পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রাতে ট্রেন ভ্রমণে নিরাপত্তা নিয়ে অনেক যাত্রীই শঙ্কিত। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে রাতের ট্রেনে যাত্রীরা ছিনতাইকারীচক্রের হামলার শিকার হন এমন ভীতি আছে অনেক যাত্রীর মধ্যে। যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীচক্র ট্রেনের দুই কোচের সংযোগস্থলে কাউকে একা পেলে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর তার পকেটে থাকা টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিহত ব্যক্তিকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তাতে বেশিরভাগ লাশই কাটা পড়ে। এসব ঘটনাকে দুর্ঘটনা, অজ্ঞাতপরিচয় আত্মহত্যা হিসাবে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। এরপর মর্গ হয়ে লাশগুলো মাটিচাপা দেয়া হয়। নিহত ব্যক্তির জামা-কাপড় রেলওয়ের ডোমঘরের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয় লাশ শনাক্ত করার জন্য। অনেকের মতে, গত কয়েক বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের রেল লাইনে প্রায় দেড়শ লাশ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া গেছে আখাউড়া, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, কসবা, বি-বাড়িয়া হয়ে নরসিংদী পর্যন্ত। আত্মহত্যা, দুর্ঘটনাজনিত অজ্ঞাত এসব লাশের নেপথ্যে নৃশংস খুনের ঘটনা রয়েছে বলে সোস্যাল মিডিয়ায় বহুদিন ধরে আলোচনা চলছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব মিথ্যা কথা। মিথ্যা তথ্য দিয়ে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। রেলওয়ে পূর্ব বিভাগ (চট্টগ্রাম) নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চীফ কমান্ডেন্ট মোঃ আমিনুর রশীদ গতরাতে ইনকিলাবকে বলেন, এসবই ভুয়া কথা। ফেসবুকের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার অপচেষ্টা মাত্র। তিনি বলেন, ৩/৪ বছর আগে ট্রেনের ছাদ থেকে একজন যাত্রীকে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল।ওই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিল। সেই পুরনো ইতিহাসকেই এখন নতুন করে রঙ-চং লাগিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। চীফ কমান্ডেন্ট বলেন, এখন এসব কথা বলা একেবারে ঠিক না।
রাতের ট্রেনে যারা চলাচল করেন তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ট্রেনে যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম আগেও ছিল, এখনও আছে। রাতে ট্রেন চলাচলের সময় বেশিরভাগ যাত্রী ঘুমিয়ে থাকে। অন্ধকারে ‘শো শো’ বেগে চলতে থাকে ট্রেন। তখন কোনো যাত্রী ছিনতাইকারীর কবলে পড়লে তার খবর কারো জানার কথা নয়। বিশ্বজিৎ নামে একজন যাত্রী বলেন, বছর দেড়ের আগে আমি ঢাকা থেকে খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসে যাচ্ছিলাম। মহেড়া ও টাঙ্গাইলের মাঝপথে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে দু’জন যাত্রীকে ফেলে দেয় ছিনতাইকারীরা। পরে শুনেছি দু’জনই ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। অনেকের মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে রাতের ট্রেনে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম বেশি। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীচক্র উঠে রাতভর ট্রেনের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত বিচরণ করে। ট্রেনে ডিউটিরত পুলিশের সাথে এদের আগে থেকেই বন্দোবস্ত করা থাকে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইকারীচক্র রাতের ট্রেনে একা থাকা যাত্রীদেরকে খোঁজে। বিশেষ করে যারা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে বা বাথরুমের আশপাশে ধূমপান করার জন্য দাঁড়ায় তাদেরকে ছিনতাইকারীরা টার্গেট করে। ছিনতাইকারীচক্রের দু’জন ওই সব যাত্রীদেরকে পেছন থেকে আক্রমণ করে। আক্রমণের নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে একটা গামছাকে পেঁচিয়ে চিকন করা হয়। তারপর দুই মাথা দুইজন ধরে যাকে আক্রমণ করা হবে, তার গলায় পেছন থেকে এক প্যাঁচ দিয়ে দু’পাশ থেকে হেঁচকা টান মারে। এতে করে ১৫ সেকেন্ডের ভেতরই ওই যাত্রী মারা যাবে। না মরলেও তিনি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। তার পকেটে যাকিছু পাওয়া যায় সব লুট করে নেয় ছিনতাইকারীরা। এরপর নিহত বা জ্ঞান হারানো ব্যক্তিকে পাশের দরজা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, রাতের ট্রেনে বেশিরভাগ যাত্রীই ঘুমিয়ে থাকে। চলন্ত ট্রেনের আওয়াজে কেউ কিছু টের পায় না। পুরো কাজটা করতে ছিনতাইকারীচক্রের সময় লাগে সর্বোচ্চ দেড় মিনিট। পরদিন সকালে এই লাশগুলো হয়ে যায় আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনাবশত: বেওয়ারিশ লাশ। রেলওয়ে পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এরপর অজ্ঞাত হিসাবে লাশগুলো মাটিচাপা দেয়া হয়। ইউডি মামলা রেকর্ড করে রেলওয়ে পুলিশ। লাশ শনাক্ত করার জন্য নিহতের পরনের জামা-কাপড় কিছুদিনের জন্য রেলওয়ের ডোম ঘরের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সেগুলোর প্রকৃত রঙ ও আদল থাকে না। দুই বছরের মধ্যে নিহতের কোনো স্বজন এলে তাদেরকে সেই জামা-কাপড় দেখানো হয়। কোনো স্বজন কাপড়-চোপড় দেখে শনাক্ত করতে পারলে তাদেরকে চাপা দেয়া স্থান দেখিয়ে দেয়া হয়। রেল কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলেও আখাউড়া, কসবা, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া ও নরসিংদী থানায় এ ধরণের ইউডি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ওই সব এলাকার থানাগুলোতে শতাধিক মামলা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।