Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ইডকলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সরকারি কোম্পানি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (ইডকল)-এর বিরুদ্ধে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে (টিআর/কাবিখা) সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্ধের ৯০ শতাংশই দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ সোলার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সাব)। সংগঠনটির সদস্য দুলাল কুমার বিশ্বাস বলেন, ইডকল যে দুর্নীতি করছে তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আমরা এ ব্যাপারে কাগজ কলমে প্রমাণ দিতে পারব।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর/কাবিখা) সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে’ ইডকল পিও’দের কালো থাবা থেকে রক্ষার দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে সাব’র মুখপাত্র মো. আলী আশরাফুল কবির বলেন, সরকারি টাকায় ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর কাবিখা কর্মসূচির নির্দেশিকায় প্রকল্পের কাজের পরিধিতে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর/কাবিখা খাদ্য শস্য/নগদ টাকা) বাজেটের ৫০ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস স্থাপনের মাধ্যমে খরচ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে সৌর বিদ্যুৎ খাতে বিদ্যমান ও নতুন হাজার হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে তৈরি হয় লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান। বাজার, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও রাজধানী পর্যায়ের হাজার হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য সৌর বিদ্যুৎ সহজলভ্য এবং সুদমুক্ত সেবায় পরিণত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ প্রদত্ত পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নে প্লানেট অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হন। অথচ দেশের একটি স্বার্থান্বেষী চক্র প্রধানমন্ত্রীর সৌর বিদ্যুৎ বিস্তার সম্পর্কিত এই দূরদর্শী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্তকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে গত ৩রা এপ্রিলের অপর একটি স্মারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব স্বাক্ষরিত সোলার হোম সিস্টেম, সোলার মিনি/মাইক্রো/ন্যানো গ্রীড, সৌর সেচ পাম্প, বায়োগ্যাস প্লান্ট ও উন্নতচুলা স্থাপন করাসহ এর বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) নবায়ণযোগ্য কর্মসূচির অধীনে কর্মরত ৫৭টি সহযোগী সংস্থার মধ্য হতে সক্ষমতা যাচাই-বাঁচাই সাপেক্ষে বাংলাদেশের প্রতি উপজেলাতে একটি করে পিও অথবা একাধিক উপজেলাতে একটি পিও’র মাধ্যমে কাজ করার কথা বলেছেন। পিও’দের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার জন্যও নির্বাচন করা হয়। সোলার অ্যাসোসিয়েশনের সারাদেশে প্রায় ৬শ’ সদস্য রয়েছে এবং এর উপরে তিন লাখ মানুষ নির্ভরশীল বলে দাবি জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি আব্দুল হালিম মৃধা বলেন, এই নীতির ফলে সৌর বিদ্যুৎ খাতকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী প্রায় হাজার হাজার উদ্যোক্তা কাজ হারিয়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতিতে পড়েছে এবং কর্ম হারিয়ে তারা অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সোলার প্যানেল সুবিধাভোগী গ্রাহক সংখ্যা উল্লেখ করে তারা বলেন, ২০০৩ সালে ছিল ১১ হাজার ৬৫৭, ২০০৪ সালে ৩ লাখ ২৪ হাজার ২০১১ সালে ৪ লাখ ৬৯ হাজার এবং ২০১৩ সালে তা দাঁড়ায় ৮ লাখ ৫২ হাজারে। কিন্তু ২০১৪ সালে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে ১ লাখ ৭২ হাজার দাড়ায়। এতে বুঝা যায় দাম বৃদ্ধির ফলে কাস্টমাররা সোলার কিনছেন না। সোলার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, টেকসই ও নবায়ণযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড (ইডকল) পারসপেকটিভ প্ল্যান (২০১০-২০২১) অনুযায়ী দেখা গেছে, গত ২০১৫ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫ শতাংশও (৮০০ মেগাওয়াট) বাস্তবায়িত হয়নি। একই সঙ্গে ২০২১ সালের মধ্যে হবে ১০শতাংশ (২০০০ মেগাওয়াট) এবং ২০৩০ সালের মধ্যে হবে ১০ শতাংশ (৪০০০ মেগাওয়াট)। আগামী দিনে এভাবে এই শিল্পকে কিছু সীমাবদ্ধ কোম্পানি কিংবা সংস্থার হাতে জিম্মি রাখলে কখনোই সরকারের লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। এদিকে গ্রামীণ শক্তির ন্যায় ইডকলের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত’ সহযোগী সংস্থা বিনা টেন্ডারে, কোনো ধরনের যাচাই-বাচাই ছাড়াই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে সরকারের এই বিপুল পরিমাণ কাজের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ বাজেটের অর্থ আত্মসাৎ করার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলা হয়। সাব’র মুখপত্র মো. আলী আশরাফুল কবির বলেন, ইডকলের সহযোগী পার্টনার বা পিও আছেন ৫৭ জন। তাদের প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। সোলার সামগ্রির দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে বাজার বিক্রি করা হচ্ছে। ৫ বছর পর পর ইডকলের পিও হিসেবে আবেদনের সুযোগ থাকলেও ব্যবসায়ীদের না দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এনজিওদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলেন সোলার ব্যবসায়ীরা ৪টি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- সৌর বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটি আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন, ইডকল কোম্পানির সহযোগী সংস্থার পাশাপাশি গুণগত মান যাচাই বাছাই সাপেক্ষে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর/কাবিখা খাদ্য শস্য/নগদ টাকা) বরাদ্দের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে অনান্য সংস্থা ও কোম্পানিকে সুযোগ প্রদান, ইডকলের পিও নির্ধারণ প্রক্রিয়াতে প্রকৃত অভিজ্ঞ এবং মানসম্মত প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা, ইডকলের পাশাপাশি এই খাতে সরকারের অন্যান্য গুরত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন- বিসিএসআইআর ও এসআরইডিএ ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সম্বলিত একটি শক্তিশালী রেগুলেটরি সংস্থা গড়ে তুলতে হবে। এসব দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে আবেদন করেছেন উল্লেখ করে তারা বলেন, দাবি বাস্তবায়ন না হলে মানববন্ধনসহ প্রয়োজনে আন্দোলনে যাওয়া হবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাব’র সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিয়াজি, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বলরাম বাহাদুর প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ইডকলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ