Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেবাপ্রত্যাশীদের দুর্ভোগ

প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : প্রত্যাশী সংস্থা বুঝে না নেয়ায় অব্যবহৃত অবস্থায়ই পড়ে রয়েছে আটতলাবিশিষ্ট টঙ্গী জেনারেল হাসপাতাল ভবন। স্থানীয় এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এরই আলোকে সরকারের ভবন নির্মাণ সংস্থা গণপূর্ত অধিদফতর এই ভবনটি নির্মাণ করে।
এদিকে, নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার এক বছর অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবধি প্রত্যাশী সংস্থা হাসপাতালটি ভবনটি বুঝে নেয়নি। এ নিয়ে প্রত্যাশী সংস্থার সাথে গণপূর্ত অধিদফতরের বেশ কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছর জুলাইতে হাসপাতালটি বুঝে নেয়ার দিনক্ষণ ঠিকও হয়েছিল। পরবর্তীতে জনবল ঘাটতির কথা বলে প্রত্যাশী সংস্থা ভবনটি আর বুঝে নেয়নি। অন্যদিকে, আটতলা এই হাসপাতাল ভবনটি বুঝে না নেয়ার কারণে স্থানীয় এলাকাবাসীকে যেমন উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে, তেমনি এই ভবনটি অব্যবহৃত থাকায় এখানকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ভবনটির গুণগত মান।
বহুতলবিশিষ্ট টঙ্গী জেনারেল হাসপাতালটি কেন বুঝে নিচ্ছে না প্রত্যাশী সংস্থা সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, জনবলের অভাবের কারণেই আমরা এখন পর্যন্ত হাসপাতালটি বুঝে নিতে পারিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তার মতে, আমরা প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স, স্টাফসহ জনবলের চাহিদা দিয়ে রেখেছি প্রায় এক বছর পূর্বে। এখন পর্যন্ত এই জনবল পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টঙ্গী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট যে জেনারেল হাসপাতালটি চালু রয়েছে তার অবস্থা একেবারেই করুণ। রাজধানীর অতি নিকটে হওয়া সত্ত্বেও এখানে ঠিকমতো ডাক্তার বসে না। হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্সও নেই। রয়েছে আধুনিক সরঞ্জামাদিরও অভাব। বৃষ্টি হলেই দোতলাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটির নিচতলায় পানি প্রবেশ করে। এতে করে রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।
এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা বোর্ডবাজারের বাসিন্দা হালিমা খাতুন (৫৫) বলেন, এখানকার সেবার মান ভালো নয়। আর বৃষ্টি হলে হাসপাতালটির নিচের অংশ একেবারেই নোংরা হয়ে যায়।
তারগাছ এলাকা থেকে আসা স্কুলশিক্ষক আবদুল মজিদ (৫১) বলেন, সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে টঙ্গী জেনারেল হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নির্মিত আটতলার এই হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় সরকারের সেই মহৎ উদ্দেশ্য সফলতার মুখ দেখছে না। সেইসাথে অত্র এলাকার মানুষ আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, বহুতলবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনটিকে অব্যবহৃত না রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
জানা যায়, টঙ্গী জেনারেল হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই হাসপাতাল ভবন নির্মাণে অর্থ জোগান দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এটি ছিল ৮ তলা ফাউন্ডেশনে ৭ তলা ভবনের কাজ। পরবর্তীকালে একই অর্থে গণপূর্ত অধিদফতর এই ভবনের আটতলার নির্মাণকাজও সম্পন্ন করেছে। ২০১৫ সালের জুনে এই হাসপাতাল ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
এটি ছাড়া গাজীপুর জেলায় স্থানীয় গণপূর্ত অধিদফতর ১০০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত গাজীপুর সদর হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কাজও করছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। জাইকার অর্থনৈতিক সহায়তায় এটি হচ্ছে। এই হাসপাতাল ভবনটির পনেরতলা ফাউন্ডেশন থাকলেও এটি ৭ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল হবে। চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত এই ভবন নির্মাণকাজের সময় রয়েছে। তবে এই সময় বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে। যদিও ভবনটির ৯৫ ভাগেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই হাসপাতাল ভবনটি দ্রুত বুঝিয়ে দেয়ার জন্য স্থানীয় প্রত্যাশী সংস্থার চাপও রয়েছে।
এছাড়া এখানে রয়েছে একটি মেডিকেল কলেজ। এই কলেজে ভর্তির আসনসংখ্যা হচ্ছে ৫০টি। এ লক্ষ্যে এখানে একটি বহুতলবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। জানা যায়, এই মেডিকেল কলেজের জন্য ২১ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের ডিপিপি সাবমিট করা হয়েছে বলে স্থানীয় গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন জানান।
গণপূর্ত অধিদফতর গাজীপুর জেলায় আরও যেসব কাজ করছে তার মধ্যে রয়েছেÑসারাদেশে ৫০০ ভূমি অফিস নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরে ১১টি ভূমি অফিস নির্মাণ করা। এর মধ্যে ৫টির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি ৬টি ভূমি অফিস ভবন নির্মাণের কাজ চলতি বছরই সম্পন্ন হবে। প্রতিটি ভবন নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। এসব ভূমি অফিস হচ্ছেÑপৌর টঙ্গী, কালীগঞ্জ, জামালপুর, রানিগঞ্জ, গোসিঙ্গা, টোকনয়ন, কাউরাইদ, শফিপুর, কাশিমপুর, ফতেপুর, বর্মি ও বাকিল ইউনিয়ন।
এছাড়া ২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে র‌্যাব ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স নির্মাণ, সাড়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মহিলা আনসার ব্যাটেলিয়ন ভবন নির্মাণ, ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালীগঞ্জ কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল ও ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ, ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মহিলা হোস্টেল ও শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র নির্মাণ, কলকারখানা অধিদফতরের জেলা অফিস ভবন নির্মাণ, ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টঙ্গী ও কাপাসিয়া থানা ভবন নির্মাণ এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সি ইনকিলাবকে জানান, প্রত্যাশী সংস্থাকে বলেছি তারা যেন দ্রুত ভবনটি বুঝে নেন। আমাদের দিনক্ষণ জানালে আমরা ভবনটি বুঝিয়ে দেব। তিনি বলেন, গুণগত মানের কারণে গণপূর্ত অধিদফতর এখন সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের শীর্ষস্থানে রয়েছে। এই সংস্থাটি এখন আরও আধুনিক ও উন্নতমানের কাজের নিশ্চয়তা দিচ্ছে, যার কারণে যারা এখান থেকে চলে গিয়েছিল তারা আবার ফিরে আসছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করছে। সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণপূর্ত অধিদফতর এই উন্নয়নমূলক কাজের অংশীদার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেবাপ্রত্যাশীদের দুর্ভোগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ