পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ড. মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাকে বলা হয় আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার। পূর্ব এশিয়ায় অন্যতম শিল্প-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার আজকের অবস্থানের পেছনে অনেকখানি কৃতিত্ব দেয়া হয় তাকে।
এছাড়া রাজধানী কুয়ালালামপুরকে আধুনিক শহরে পরিণত করাটাও তার অবদান। ‘মালয়েশিয়া পারে’ সেøাগানটি ১৯৯৩ সালে প্রবর্তন করেছিলেন তিনি। ২০২০ সালের মধ্যে তিনি মালয়েশিয়াকে উন্নত দেশে পরিণত করতে ভিশন-২০২০ প্রণয়ন করেছিলেন।
বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প ও উচ্চপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে মালয়েশিয়ায় ব্যাপক অর্থ ব্যয় করেছিলেন মাহাথির। কিন্তু সে সময় অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছিল তার দেশ। নিজেকে ‘সাইবারে আসক্ত’ বলেও একবার দাবি করেছিলেন তিনি।
বিশ্বের গুটিকয়েক বিশ্বনেতা, যারা নিজের ওয়েবসাইট ও বøগ পরিচালনা করেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন। ডাক্তার থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ করা মাহাথির ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের নেতৃত্বাধীন জোট এখনও মালয়েশিয়ার ক্ষমতায়।
দৈনিক মানবজমিন, প্রথম আলো ও কুয়েত টাইমসের হয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও প্রধান ড. সিরাজুল আই. ভূঁইয়া। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের মানুষ একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সৎ ও কার্যকর নেতার কথা চিন্তা করলেই আপনার কথা বলে, আপনার নেতৃত্বগুণের কথা বলে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। দেশের উন্নয়নেও এটি প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? এ রাজনৈতিক সমস্যা থেকে দেশটির উত্তরণের উপায় কী?
উত্তর : আমি সাধারণত আমাদের প্রতিবেশি দেশ বা বাংলাদেশের মতো বন্ধুভাবাপন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করি না। কিন্তু আমি দেখছি, বাংলাদেশে রাজনীতি বেশি, উন্নয়নমূলক কর্মকাÐের দিকে মনোযোগ কম। একই সময়ে, অবশ্যই, আপনি যদি রাজনীতি এবং দেশ কারা শাসন করছে, তা নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে অর্থনীতি ভুগবে। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবেই।
কিন্তু সেসব সরিয়ে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিৎ দেশের উন্নয়ন ও বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একযোগে কাজ করা। আমি মনে করি, আপনি যদি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেন, তবে বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। দেশের আপামর জনতার জীবনমানে অগ্রগতি হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যেমন, গার্মেন্ট শিল্প। ওষুধ শিল্প ও অন্যান্য খাতেও দেশটি ভালো করছে। বাংলাদেশের মানুষ খুব উদ্যোগীও। তাদের দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভালো নীতিমালা। কিন্তু তারা তা পাচ্ছে না। এ অবস্থা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উত্তর : বাংলাদেশে উন্নয়নের চেয়ে রাজনীতি বেশি। আপনি যদি দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন, দৃষ্টি দেন ও অর্থনৈতিক নীতির কথা বলেন, তবে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রæত বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির একটি।
প্রশ্ন : মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই আমি। আপনার কাছে মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী কী মনে হয়?
উত্তর : আপনি যদি মধ্যপ্রাচ্যের সা¤প্রতিক ইতিহাস দেখেন, তবে দেখবেন, যা আজ ঘটছে, তা হলো ৬০ বছর আগে ফিলিস্তিনি ভূমি বেদখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের ফল। ফিলিস্তিনিরা প্রচলিত কায়দায় লড়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইসরাইলিদের কাছে হেরেছে।
কিন্তু এখন তাদের অন্য উপায়ে লড়তে হবে, যাকে ইসরাইল সন্ত্রাসবাদ বলছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করাটাও ইসরাইলি সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পড়ে। ইসরাইলিদের সঙ্গে অব্যাহত লড়াইয়ের মাধ্যমে কিছুই অর্জন হয়নি ফিলিস্তিনিদের। তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হচ্ছে। তারা এখন ক্ষুদ্ধ। এসবই পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের মধ্যে বিভক্তি এনেছে।
অনেকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গণতান্ত্রিক হলেই, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু গণতন্ত্রের কার্যাবলী তারা বুঝতে পারে না। গণতন্ত্র এলে সরকার গঠিত হবে, নির্বাচন হবে, কিছু মানুষ সরকার বানাবে, কেউ বিরোধী দলে থাকবে। কিন্তু বিরোধীরা পরাজিত হতে চাইবে না, সবাই জিততে চাইবে। এসবের কারণে গণতন্ত্র এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন আনেনি।
প্রশ্ন : আইএস’র দ্বারা সৃষ্ট সঙ্কটের দিকে পশ্চিমা নীতির ভূমিকা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর : পশ্চিমারা চায় ক্ষমতার পরিবর্তন। তারা চায় মুসলিম দেশগুলোর সরকার চালাবে তাদের বেছে নেয়া মানুষরা। ক্ষমতা পরিবর্তন করতে গিয়ে, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। আমি সাধারণ অর্থে মনে করি, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার পেছনে পশ্চিমাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না।
তারা নিজেরাই মাঝে মাঝে অস্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে, কিছু সময় নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তারা সমর্থন দিয়েছে, সরকারের ভূমিকাকে খর্ব করেছে, প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালিয়েছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে অস্থিতিশীলতা আপনি দেখছেন, এর পেছনে পশ্চিমারা অনেক বেশি জড়িত।
প্রশ্ন : সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে শীতল-যুদ্ধের মতো চলমান উত্তেজনার এবং সউদী আরবের নেতৃত্বে ৩৪ দেশের সন্ত্রাসবাদবিরোধী জোটের বিষয়ে আপনার মতামত কী?
উত্তর : আমরা মনে করি না, দ্ব›দ্ব কোন সমস্যার সমাধান করবে। যুদ্ধ কোন সমস্যার সমাধান নয়। মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার প্রথম দিকে, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বা বিরোধের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। হ্যাঁ, তারা প্রথমে শক্তি খাটিয়েছে। কিন্তু দিনশেষে কূটনৈতিক সমাধান ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যাটির আমরা সমাধান করেছি।
কোন দেশকে আমাদের শত্রæ ভাবা উচিৎ নয়। যদি ভাবি, তারাও আমাদের শত্রæ ভাববে। তারপর আপনাদের মুখোমুখি হতে হবে। এটি অত্যন্ত নেতিবাচক। দেশে দেশে মতপার্থক্য থাকবেই, তবে কূটনৈতিক উপায় ও সংলাপের মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসন বা হ্রাস করা সম্ভব।
প্রশ্ন : আইএস’র কারণে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বাধার বিষয়ে চিন্তিত অনেক পশ্চিমা নেতা। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর : পশ্চিমারা অবশ্যই আইএস’র বিরুদ্ধে। কিন্তু আইএস তাদেরই সৃষ্টি। অনেকেই প্রেসিডেন্ট আসাদকে (সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট) উৎখাত করতে চায়। পশ্চিমারা ওই মানুষগুলোকে অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এরাই পরে আইএস হয়েছে। তাদের এখন নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে।
তারা আসাদের বিরুদ্ধেও লড়ছে, আবার পশ্চিমাদেরও ওই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। তাদের আবার অনেকে সমর্থনও দিচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, মুসলিমরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়ছে। এক হিসাবে, পশ্চিমা বা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কেউ লড়ছে না। লড়ছে একে অপরের বিরুদ্ধে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম। অনেকে আইএস’কে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে যুদ্ধটা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।
মালয়েশিয়ায় আগে এ নিয়ে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন অনেকে আইএস’এ যোগ দিতে দেশ ছাড়ছে। মূলত, এটা পুরো বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। সবাই এখন আক্রান্ত, কারণ কেউই নিরাপদ বোধ করছে না। আমি মনে করি, এ সব কিছুই ঘটছে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কারণে। সূত্র: মানবজমিন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।