Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিধিমালার অপেক্ষায় পেছাতে পারে ইউপি ভোট

প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫২ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আজিবুল হক পার্থ : প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে প্রচারণার মোড় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিধিমালা না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হওয়া এবং হাইকোর্টের একটি রিট গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আটকে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও বিধিামালার জন্য পৌর নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচনও পিছিয়ে সময়ের শেষ প্রান্তে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ ইসি কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী মনে করেন, ১০ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংশোধিত নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধি হাতে পেলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে নির্বাচন করা যাবে। সবার সুবিধা বিবেচনা করে তফসিলের পর ৪০-৪৫ দিন রাখা হবে।
তবে ইসি কর্মকতারা জানান, আমরা পৌর নির্বাচনের পরপরই ইউপি নির্বাচনের নানা দিক র্নিধারণ করে একটি বিধিমালা মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে পাটিয়েছি। এছাড়া নির্বাচনী আচারণ বিধিও পাঠিয়েছি অনেক আগে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে এগুলোর কোন উত্তর পাইনি।
ইসি কর্মকর্তারা মনে করেন, নির্বাচনের প্রায় সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করা হলেও বিধিমালার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এরআগে পৌর নির্বাচনেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। শেষ মুহূর্তে টাইট সিডিউলে ওই নির্বাচন করতে নানা জটিলতাতে পড়তে হয়। এবারেও সেই পথে মন্ত্রণালয় হাটছে বলেও মনে করেন ইসি কর্মকর্তারা।
ইসি সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে এবং সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্দলীয় নির্বাচনের বিধান করা হয়। গত ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর হালনাগাদ তালিকা দিয়েই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিগত পৌর নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলেও আগামী ইউপি নির্বাচনে নতুন ভোটাররা ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা।
কয়েক ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাড়ে চার হাজার ইউপিতে প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক এ নির্বাচন করতে দুটো বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ছয়শ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরে অর্থমন্ত্রণালয়ে সংশোধিত বাজেট প্রস্তাবও করেছে ইসি। প্রথমধাপে ভোট উপযোগী ৭৭৪ ইউপি তালিকা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ইসি সচিবালয়ে এসেছে।
মার্চের শেষদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে ইসি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হালনাগাদ ভোটার তালিকার সিডি তৈরির পাশাপাশি সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রণয়ন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতি ও নির্বাচন নির্দেশিকা প্রস্তুতিসহ যাবতীয় কাজের কর্মপরিকল্পনা হয়েছে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব সামসুল আলম জানান, ইউপি ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনার জন্যে চেকলিস্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। বিধিমালা জারির পর স্থানীয় সরকার বিভাগের তালিকা নিয়ে কমিশন সভায় উপস্থাপনের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের ঊপকূলীয় এলাকার সাড়ে সাতশ ইউপি ও পরে বাকিগুলোর ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে ইসি।
এদিকে এবারেও ভিভিআইপিদের তালিকায় রাখা হয়েছে সংসদ সদস্যদের। ফলে তারা প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। ইসির এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। ফলে এই রিট নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আটকে দিতে পারে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে বিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলে সর্বোচ্চ ক্ষমতাটি গত সাত বছরে কখনও ব্যবহার না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নতুন করে তা যুক্ত করায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী বলছেন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থাকলেও তা কখনও করা হয়নি। অর্থদন্ড ও কারাদন্ডের বাইরে এমন বিধান রাখা ঠিক নয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করে ইসি প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত বিধি যুক্ত করে প্রস্তাবিত ইউপি আচরণবিধি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পাঠায়।
আচরণবিধির ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যে কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড বা লিখিত প্রতিবেদনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে ইসির কাছে প্রতীয়মান হলে তা তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দেবে ইসি। তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে ওই প্রার্থী অযোগ্য হতে পারেন বলে কমিশন সন্তুষ্ট হলে তাৎক্ষণিক আদেশে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে ইসি।
২০০৮ সালে নবম সংসদের আগে এটিএম শামসুল হুদার কমিশন সংসদের নির্বাচনী আইন আরপিওতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতার বিধান যুক্ত করে।
৯১ (ই) ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা এজেন্ট বা তার পক্ষে অন্য কেউ এমন কোনো অন্যায় করলে (যার ফলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য হতে পারেন) কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।
এর আগে দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে মোট আটবার। সর্বশেষ ২০১১ সালে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল প্রথম দফায় প্রায় ছয়শ ইউপিতে ভোট হয়। দ্বিতীয় দফায় ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই তিন হাজার আটশ’র বেশি ইউপিতে নির্বাচন করা হয়।



 

Show all comments
  • Tania ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ৩:২৩ পিএম says : 1
    valo
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিধিমালার অপেক্ষায় পেছাতে পারে ইউপি ভোট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ