পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ। আজ ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। পবিত্র মক্কার মরুপ্রান্তরে ১২ রবিউল আউয়াল মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
আরব সমাজ যখন পৌত্তলিকতার অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে সারা বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ। সারা বিশ্বের মুসলমানরা আজকের এই দিনকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করেন। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে এসেছিলেন তওহিদের মহান বাণী নিয়ে। প্রচার করেছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। তার আবির্ভাব এবং ইসলামের শান্তির বাণীর প্রচার সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন মহানবী (সা.)।
বিশ্ববাসীকে তিনি মুক্তি ও শান্তির পথে আসার আহŸান জানান। সব ধরনের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা বহন করে এনেছিলেন তিনি। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) দীর্ঘ ২৩ বছর এই বার্তা প্রচার করেন। ৬৩ বছর বয়সে তিনি মদিনা মোনওয়ারায় ইন্তেকাল করেন। আজ শুক্রবার দেশের বিভিন্ন মসজিদে মহানবী (সা.)এর জীবন ও কর্ম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং মিলাদ মাহফিল ও জশনে জুলছ অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, ইফার বোর্ড সদস্য আল্লামা শায়খ খন্দকার গোলাম মাওলা নকশবন্দিসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ মহানবী (সা.) এর কর্মময় জীবনীও ওপর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন প্রখ্যাত ক্বারী আহমদ বিন ইউসুল আল আজহারী।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী : প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষা সমগ্র মানব জাতির জন্য অনুসরণীয়। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট বিশ্ববাসীসহ মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান। তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বিশ্ববাসী বিশেষত মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত দিন। মহান আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ‘রহমাতুল্লিল আলামীন’ তথা সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান ‘মদীনা সনদ’ ছিল মহানবী (সা.) এর বিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার প্রকৃষ্ট দলিল। এ দলিলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সার্বজনীন ঘোষণা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বলেন, মহান আল্লাহ আমাদেরকে মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ যথাযথভাবে অনুসরণের মাধ্যমে দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দিন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) পবিত্র দিনে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ্ তথা বিশ্ববাসীর শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয়নবী (সা.) কে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন, ‘রাহমাতুল্লিল আ’লামিন’ তথা সারা জাহানের জন্য রহমত হিসেবে। পাপাচার, অত্যাচার, মিথ্যা, কুসংস্কার ও সংঘাতে জর্জরিত পৃথিবীতে তিনি মানবতার মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভ‚ত হয়েছিলেন। অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়ে সত্যের আলো জ্বালিয়েছেন। তিনি বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন এবং মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিলেন।
এদিকে, সিলেট নগরীতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে মুবারক র্যালি’ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে র্যালিতে অংশ নেয়। র্যালিতে প্রিয়নবীর শানে রচিত কালজয়ী নানা কবিতার শ্লোক অঙ্কিত রঙবেরঙের ফেস্টুন ও প্লেকার্ড হাতে নিয়ে আশিকে রাসূল ছাত্র-জনতা নগরীর গুরুত্বপূণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
র্যালিতে নেতৃত্ব দেন শামসুল উলামা হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব (রহ)’র ছাহেবজাদা বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র মুহতারাম সভাপতি আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।
কর্মসূচি:
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে ১৫ দিনব্যাপী আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। প্রতিদিন বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব পাশে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখ মাহফিলে বয়ান করবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ৩০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী মহানবী (সা.) এর জীবন ও কর্মের ওপর সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া ইসলামি ক্যালিগ্রাফি ও মহানবী (সা.) এর জীবনভিত্তিক গ্রন্থ প্রদর্শনী, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলা, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত ও হামদ-নাত মাহফিল, রাসুল (সা.)-এর শানে স্বরচিত কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রকাশ করা হবে বিশেষ স্মরণিকা।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বদরপুর দরবার শরীফের উদ্যোগে ঢাকার সদরঘাট খানকায়ে উসমানিয়া রব্বানীয়া সুন্নীয়ায় ১২ দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ সকাল ৭টায় সদরঘাট মোড় থেকে নগরীতে জশনে জুলছ (আনন্দ র্যালি) বের করা হবে। জশনে জুলছে নেতৃত্ব দিবেন বদরপুর পীর সাহেব মুফতি শাহ সাইয়্যেদ মুতাসিম বিল্লাহ রব্বানী।
আজ বাদ আসর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে আওয়ামী লীগ। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আজ শুক্রবার জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।