পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। অক্টোবরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের অক্টোবরে দেশে ১৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। সে হিসেবে চলতি বছরের অক্টোবরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) রেমিট্যান্সে উচ্চপ্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকল।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেকর্ড ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসীরা। এরপর আগস্টেও ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীরা ৮৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬১৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ হিসেবে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।
রেমিট্যান্সে উল্লম্ফনের পাশাপাশি দেশের রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়ানোকে অর্থনীতির জন্য বড় আশীর্বাদ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, জুন থেকে দেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে। প্রবাসীরা দেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। দেশের রফতানি খাতও করোনা সৃষ্ট বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের শীর্ষ দুটি খাতের প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ। পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ দাতা সংস্থাগুলোর ঋণ সহায়তা বাড়ছে। গত কয়েক মাসে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নতুন করে ৮ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়েছে।
অক্টোবর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪১ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলতি বছরের প্রথম থেকেই দেশের আমদানি খাত বড় ধরনের ধাক্কা খায়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের আমদানি ব্যয় কমেছে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আমদানি ব্যয় ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমেছে। আমদানি খাতের বড় বিপর্যয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে। গত জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার।
রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যারা কষ্ট করে অর্থ প্রেরণ করে আমাদের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, আমি পুরো দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ জানাই।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসযখন অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য গতিতে রেমিট্যান্স অর্জিত হচ্ছিল তখন অনেকেই বলতে শুরু করলেন, এগুলো ঠিক নয়, থাকবে না, টেকসই নয়। কর্মীরা তাদের কাজকর্ম বা ব্যবসা গুটিয়ে দেশে ফিরে আসছেনসহ বিভিন্ন মন্তব্য। সেসব লোকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও তাল মিলিয়ে বলতে শুরু করল, এ প্রবাহ ঠিক নয়, টেকসই হবে না। খুবই আশ্চর্যের বিষয়, যে দেশের মানুষ তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশের মানুষের জন্য, তাদের পরিবারের জন্য প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে, সেসব মানুষের মূল্যায়ন না করে তাদের উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলে অনুপ্রাণিত করার পরিবর্তে আমরা নিরুৎসাহিত করতে শুরু করলাম কীভাবে! শেষ পর্যন্ত আমি বিশ্বব্যাংকে আমাদের এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টের স্বীকৃতি দিতে তাদের বার্ষিক সভায় অনুরোধ জানালাম। বিশ্বব্যাংক এখন নিজেই বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে এবং এ বছর রেমিট্যান্সপ্রবাহে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে থাকবে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চলতি বছর বাংলাদেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরো ৮ শতাংশ বাড়বে বলে উল্রেখ করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।
গত ৩ জুন দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরো বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে। তিন সপ্তাহ পর গত ১৭ আগস্ট রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। পরে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। গত ৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকও ছাড়িয়ে যায়। উন্নতির এ ধারাবাহিকতায় অক্টোবর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারীতে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এক কোটির বেশি বাংলাদেশী। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের বড় অংশই কর্মস্থলে ফিরে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশের প্রধান শ্রমবাজার সউদী আরবের নতুন ভিসা বন্ধ। ছুটিতে দেশে ফেরা ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশী এখনো সউদী আরবে ফিরতে পারেনি। অন্যতম শ্রমবাজার কুয়েতে ফিরতে পারছেন না ছুটিতে দেশে আসা বাংলাদেশীরা। নতুন করে ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোয় লকডাউন শুর হয়েছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা শামাল দেয়ার জন্য পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতেও লকডাউন ফিরে আসছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।