পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : এসপি বাবুল আকতারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন আবারও তার মেয়ে হত্যায় জড়িত খুনিদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সবাই বাবুল আকতারের চাকরি ও পদত্যাগ নিয়ে মাতামাতি করেন। কিন্তু মিতু হত্যা নিয়ে এখন কেউ তেমন কিছু বলছেন না।
তিনি বলেন, আমি আমার মেয়ের খুনিদের বিচার চাই। আলাপকালে এসপি বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, তিনি এসপি বাবুলের জীবন নিয়েও শঙ্কিত। পুলিশের চাকরি না থাকলে যে কোনো সময় সন্ত্রাসীদের হাতে তার মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। কারাগারে গেলেও সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলবে বলে মনে করেন বাবুলের শ্বশুর। বাবুল আকতারের পদত্যাগ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি গতকাল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বাবুল আকতারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, মিতু হত্যার ঘটনা বাদ দিয়ে অন্য বিষয় নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে। এতে মূল বিষয়টি মাইনাস হয়ে যাচ্ছে। আসল সাবজেক্ট নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নাই। এখন বাবুল আকতারের পদত্যাগ নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে। প্রশ্ন আসছে। অথচ মিতুর খুনের ব্যাপারে সাংবাদিকরাও কারো কাছে কিছু জানতে চান না। আমার মেয়ের খুনের ব্যাপারে আপনারা সহায়তা করতে পারেন। খুনিরা যাতে বাঁচতে না পারে। তিনি বলেন, আমাদের মূল প্রশ্ন হলো আমাদেও মেয়েকে নিয়ে। মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার আশা করি। মেয়েকে প্রকাশ্য দিবালোকে শিশু সন্তানের সামনে যারা খুন করছে তাদের বিচার চাই।
গত রবিবার রাতে দেশের বেসরকারি চ্যানেল ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, বাবুল আকতারের পদত্যাগপত্র পেয়েছেন তিনি। বাবুল আকতার নিজেই পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ শিগগির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পদত্যাগপত্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে এসপি বাবুল আকতারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তার শ্বশুরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবুল আকতারের পদত্যাগ নিয়ে এতদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি। কে কি করছে তারাই জানে ভালো। প্রত্যক্ষদর্শীতো আপনি-আমি না। যে সই করেছে, বা যে সই নিয়েছে বা দিয়েছে, যাই করেছে তারাই ভালো জানেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এটা আসলেতো আমরা বলতে পারব না। এর জবাব এ মুহূর্তে ঠিক দিতে পারব না। যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কিছু বলে থাকেন তাহলে ভালোই হয়েছে। এতদিন এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছুই বলা হয়নি। এখন বলছেন। যা ভাগ্যে আছে তাই হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, তারা বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি এতদিন কেউ স্বীকার করেনি। এখন যখন স্বীকার করছেন এটা একদিকে পজিটিভ। চাকরির মূল মালিকতো সরকার। সরকারের প্রতিনিধি হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। আপনি, আমিতো কিছু না। আপনি উল্টাপাল্টা রিপোর্ট করবেন, মাইনাস হয়ে যাবেন। আমি উল্টাপাল্টা কথা বললে মাইনাস হয়ে যাব। এখন তারা যেটা বলছে সেটার ওপরই ভরসা করে থাকি। দেখি কি করে। যেহেতু আমি বললেতো লাভ হবে না কিছু। আগেতো বলেছি, লাভতো কিছু হয়নি। এখন যেহেতু সরকারের প্রতিনিধি বা সরকারের মন্ত্রী বলেছেন, দেখা যাক ফলাফল কী আসে।
প্রসঙ্গত গত এপ্রিলে এসপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তাকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু শিশু সন্তানের সামনে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। স্ত্রী খুন হওয়ার দিন বাবুল ঢাকাতেই ছিলেন। পরে দুই শিশু সন্তান নিয়ে রাজধানীর বনশ্রীর ভূঁইয়া পাড়ার শ্বশুরের বাসাতেই অদ্যাবধি অবস্থান করছেন।
স্ত্রী হত্যাকা-ের ১৫ দিনের মাথায় গত ২৪ জুন মধ্যরাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুলকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। যদিও পরদিন ২৫ জুন প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর আবার তাকে বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। ওই সময় তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেয়া হয় বলেও সূত্র জানায়। কেউ বলেন, বাবুল নিজেই চাকরি ছাড়ার শর্তে স্ত্রী হত্যার দায় থেকে বাঁচতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। এরপর গত ৩ ও ৪ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে তিনি একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেন। অবশ্য সেই ব্যাখ্যায় পদত্যাগ করেছেন বলে কোনো কথা উল্লেখ নেই।
স্ত্রী হত্যাকা-ের পর গত ১৩ আগস্ট প্রথম মুখ খোলেন বাবুল আকতার। তার ফেসবুকে মর্মস্পর্শী এক স্ট্যাটাসে তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই লিখেছেন, ‘যখন মা হারানো মেয়েটার অযথা গড়াগড়ি দিয়ে কান্নার শব্দ কেবল আমিই শুনি, তখন অনেকেই নতুন নতুন গল্প বানাতে ব্যস্ত। আমি তো বর্ম পরে নেই, কিন্তু কোলে আছে মা-হারা দুই শিশু। আঘাত সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না।’ স্ট্যাটাসের সব শেষে তিনি লিখেছেন, ‘এরপর আর কোনো ভোর আমার জীবনে সকাল নিয়ে আসেনি। সন্তান দুটো এবং আমি আর স্নেহের ছায়ায় ঘুমাইনি। এরপরই আমি বুঝেছি সংসার কী।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, মিতু হত্যার কারণে যদি বাবুল আকতারকে চাকরি ছাড়ানো হয়, তাহলে সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলবে। জেলখানায় গিয়েও সে বাঁচতে পারবে না। সেখানেও সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলবে। তার মৃত্যু অবধারিত। এখন কোনভাবে তার মৃত্যু হবে, সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। আপাতত তার বাঁচার উপায় হচ্ছে তার চাকরিটা থাকা। এতে কিছুদিন যদি সে বেঁচে থাকতে পারে। আর সে নিজেও যদি চাকরি ছাড়ে তাহলেও তার জীবন বাঁচবে না।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ঘওে যে তার দুই শিশু সন্তান আছে, তারা যখন বুঝতে শিখবে, ম্যাচিওরিটি আসবে, তাদের বয়স যখন ১৫-২০ বছর হবে, তখন তারা জানতে চাইবে তাদের মায়ের হত্যার বিষয়টি। তারাতো এখনই নানা প্রশ্ন করে। জানতে চায় অনেক কিছু। তখন তারা তাদের পিতার কাছে জানতে চাইবে, মায়ের হত্যার পর চাকরি ছাড়লা কেন বা চাকরি গেল কেন? তখন কী তারা জানবে না যে, তাদের মাকে খুন করার কারণে সরকার তার চাকরি খেয়েছে বা গেছে। তখনতো এ পোলাপানই তাকে খুন করবে। তার কিন্তু বাঁচার কোনো উপায় নেই। একদিকে সব হারাবে, অন্যদিকে সন্তানদের কাছেও প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, আমিতো বলছি, প্রথমে সন্ত্রাসীরাই তাকে মারবে। আর যদি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাইও পায় তাহলে সন্তানরাই এক সময় তাকে মারবে। সন্তানের কাছ থেকেও সে রেহাই পাবে না। এখন এ বিষয়গুলো সরকারের কাছে উত্থাপন করা হলো। সরকার যা ভালো মনে করে করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।