পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই নতুন সিম কেনার জন্য আঙুলের ছাপ, ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাজারে মোবাইল ফোনের সিমগুলো বিক্রিও হচ্ছে এই নিয়মেই। তবে কার আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত সিম কিনছে কে সেটা নিয়েই তৈরি হয়েছে ভীতিকর পরিস্থিতি। কারণ অন্যের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত হাজার হাজার সিম পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। মুখ চেনা এবং বাড়তি টাকা দিলেই হাতে আসছে প্রি-অ্যাক্টিভ (আগে থেকেই নিবন্ধন করা) সিম। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, নীলক্ষেত, কমলাপুর, গুলিস্তান, মহাখালী ও উত্তরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে এসব সিম। সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করতে সিম পুনঃনিবন্ধনের মতো এত বড় মহাযজ্ঞ শেষে খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম স্বীকার করেছেন বিভিন্ন অপারেটরের এক থেকে দেড় লাখের মতো প্রি-অ্যাক্টিভ সিম বাজারে রয়েছে। অন্যের নামে নিবন্ধিত এসব সিম চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে। সন্ত্রাসী কর্মকা-, চাঁদাবাজি, হুমকিসহ নানা অপকর্মেই ব্যবহৃত হচ্ছে এসব সিম। গত কয়েক মাসেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানী-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার প্রি-অ্যাক্টিভ সিম উদ্ধার করেছে। আর এসব দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কখন কার নামে নিবন্ধিত সিম দিয়ে সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটে তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা। এই নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে মোবাইল ফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের যে ব্যাপক জালিয়াতি করা হয়েছে ভবিষ্যতে তা জাতিকে ভোগাবে বলে মন্তব্য করেছে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক এড. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমরা দাবি করেছিলাম আরো সতর্কতার সাথে ভোক্তাদের আঙুলের ছাপ নেয়া হোক। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। এখন একের পর এক জালিয়াতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে। লাখ লাখ সিম সাধারণ ব্যবহারকারীদের আঙুলের ছাপ একাধিকবার দিয়ে চুরি করে নিবন্ধন করে নিয়েছে জালিয়াতিচক্র। তারা বলেন, “এসব সিম জালিয়াতি চক্র উচ্চমূল্যে সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রয় করছে বলে আমাদের সংগঠনের তদন্তে উঠে এসেছে। এতে করে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পর নিরপরাধ সাধারণ মানুষ ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি কেউ জানে না কার আঙুলের ছাপ চুরি করা হয়েছে। তাই আমরা আজ গোটা জাতি জালিয়াত চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাঁরা বলেন, এ ব্যাপারে বড় কোনো ভোগান্তির আগেই সরকারকে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় জনসাধারণের যে কোনো ধরনের ভোগান্তি বা ছোট-বড় দুর্ঘটনার দায় সরকাকেই নিতে হবে।”
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করে এসব সিম বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যদিও আদালতে এ বিষয়ে একটি রিটও হয়েছিল, যা খারিজ হয়ে গেছে। আঙুলের ছাপ বেহাত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে এর আগে ইনকিলাবে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সময়ই একজনের আঙুলের ছাপ দিয়ে অন্যজনের সিম নিবন্ধন হওয়ার প্রমাণসহও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এখনো বলছেন, আঙুলের ছাপ কোনোভাবেই সংরক্ষণ করা হয়নি। এটা করার কোনো সুযোগও নেই। আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের বিষয়টি একটি অপপ্রচার।
বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল সবার মাঝেই। আঙুলের ছাপ বেহাত হওয়া, একজনের আঙুলের ছাপ দিয়ে অন্যের সিম নিবন্ধন করাসহ জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার শঙ্কা ছিল সব মহলেই। তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও এই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কর্যক্রমের বিরোধিতা করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, এই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন হলে একজন মানুষের মূল্যবান আঙুলের ছাপ বেহাত হয়ে যাবে। এই ছাপ দিয়ে পরবর্তীতে অপরাধমূলক কাজ কিংবা ব্যাংক লোনসহ নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে সরকারের (ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম) পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয়েছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ কেবল ভেরিফাইড করা হচ্ছে সংরক্ষণ করা নয়। কিন্তু এতদিন পরে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ও তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সেই শঙ্কাই সত্য হতে চলেছে। আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করে রেখেছেন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে একজনের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে অন্য জনের সিম। আর জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধিত এসব সিম চলে গেছে সন্ত্রাসীদের হাতে। গত জুন মাসেই র্যাব পরিচয়ে গ্রামীণফোনের একটি নম্বর থেকে ফোন করে পুরান ঢাকার একজন ব্যবসায়ীর কাছে সন্ত্রাসীরা ২০ লাখ টাকা দাবি করে। দুই দিনের মধ্যে দাবি করা টাকা দিতে না পারলে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হুমকিও দেয়া হয়। বিষয়টি জানার পর র্যাবের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানে জানা যায় ওই নম্বরটি ছিল ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা।
গত ২৮ জুলাই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধনের সময় গ্রাহকের আঙুলের একাধিক ছাপ নিয়ে তার বিপরীতে অন্য সিম নিবন্ধন করে বিক্রির অভিযোগে ২২ জনকে আটক করে পুলিশ। ২৯ জুলাই রাতে ময়মনসিংহের সানকিপাড়া থেকে অবৈধভাবে বায়োমেট্রিক করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ হাজার ২০০ সিমসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এর আগে গত ২১ মে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান ১২০টি রবির সিম নিবন্ধন করে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা করেছে জালিয়াতচক্র।
সিম নিবন্ধনের এই ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়ায় এখন ভীত হয়ে পড়েছেন মোবাইল ফোন গ্রাহকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা গ্রাহকদের সামনেই জালিয়াতির করে এর সাথে জড়িতরা। ওই সময় তারা হাজার হাজার সিম অন্যের নামে নিবন্ধন করে নেয়। আর এখন সেই সিমই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। যেগুলো অন্যের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত। নতুন সিম কেনার জন্য আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব ছাড়া নতুন কোনো সিম কিনতে পারবেন না কেউই। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই প্রিঅ্যাক্টিভ হাজার হাজার সিম পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। যেগুলো কিনতে দিতে হচ্ছে না আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র। এসব সিম অন্যের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত রয়েছে। আর পূর্ব থেকেই নিবন্ধিত এসব সিম চলে যাচ্ছে অপরাধী এবং অবৈধ ভিওআইপি কারবারীদের হাতে। তবে কার নামে কীভাবে এসব সিম নিবন্ধিত হচ্ছে তা জানতে পারছে না কেউই। ফলে এসব নিবন্ধিত সিমে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলেই দায়ী হবেন যার নামে নিবন্ধন হচ্ছে সিম তিনি নিজেই। অথচ ওই ব্যক্তি জানে না তার নামে এসব সিম নিবন্ধিত রয়েছে।
যদিও এখনো ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলছেন, কারও আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করে প্রিঅ্যাকটিভ সিম নিবন্ধন হয়নি। বর্তমানে যেসব গ্রাহক সিম নিবন্ধন করছেন তাদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে এক একজন গ্রাহকের কাছ থেকে তিন/চার বার আঙুলের ছাপ নিয়ে প্রিএ্যাকটিভ সিম সংগ্রহ করছে অপরাধীরা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আশা করি তারা একে একে ধরা পড়বে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজারে প্রিঅ্যাকটিভ সিম পাওয়া যাচ্ছে এমন খবর পাওয়ার পরই আমি নিজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য লিখিতভাবে বলেছি। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে কয়েক হাজার সিমসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৩১ মে’র পর থেকে যেসব গ্রাহক নতুন সিম কিনতে বা পুরনো সিম নিবন্ধন করতে যাচ্ছেন তাদেরই প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা গোটা প্রতারকচক্রকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। আশা করি কাজটি তারা বেশি দিন চালাতে পারবে না। তার আগেই তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়া হবে। তাছাড়া এভাবে খুব বেশি সিম তারা নিতে পারেনি। এক থেকে দেড় লাখ সিম প্রতারণার মাধ্যমে নিতে পারে।
অথচ গত ৫ মে ইনকিলাবে একজনের আঙুলের ছাপ দিয়ে অন্যজনের সিম নিবন্ধনের খবর প্রচারিত হয়। গত ১৯ জানুয়ারি উত্তরায় রবির কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়ে নিজের নামে কেনা সিমটি আহসানুর রহমান নিজেই নিবন্ধন করেন। নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও একটি নয়, দুটি নয়, ১০টি আঙুলের ছাপ দিয়ে তবেই নিবন্ধিত হয়েছে তার সিমটি। এরপর তিনি নিশ্চিন্তেই ছিলেন যে, তার সিমটি তার নামেই নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন পর হঠাৎ তার রবি নম্বরটিতে একটি এসএমএস আসে, সেখানে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জন্ম তারিখটি মিলিয়ে নিতে বলা হয়। যেটাকে নিবন্ধনের জন্য ভেরিফিকেশন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই এসএমএসে দেখা যায়, তার সিমটি নিবন্ধিত হয়েছে অন্য একজনের পরিচয়পত্র দিয়ে। এমনকি তার জন্ম তারিখও ভুল। তিনি বলেন, আমার সিমটি অন্য কারো জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে নিবন্ধিত হয়েছে। তাহলে আমার আঙুলের ছাপ এবং পরিচয়পত্র দিয়ে কার সিম নিবন্ধিত হয়েছে তিনি প্রশ্ন করেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।