পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : এইচএসসি পরীক্ষা শেষে একমাত্র ছেলেকে ঢাকার আরামবাগের একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়েছিলেন দিনাজপুরের সরকারি চাকরিজীবী শিহাব উদ্দিন। প্রায় তিন মাস ছেলে ও তার কয়েক বন্ধু মিলে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিংয়ে পড়ছিল। এ মাসের প্রথম দিকে ছেলে গিয়ে দিনাজপুরে হাজির। বাড়িওয়ালা বাসা ছাড়তে বাধ্য করেছেন। কয়েকদিন চেষ্টা করে ব্যাচেলরের জন্য বাসা না পেয়ে ছেলে ফিরে গেছে বাড়িতে। শিহাব উদ্দিন বলেন, আমার পরিচিতজনদের অনুরোধ করে গত ১৫ দিনেও ছেলের থাকার জন্য একটা বাসা জোগাড় করতে পারিনি। আর এক দিন পর এইচএসসির রেজাল্ট। ছেলে শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পাবে কি-না সেই আশঙ্কা বারবার ভর করছে শিহাব উদ্দিনের মনে।
সাব্বির সরকার একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। থাকেন এক আত্মীয়ের বাসায়। ঈদুল ফিতরের পর থেকে ঢাকায় একটা বাসা খুঁজছেন। কিন্তু ব্যাচেলর শুনে কেউই বাসা ভাড়া দিতে চায় না। যারা মেসে বা ব্যাচেলর হিসেবে থাকেন তাদের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করেও ম্যানেজ করতে পারেননি। তার ভাষায়, ‘আমার মতো ব্যাচেলররা সবাই এখন দৌড়ের উপর আছে।’ বাসা ছাড়তে নোটিশ দিয়েছে বাড়িওয়ালারা। বিবাহিত সাব্বির বলেন, চাকরিটা নতুন বলে বেতন একেবারে কম। স্ত্রীকে আনলে বাসা ভাড়া দিয়ে চলা কষ্টকর হবে। তাই আপাতত ব্যাচেলর বাসার বিকল্প নেই। বাসা নিয়ে ব্যাচেলরদের এমন সমস্যা রাজধানীর সব এলাকাতেই। কোনো বাড়িওয়ালাই আর ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিতে চাচ্ছেন না। আলাপকালে কয়েকজন বাড়িওয়ালা জানান, পুলিশি ঝামেলার ভয়ে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অথচ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো বিধিনিষেধ নেই। এজন্য বাড়িওয়ালাদের কোনো ভীতি থাকাও উচিত নয়। পুলিশ বলেছে, যাদের কাছেই (ব্যাচেলর-ফ্যামিলি) বাসা ভাড়া দেওয়া হোক না কেন, সেই তথ্য পুলিশকে জানাতে হবে। এজন্য বাড়িওয়ালাদের কাছে যে ফরম দেয়া হয়েছে সেগুলো পূরণ করে ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ থানায় জমা দিতে হবে।
জানা গেছে, রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সন্ত্রাসীসহ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে গত বছর নাগরিক তথ্যভা-ার তৈরির লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ২০ লাখেরও বেশি ফরম বিতরণ করা হয়েছে রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায়। এর মধ্যে ১৮ লাখের বেশি বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার তথ্য পুলিশের কাছে জমা পড়েছে। এ তথ্যভা-ারে ঢাকায় স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে বাস করা ভূমির মালিক (বাড়িওয়ালা) এবং ভূমি ব্যবহারকারী (ভাড়াটিয়া) উভয়ের তথ্য রয়েছে। যাতে সহজেই যে কোনো প্রয়োজনে পুলিশের তথ্য পেতে সমস্যা না হয়। কয়েকজন বাড়িওয়ালা জানান, ভাড়াটিয়া সপরিবারে থাকলে পুলিশ সেদিকে নজর দেয় না। কিন্তু ব্যাচেলর বা পরিবার ছাড়া থাকলেই পুলিশ সন্দেহ করে। রাত-বিরাতে বাসাবাড়িতে হানা দেয়। গভীর রাতে তল্লাশি চালায়। তখন বাড়িওয়ালাদেরও ডেকে নানা প্রশ্ন করে হয়রানি করা হয়। এই হয়রানির ভয়ে বাড়িওয়ালারা আর ব্যাচেলরদের ভাড়া দিতে চাচ্ছে না। ইতোমধ্যে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকাতেই ব্যাচেলরদেকে বাসা ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। যারা এখনও ছাড়েননি তাদেরকে চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়েছে। এতে করে বাসা ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর হাজার হাজার ব্যাচেলর। এর মধ্যে চাকরিজীবী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, চাকরিপ্রার্থী ও ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী রয়েছে। ব্যাচেলরদের মধ্যে কেউ বিবাহিত কেউবা অবিবাহিত। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বোরহান কবির বলেন, সামনের ঈদ পর্যন্ত ব্যাচেলর হিসাবে থাকতে পারব। এরপর বাসা ছাড়তেই হবে। ঈদের পরে কোথায় থাকব জানি না।
ভুক্তভোগীরা জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই বাড়িওয়ালারা আর ব্যাচেলরদের রাখতে চাচ্ছেন না। ওই ঘটনার পরপরই গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডিসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ব্যাচেলর বাসা, সাবলেট ও মেস ছাড়ার তাৎক্ষণিক ঘোষণা দেন বাড়িওয়ালারা। এতে অনেকেই পড়েছেন বিপাকে। তারা নতুন বাসা খুঁজে পাচ্ছেন না। গুলশান এলাকায় সাবলেটে ভাড়া থাকা মানিক নামে এক চাকরিজীবী বলেন, ওই ঘটনার পর এক সপ্তাহের নোটিশে সাবলেট বাসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। এখন এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে বাসা খুঁজছি।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ‘ভাড়া দেয়া হবে’ এমন সাইনবোর্ড চোখে পড়লেও সেগুলোতে শুধু সপরিবারে থাকার জন্য ভাড়া দেয়া হবে। কোনো কোনো এলাকায় আবার বাসা ভাড়ার সাইনবোর্ডে ‘ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়া হবে না’ এমন কথা উল্লেখ রয়েছে। অনেক সাইনবোর্ডে আবার লেখা ‘ছাত্রছাত্রীদের ভাড়া দেয়া হয় না’।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য এতদিন ব্যাচেলরদের জন্য বিশেষভাবে রুম তৈরি করে ভাড়া দিতেন বাড়িওয়ালারা। বিশেষ করে নারীদের মেসগুলোতে ভাড়া রাখা হতো দ্বিগুণ। কিন্তু বাড়ির মালিকরা এখন লাভের দিকে না তাকিয়ে ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়াটাকে ‘বিপজ্জনক’ বলে মনে করছেন। যাত্রাবাড়ী এলাকার এক বাড়িওয়ালা তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, আমি ভাড়াটিয়াদের তথ্য সম্বলিত ফরম জমা দিতে গেলে পুলিশ আমার কাছে জানতে চায়, আপনার বাসায় কোনো মেস বা ব্যাচেলর থাকে কি না। আমি বললাম, একটা ফ্ল্যাটে দু’জন চাকরিজীবী ব্যাচেলর থাকে। পুলিশ ওই দুইজনের কাগজ আলাদা করে রাখল। ওই বাড়িওয়ালা বলেন, আমি বাসায় ফিরতে ফিরতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি বাসায় আর ব্যাচেলর রাখব না। ওই দুজনকে আগামী মাসে বাসা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছি। ডিএমপির কয়েকটি থানার ওসির সাথে এ প্রসঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বিভিন্ন থানা এলাকার মেস বা ব্যাচেলর বাসাগুলোতে বিশেষ নজরদারি করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে কারণে মেস বা ব্যাচেলর বাসাগুলোতে নজরদারি ও তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া নিয়ে ভোগান্তির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেস সংঘের মহাসচিব আয়াতুল্লাহ আক্তার বলেন, মেসে যদি জঙ্গি থাকে তাহলে পুলিশ অবশ্যই সেখানে অভিযান চালাবে। তাই বলে সব মেসে জঙ্গি আছে সন্দেহে অভিযানের নামে মেস মেম্বারদের হয়রানি করা উচিত নয়। তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, ঢাকায় আজ যারা প্রতিষ্ঠিত বা গাড়ি-বাড়ির মালিক, তাদের অনেকেই একসময় মেসে বা ব্যাচেলর হিসাবে থাকতেন। তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা মেস মেম্বার বা ব্যাচেলরদের খাটো করে দেখার আগে নিজের অতীতের কথা একবার ভাবুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।