পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার জন্য, শুধুমাত্র আমাদের আঘাত দেওয়ার জন্য, যেদিনটি আমরা শোকে কাঁদি, বাবা-মা-ভাই হারিয়েছি, সেদিন কেক কেটে উৎসব করেন খালেদা জিয়া। গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পনের আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন না করাকে ‘রাজনৈতিক উদারতা’ হিসেবে দেখলে ভুল হবে। এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ছেলে কোকোর জন্মদিন পালন করতে পারবেন না বলেই বিএনপি নেত্রী জন্মদিন পালন করেননি। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের দিন ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন উদযাপন না করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের আহ্বানের প্রেক্ষাপটে এবার বন্যা এবং সরকারি নির্যাতন-নিপীড়নকে কারণ দেখিয়ে কেক কাটেননি খালেদা জিয়া। দিনটিতে দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল করেছে বিএনপি।
শেখ হাসিনা বলেন, কালকে শুনলাম কেক যে কাটবেন নাÑএটাকে অনেকে রাজনৈতিক উদারতা হিসাবে দেখাতে চাচ্ছেন। আসল ঘটনা কী সে তো আমি জানি। ১২ আগস্ট তার ছেলে কোকোর জন্মদিন। কাজেই কোকোর জন্মদিন যেহেতু করতে পারবে না, সে মারা গেছে, তাই নিজেরটা করবে না। এটা হলো বাস্তব কথা। সেটাই ছিল তার উদ্দেশ্য। যেহেতু ১২ আগস্ট তার ছেলের জন্মদিন, ছেলে মারা গেছে, মা হয়ে আর কী করবে? এটা রাজনৈতিক উদারতা নয়। কেউ যদি এটা মনে করেন, ভুল করবেন।
খালেদা জিয়ার ‘অন্য জন্মদিনের’ হদিস পাওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন, তাছাড়া সে করবে কী, এটা তো তার জন্মদিন নয়। পাসপোর্টে তো অন্য তারিখ বা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় অন্য তারিখ দিয়েছে। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার জন্য, আমাদের আঘাত দেওয়ার জন্য এ দিনটাকে বেছে নিয়েছিল ফুর্তি করতে। ১৫ আগস্ট উৎসব করে জানিয়ে দেয় খুনিদের সাথে সে আছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের হারানোর পর দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকা এবং পরবর্তীকালে দেশে ফিরে আসার প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকায় ছোট বোন শেখ রেহানার বিয়ের সময় লন্ডনে যেতে না পারার মনঃকষ্টের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তার বিয়ের সময় আমি যেতে পারিনি। যেতে পারিনি একটাই কারণে। টিকেটের খরচ জোগাড় করা এবং লন্ডনে গিয়ে থাকার খরচ কাছে ছিল না।
আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পরিবারের একমাত্র সদস্য। ওর বিয়েতে থাকতে পারিনি। যেতে পারলাম না। ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা ওরকম ছিল না, কার কাছে বলব। আর আমাদের যে স্বভাব, কারো কাছে হাত পাতার কিছু নেওয়ারÑকষ্ট করে বুকে চেপে রেখেছি কারো কাছে নত হয়নি। ’৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী আবার ক্ষমতায় এলেন। তিনি শুনলেন, রেহানা সন্তানসম্ভবা, তিনি আমার টিকিটের ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা সব করে দিলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান দিল্লি সফরের সময় তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান যতদিন বেঁচে ছিল ওই বাড়িতে (ধানমন্ডির ৩২ নম্বর) আমাকে যেতে দেয়নি। বিনিময়ে অনেক কিছু দিতে চেয়েছিল। একজন খুনির কাছ থেকে কিছু নেওয়া আমার রুচিতে ছিল না।
আমি যখন দিল্লিতে ছিলাম জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে সফরে গিয়েছিল। বারবার আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও আমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছে, আমি দেখা করিনি। ’৮০ সালে যখন লন্ডনে, তখনও জিয়াউর রহমান সেখানে গিয়ে দেখা করতে চেয়েছিল। আমি বলেছি, খুনির চেহারা আমি দেখতে চাই না।
’৭৫-এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি হারিয়েছি বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়-পরিজনকে। বাঙালি হারিয়েছে মহান নেতাকে, জাতির ভবিষ্যৎকে। ঘাতকের নির্মম বুলেট কত তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। যার নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেয়েছি তাকে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছে। শ্রদ্ধা জানাই তার প্রতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট আমার মা ফজিলাতুননেছাও খুন হন। যার সাহস আমার বাবার পাশে ছিল, তাকেও রেহাই দেয়নি ঘাতকরা। আমার ভাই, মুক্তিযোদ্ধা, সেনা সদস্য ছিল। মুক্তিবাহিনী থেকে বের হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় শেখ জামাল। তাদের দু’জনকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নবপরিণীতা বধূকেও হত্যা করে। ১০ বছরের ছোট ভাই রাসেলের কী অপরাধ ছিল? জন্মের পর থেকে বাবার স্নেহবঞ্চিত। ’৬৪ সালে তার জন্ম। এর পর থেকে বাবা জেলে।
১৯৭১ সালে আমাদের বন্দি করা হয়। তখন ছোট রাসেলও আমাদের সাথে ছিল। আমার চাচা আবু নাসেরকেও ঘাতকরা হত্যা করে। আবদুর রব সেরনিয়াবাত কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। তাকে হত্যা করে এবং তার ১৩ বছরের ছেলেকেও ছাড় দেয়নি। আমার আব্বার সামরিক সচিব কর্নেল জামিলও নিহত হন। একই দিন একই সঙ্গে ছাত্রনেতা ফজলুল হক মনিসহ তার স্ত্রীকেও রেহাই দেয়নি। সেদিন আমার ফুফুও আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমি এখনও কারণ খুঁজে পাই না কেন তাদের হত্যা করা হয়েছিল।
যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় চায়নি, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। তারাই চেয়েছিল বাঙালি জাতির আদর্শ ধ্বংস করে দিতে।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের মাত্র ১৫ দিন আগে ৩০ জুলাই জার্মানি যাই। ড. ওয়াজেদ ছাত্র ছিলেন। কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন আমি সেখানে যাই। একপর্যায়ে আব্বা নিজেই বলেছিলেন, আচ্ছা যাও। অনেকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দেশ ছাড়ি। রেহেনাকেও সঙ্গে নিয়ে যাই। মাও দিয়ে দিলেন, আমার মা যাওয়ার সময় আকুল হয়ে কেঁদেছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর ১৩ তারিখ কথা হয়, তখন বলেছিলেন, আয় তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে। কিন্তু সে কথা আর শোনা হয়নি। চাপা স্বভাবের ছিলেন, কখনও এভাবে বলেননি তিনি। পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে দেখতে বলেছিলেন। জার্মানি পৌঁছে আমরা আব্বা-আম্মাকে চিঠি লিখতাম। রেহেনা চিঠি লিখতে খুবই ভালোবাসত।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।