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতের বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন আরো স্বচ্ছ এবং সুদূরপ্রসারী করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু মানসিকতা এমন আছে যে, তাৎক্ষণিকতার বিষয়টাই শুধু চিন্তা করি। আমাদের এই চিন্তাটাকে স্বচ্ছ এবং সুদূরপ্রসারী করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যখন কোনো পরিকল্পনা নেব তখন এটা মাথায় রাখতে হবে যে আজ থেকে ২০ বছর পর কতটা উন্নতি হতে পারে। কত জনসংখ্যা বাড়বে, কত মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়বে, কি হতে পারে। সে বিষয়টা মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা নেয়া উচিত বলে মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে নগর সম্প্রসারণে ট্রাফিক জ্যামসহ জনসংখ্যা বাড়লেও অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলো যেন বজায় থাকে সে বিষয়টা পরিকল্পনায় আনতে হবে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটা কোথায় সেটা মাথায় রেখে এবং জলাধার নির্মাণের বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেও জলাধার নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
এ সময় আধুনিক ও পরিকল্পিত ময়মনসিংহ শহর গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ময়মনসিংহ শহর একটা গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। জায়গা পছন্দ করে দিয়েছি। আধুনিক, সুন্দর একটা শহর গড়ে উঠুক।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগটা যখন করা হচ্ছে তখন ঠিক করলাম ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপারে সেটা করে দেব। কারণ শহরতো বাড়তে থাকে, সেখানে জায়গা পাওয়া যাবে আধুনিক স্থাপনা নির্মাণের, সেখানে আধুনিক দৃষ্টি নন্দন শহর গড়ে তুলতে পারি।
আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ এবং নগরোন্নয়ন শহরের বাইরেই করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও করা হয়েছিল কিন্তু ঢাকার বাইরে। জাতীয় তিন নেতার সমাধির সামনে ছিল ঢাকার প্রবেশ দ্বার ‘ঢাকা গেট’। সেই ঢাকা গেটের নজির হিসেবে পুরনো স্তম্ভ এখনও রয়েছে। গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছিল মহাখালি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। অথচ এখন সেখান থেকেও অত্যাধুনিক শহর আরো সামনে এগিয়ে গেছে।
তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ওঠার সময়কার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমরা যখন ধানমন্ডির বাড়িতে আসি তখন আশপাশে ধানক্ষেত দেখতে পাওয়া যেত। কেউ আসলে বলত ঢাকা থেকে এসেছি বা ঢাকায় যাচ্ছিÑ সে সময় ধানমন্ডিও ঢাকা বলে গণ্য হতো না। এখনতো ঢাকা প্রায় টাঙ্গাইল পর্যন্ত চলে গেছে অচিরেই ময়মনসিংহ পর্যন্ত চলে যাবে। এভাবেই একটি শহর গড়ে ওঠে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বৃষ্টির পানিকে সম্পদ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৃষ্টির পানি সবচেয়ে নিরাপদ পানি। বছরে ৭-৮ মাস আমাদের প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। যেখানেই কোনো আবাসিক এলাকা করা হবে, সেখানে জলাধার তৈরি করতে হবে এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য সেখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
এ সময় তিনি বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে আগুন লাগার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বসুন্ধরাতে যখন আগুন লাগল, তখন আগুন নেভানোর জন্য পানি পাওয়া যাচ্ছিল না। পানি আনতে হলো সোনারগাঁও হোটেলের সুইমিং পুল থেকে।
স্মৃতি রোমন্থন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বসুন্ধরায় আগুন লাগলে পানি না পাওয়া গেলেও আমরা ছোটবেলায় দেখেছি ওই এলাকাটা ছিল একটা বিল। আর আজকের পান্থপথের জায়গাটি ছিল একটা খাল। সেখানে শাপলা ফুটতো, নৌকা চলত। এই খালটি ধানমন্ডি লেক হয়ে একদম নদী পর্যন্ত সংযোগ ছিল। কিন্তু সেখানে বক্স কালভার্ট করে দিয়ে খালটাকে শেষ করে দেয়া হলো।
তিনি বলেন, খালটাকে মাঝে রেখে তার দুইদিকে রাস্তা করলে দেখতেও দৃষ্টিনন্দন হতো এবং যে কোনো প্রয়োজনে স্থানীয় জলের চাহিদা পূরণ করে জলাবদ্ধতা দূর করতেও এটি ভূমিকা রাখতে পারত, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অথচ সেখানে এমনভাবে স্থাপনা তৈরি হলো যে একটি বাড়িতেও আগুন লাগলেও আর পানি পাওয়া যাবে না। আবার স্থাপনা তৈরির সময় মাটিটার প্রতি ঠিকভাবে খেয়াল রাখা হয়নি বলে সুন্দরব হোটেলটির চারপাশ দেবে যায়।
রাজধানীর সব খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় আজ নগরবাসীর নানা দুর্ভোগ হচ্ছে শহরের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেগুনবাগিচার খালটির ওপর বক্স কালভার্ট করে খালটিকে শেষ করে দেয়া হলে, মৎস ভবনের পাশের রাস্তাটি করা হলো। শান্তিনগর খালটিও বন্ধ করে দেয়া হলো।
শেখ হাসিনা বলেন, মতিঝিল, কেউ আর সেই ঝিল দেখেনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, সেখানে নৌকায়ও চড়েছি। সেখানকার বিশাল ঝিলটা আইয়ুব খান সরকার ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিলেন।
জলাবদ্ধতা দূরীকরণে জলাশয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কার্যালয়ের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) সামনে এক সময় পানি জমে থাকতো। সে পানিও এয়ারফোর্সের নিজস্ব জায়গায় একটি পুকুর কেটে সেটা সরু একটি লেকের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে চ্যানেলের মাধ্যমে জমে থাকা পানি সেখানে সরাবার ব্যবস্থা করায় এখন আর বৃষ্টির পানি জমতে পারে না।
শেখ হাসিনা এ সময় বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামণা করেন।প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.আবুল কালাম আজাদ বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • আবির ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৫৮ এএম says : 0
    সেবার মান বৃদ্ধি হলে ভালোই হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সোলায়মান ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৫৯ এএম says : 0
    আশা করি পরিকল্পনাটি যুগোপযগী হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রফিক ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১:৩৬ পিএম says : 0
    প্রয়োজন একটা সুন্দর পরিকল্পনার।
    Total Reply(0) Reply
  • Nasir ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১:৪০ পিএম says : 0
    it is very essential for Dhaka
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকা বিভাগকে আরও ছোট করা হবে প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ