পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম বন্দর পরিপূরকের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে চুক্তি
শফিউল আলম : চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ‘পরিপূরক বন্দর’ ও সর্ববৃহৎ অবকাঠামো হিসেবে বিবেচিত প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল স্থাপনের প্রক্রিয়া আরও এক ধাপ অগ্রসর হয়েছে। বে-টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গতকাল (বুধবার) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমুদ্র বন্দরের মতো বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে পারদর্শী ও অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সম্পর্কিত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিংয়ের পক্ষে বেনজামিন লিডার ও চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। অনুষ্ঠানে জার্মানির প্রতিষ্ঠানটি আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করবে বলে জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সম্ভাব্যতার সাথে বে-টার্মিনালের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যানও তৈরি করবে জার্মান প্রতিষ্ঠান।
বন্দর সূত্র জানায়, সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম ৯ মাসের মধ্যে শেষ হবে। বিভিন্ন আঙিকে সমীক্ষা পরিচালনা করে প্রতিবেদন প্রদান করবে জার্মান প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই বে-টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করা হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করে প্রতিবেদন সংগ্রহের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সরকারের তরফ থেকে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করেছে। চলতি মাসের মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। বন বিভাগের অনাপত্তি এবং পুলিশের অনাপত্তিপত্রের কাগজপত্রও জমা দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য ৯০৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে। বে-টার্মিনালের ভৌত ও কারিগরি অবকাঠামো নির্মাণে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের টার্গেট রয়েছে এ প্রকল্প।
নগরীর উপকণ্ঠে হালিশহর উপকূলে জোয়ার-ভাটার নির্ভরতামুক্ত এলাকায় বে-টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্পপত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৬০০ মিটার। সমুদ্রে নতুন জেগে ওঠা চরে বে-টার্মিনালের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ১৯৯০ সালের পর থেকে চরটি জেগে উঠতে থাকে। তীর থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরের চরটি নতুন একটি বন্দর-চ্যানেলের সৃষ্টি করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এই চরকে ঘিরে সৃষ্ট চ্যানেলে টার্মিনালটি নির্মাণ করতে চায়। ড্রেজিং করে চ্যানেলটিতে সুপরিসর জাহাজ তথা মাদার ভেসেল ভিড়তে পারবে একথা জানান বন্দরের নৌ-প্রকৌশলীরা।
বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), সিসিটিসহ সবগুলো জেটি-বার্থে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারছে। বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে ১২ থেকে ১৪ মিটার ড্রাফটের সুপরিসর জাহাজ ভিড়তে সক্ষম হবে। বর্তমানে বন্দরে সর্বোচ্চ ১৮শ’ টিইইউএস কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ ভিড়তে পারে। আর বে-টার্মিনালে ৫ হাজার টিইইউএস পর্যন্ত কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ ভিড়তে সমর্থ হবে। এরফলে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের সার্বিক গতি, উৎপাদনশীলতা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দর অবকাঠামোর কাছাকাছি বঙ্গোপসাগর উপকূলের পতেঙ্গা-হালিশহর মোহনায় বড় আকারের (মাদার) জাহাজ চলাচল ও ভিড়ার উপযোগী প্রায় ১২/১৪ মিটার গভীরতা (চ্যানেলের ড্রাফট) রয়েছে। গভীর সমুদ্র বন্দরের আদলে এই প্রাকৃতিক সুবিধাকে বন্দর শিপিং বিশেষজ্ঞরা মহান আল্লাহতায়ালার অপার দান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেখানেই গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বন্দরের পরিপূরক উন্নত অবকাঠামো ‘বে-টার্মিনাল’ প্রকল্প। এর প্রেক্ষিতে দীর্ঘ জটিলতা ও টানাপড়েনের পর গত বছর ডিসেম্বর মাসের গোড়াতে পরিকল্পিত বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত ভূমির অধিগ্রহণের জন্য বন্দরকে অনাপত্তি (এনওসি) বা ছাড়পত্র প্রদান করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে করে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর আকার-আয়তন-গভীরতায় আরও বড় হওয়ার পথ সুগম হয়। অন্যদিকে সাগর থেকে মাটি উত্তোলন করে আউটার রিংরোড বাস্তবায়নে সিডিএ’কে অনুমতি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর সম্প্রসারিত হবে। বিদ্যমান বন্দরকে সম্প্রসারণের জন্য অনতিবিলম্বে বে-টার্মিনাল স্থাপনের তাগিদ দিয়ে আসছেন আমদানি-রফতানিকারক, ব্যবসায়ী, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শিপিং মহল দীর্ঘদিন ধরে। তরা বলেছেন, বে-টার্মিনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর আঞ্চলিক ‘হাব পোর্ট’ হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অধিকতর গুরুত্ব অর্জনে সক্ষম হবে।
পতেঙ্গা-হালিশহর সমুদ্র উপকূলভাগে মোট ৯০৭ একর তীরভূমির উপর বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে বে-টার্মিনালের ভৌত ও কারিগরি অবকাঠামো নির্মাণে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে সময়ের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। পতেঙ্গা-হালিশহরের কাছে এ জায়গার সবচেয়ে বড় সুবিধাজনক দিকটি হচ্ছে, সেখানে জোয়ার ও ভাটায় সবসময়ই জাহাজ চলাচল, ভিড়ানো ও ঘোরানো সম্ভব হবে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে চ্যানেলটিতে অনায়াসে বড় আকারের কন্টেইনার ও সাধারণ খোলা (ব্রেক বাল্ক) পণ্যবাহী জাহাজবহর ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে জাহাজের আসা-যাওয়া ও পণ্য খালাস কার্যক্রম পুরোপুরি জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া বন্দরের মূল কর্ণফুলী চ্যানেলে একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক বা ব্যান্ড রয়েছে। যা দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতাকে টেনিক্যাল কারণেও সংকুচিত করে রেখেছে। ৫ বছরে বে-টার্মিনালের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে প্রাথমিকভাবে ও জরুরিভিত্তিতে সেখানে দু’টি ডলফিন টাইপ জেটি নির্মাণ করে কয়লা এবং সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার খালাস কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৮ শতাংশ হারে কন্টেইনার পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বার্ষিক বর্তমানে ২১ লাখ ৮৯ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার ওঠা-নামা ও পরিবহন হচ্ছে। ২০২০ সালে বন্দরকে ২৫ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ায় বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন বাণিজ্য ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮৫ ভাগ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে প্রতিদিন গড়ে সর্বোচ্চ ৫ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭শ’ কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হয়। তাও বন্দরে জাহাজ ভিড়ানো, ঘুরানো ও বের হওয়ার পুরো প্রক্রিয়া জোয়ার-ভাটার সময়ের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। দিনে গড়ে ৪ ঘণ্টা জাহাজ মুভমেন্ট করতে পারে। শিপিং পোর্ট সার্কেলের অভিজ্ঞ সূত্র মতে, বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে আগামী ৪০/৫০ বছর চট্টগ্রাম বন্দর পরিপূর্ণ সক্ষমতা বজায় রাখতে সমর্থ হবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠান
বে-টার্মিনাল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে জার্মানির এইচ পিসি, সেলহর্ন এবং কে এস কনসাল্টেন্ট লিমিটেড জেভি’র সাথে চুক্তি স্বাক্ষর প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, চুক্তিবদ্ধ জার্মান প্রতিষ্ঠান বে-টার্মিনালের প্রস্তাবিত স্থানে জাহাজ, নৌযান যাওয়ার জন্য সেখানে নেভিগেশনাল বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করবে। সেই সাথে এ সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনা প্রদান করবে। বে-টার্মিনালের নির্ধারিত স্থানে জেগে ওঠা দ্বীপটির স্থায়িত্ব নির্ণয় এবং সেটিকে টার্মিনালের অংশ হিসেবে ব্যবহারের বিষয়সহ বে-টার্মিনালের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুত করবে।
উক্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল এবং জার্মানির সেলহর্ন কোম্পানীর প্রতিনিধি বেনজামিন লেজার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর জুলফিকার আজিজ, সদস্য (এডমিন এন্ড প্ল্যানিং) মোঃ জাফর আলম (যুগ্ম-সচিব), সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর শাহীন রহমান, পরিচালক (নিরাপত্তা) লেঃ কঃ আবদুল গাফ্ফার, প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) নজমুল হক, পরামর্শক ক্যাপ্টেন নাজমুল আলম, বন্দর সচিব মোঃ ওমর ফারুক, প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান, চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মনজুরুল করিম চৌধুরী, উপ-ব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।