পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গোলা ভরা ধান পুকুর ভরা মাছ। মাছে ভাতে বাঙালির ঐতিহ্য সংস্কৃতি ঘিরে রয়েছে প্রবাদ প্রবচন। সাধারণত চাষিদের মধ্যে যারা বেশি ধানের আবাদ করেন তাদের রয়েছে টিনের গোলা। ক্ষুদ্র চাষিরা বাঁশের গোলা কিংবা মাটির বড় পাতিলে ধান সংরক্ষণ করেন।
এক সময় বাঁশের তৈরি গোলা ‘ডোল’ সমগ্র দেশে ব্যবহার হতো। আধুনিক সভ্যতার স্পর্শে বাঁশের গোলা ডোল হারাতে বসেছে। বাঁশের গোলা ডোল শিল্প চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প। এক সময় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ডোল চট্টগ্রাম অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছিল সমাদৃত। পাহাড়ী অঞ্চলে ছিল প্রচুর বাঁশ বাগান।
এই ডোলের প্রধান তৈরী স্থল ছিল চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার খরনা গ্রামে। খরনা গ্রামের লোকজন পাহাড় থেকে ‘ডলু বাঁশ’ নামের এক প্রজাতির বাঁশ সংগ্রহ করে তা ডোল কারিগরদের মধ্যে বিক্রি করত। ২০০০ সাল পর্যন্ত এক ভার বাঁশের (৫০টি) দাম ছিল প্রায় ২০০ টাকা। এক ভার বাঁশে দুটি ডোল তৈরি হয়। তখন দুটি ডোলের মূল্য ছিল স্থানীয়ভাবে ৪০০ টাকা।
আমন ও বোরো দুই মৌসুমে ডোল তৈরির ভরা মৌসুম। ডোল তৈরি মানেই কারিগরদের মধ্যে উৎসব মুখর পরিবেশ। প্রতিদিন খরনা গ্রাম থেকে সড়ক ও রেলপথে শতাধিক ডোল চট্টগ্রাম অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হত। আমন মৌসুমে দুই মাস এবং বোরো মৌসুমে এক মাস মিলে বছরে ৩ মাস ডোল তৈরি এবং বিক্রির মৌসুম চলে।
১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল নাগাদ প্রতি বছর দুই মৌসুমে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ডোল বিক্রি হয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে ডোল শিল্প অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড়ে যে পরিমাণ বাঁশ বাগান ছিল বড় বড় গাছ নিধনে বাঁশ বাগানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে বাঁশ বাগানগুলোতে নতুন বাঁশ সৃষ্টি হওয়ায় গত ২/৩ বছর ধরে কিছু কিছু ডোল কারিগর আবার নতুনভাবে ডোল বুনন কাজ শুরু করেছে।
খরনা গ্রামের রমিজ আহামদ নামের একজন ডোল কারিগর জানান, এক সময় গ্রামে শতাধিক কারিগর ছিল। বর্তমানে মাত্র ৪/৫ জন ডোল তৈরির কাজ করছেন। দেশে ধানের আবাদ কমে যাওয়ায় এবং প্লাষ্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ডোলের সেই কদর এখন নেই। পাহাড়ে বাঁশ ও বেতের অভাব রয়েছে। বর্তমানে একভার বা ৫০টি বাঁশের মূল্য এক হাজার টাকা। ৫০টি বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় ২টি ডোল। বর্তমানে দুটি ডোল বিক্রি হয় দুই হাজার টাকায়।
তিনি জানান, একটি ডোল তৈরি করতে একদিন লাগে। পরিশ্রমের সাথে ডোল বিক্রির সামঞ্জস্য না থাকায় অনেক ডোল কারিগর তাদের পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ বাঁশের গোলা ডোল দিয়ে ধান সংরক্ষণের ব্যাপারে চাষিদের উৎসাহিত করা হলে ডোলের কদর ফিরে আসবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এ ব্যাপারে পটিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, পাহাড়ে ডলু বাঁশ আহরণের উপর তাদের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কারণ পটিয়া এলাকায় ডোল কারিগরদের কারণে ডলু বাঁশ আহরণে সুযোগ দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।